শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতার নাম 'একে-৪৭!'

শামীম আহমেদ
  ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
একে-৪৭-এর আবিস্কারক মিখাইল কালাশনিকভ

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লোকটা কী যেন আঁকছেন। জার্মান নাৎসিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি আহত হন। হাসপাতালের লোকজন তাকে ঘাঁটানোর সাহস পায়নি। তিনি এক মনে আঁকেন। তরুণ বয়সে তার কবি হওয়ার শখ ছিল এ কথা অনেকেই জানতেন। কাছের মানুষরা তাই ভাবে, হয়তো কবিতা-টবিতা লিখছেন। হঁ্যা, কবিতাই তো। কবিতার নাম 'একে-৪৭!'

বলছিলাম মিখাইল কালাশনিকভ। একজন রাশিয়ান যোদ্ধা, একজন 'ট্যাংক গানার'। কিশোর বয়সে কবি হতে চেয়েছিলেন; এমনকি তার ৬টি কবিতার বইও বের হয়েছিল। কিন্তু তিনি কবি হিসেবে সমাদৃত নন বরং তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে পরিচিত একে-৪৭ আবিষ্কারের মাধ্যমে।

কৃষক পরিবারের সন্তান মিখাইল বাল্যকাল থেকে কবিতার প্রতি তার আগ্রহ জন্মে কিন্তু দরিদ্রতার কারণে সপ্তম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী রেড আর্মিতে যোগ দিতে বাধ্য হন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে একজন ট্যাংকার মেকানিক হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৪১ সালে ব্রায়ানস্কের যুদ্ধে জার্মান বাহিনীর গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে কাটান।

এ সময় তিনি অনুধাবন করেন জার্মানদের আধুনিক অস্ত্রের কারণে সোভিয়েত বাহিনী যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এ চিন্তা থেকেই তিনি নতুন অস্ত্রের চাহিদা অনুভব করেন। ১৯৪৪ সালে একটি অস্ত্রের নকশা তৈরি করতে সক্ষম হোন, কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ নকশা যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত মনে হয়নি। প্রথমবার ব্যর্থ হয়েও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বেযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর জয়ে তার অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা ভাটা পড়তে থাকে, পরে রেড আর্মির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উৎসাহে ফের মনোযোগী হন অস্ত্র তৈরিতে। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালে এসে তিনি একে-৪৭ আবিষ্কার করেন।

কালাশনিকভ বলতেন, 'বিশ্বযুদ্ধ না হলে হয়তো বা আমি কোনো কৃষিযন্ত্র আবিষ্কার করতাম কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে আমাকে অস্ত্র

তৈরি করতে হয়েছে।

আমার অস্ত্র তৈরির মূল লক্ষ্য হলো দেশমাতার নিরাপত্তা রক্ষা করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। কিন্তু অস্ত্রের যে অপব্যবহার চলছে, এর পেছনে আমি নই, নষ্ট রাজনীতিবিদরা দায়ী।'

১৯১৯ সালে জন্ম নেওয়া মিখাইল কালাশনিকভ ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিদায় নিয়েছেন। জীবনের শেষ সময়টা খুব ভালো কাটেনি তার। মন খারাপ করে বলতেন, 'আমার আবিষ্কার নিয়ে

\হআমি গর্বিত। কিন্তু খারাপ লাগে, যখন দেখি সন্ত্রাসীরা আমার

তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে