জীবন চক্রের যে পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা যৌন ক্ষমতা অর্জন করে সেই পর্যায়কে বা কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। বলা হয়ে থাকে বয়ঃসন্ধিকাল শৈশবের শেষ এবং যৌবনের শুরুর নির্দেশক। বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটি সময় যে সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে থাকে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় এ পরিবর্তন ঘটতে পারে। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় পরিবর্তন ঘটে থাকে।
এ সময় মেয়েদের উচ্চতা বাড়ে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ স্ফীত হয়, নিতম্ব প্রশস্ত ও গোলাকৃতি হয়। স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি পেতে শুরু হয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে লোম গজায়। ত্বক পুরু হয় ও উপরিভাগের ছিদ্র বড় হয়। কাঁধ ও হাত-পায়ের গড়ন মজবুত হয়। ঋতুস্রাব শুরু হয়। এ সময় মেয়েদের স্বরের পূর্ণতা প্রকাশ পায়; কণ্ঠস্বর শ্রম্নতি মধুর হয়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে দেহের উচ্চতা দ্রম্নত বৃদ্ধি পেতে থাকে। গলার স্বর ভারী হয়, অনেক সময় কর্কশ হয়ে থাকে। কাঁধ চওড়া হয়; পেশি সুগঠিত হয়। মুখে দাড়ি গোঁফ উঠে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোম গজায়। ত্বক পুরু হয়, ত্বকের রং পরিবর্তিত হয় এবং ছেলেরা একটু বেশি ঘামে।
এসব পরিবর্তনের ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যৌন পরিপক্বতা আসে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে মানসিক পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তারা একটুতেই রেগে যায়। আনন্দ ও দুঃখের অনুভূতিগুলোও বেশি দেখা যায়। মোট কথা তাদের মধ্যে আবেগের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। যদিও এ সময় তারা স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পছন্দ করে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা, চুলের স্টাইল, বন্ধু নির্বাচন সবকিছুতে নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে পছন্দ করে। এ সময় মাতাপিতাকে তারা পাত্তাই দিতে চায় না।
এসব কারণে অনেক সময় তারা বিপদগামী হয়, মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে, এমনকি বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির শিকার হতে থাকে এবং অপসংস্কৃতিতেও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। যদিও বয়ঃসন্ধিকালের এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়টাতে সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করা খুব সহজ কাজ নয়। তারা মাতাপিতার কথা মানতে চায় না। এমনকি কোনো কাজে বাধা দিলে আত্মহননের পথও বেছে নেয়। ফলে এই সময়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। তাদের বোঝাতে হবে। তাদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো যাবে না। গায়ে হাত তোলাও যাবে না। কারো সঙ্গে তুলনা করে তাদের ইগোতে আঘাত করা যাবে না। তারা কোনোভাবে ছোটো হতে চায় না। তারা যেন বুঝতে না পারে যে তাদের পছন্দ-অপছন্দের প্রতি মাতাপিতার বিশ্বাস নেই। তাদের আত্মসম্মানে যেন কোনোভাবেই আঘাত না লাগে, এমনভাবে বোঝাতে হবে। একটু একটু করে তাদের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, এই বয়সের ছেলেমেয়েদের শিশুদের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগও করে দিতে হবে। যেহেতু বয়ঃসন্ধিকালে যৌন পরিপক্বতা আসে এবং প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই সবার জন্য যৌন শিক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই একমাত্র জায়গা যেখানে এই সময়ে কী কী শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে, তারা কীরকম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে পারে এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করবে তা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ সময় ছেলে মেয়েরা যে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার ক্ষতিকর দিকগুলো তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে এবং তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের কু-প্রভাব সম্পর্কে তরুণ সমাজকে সচেতন করতে হবে। অপসংস্কৃতি যাতে তরুণ সমাজকে গ্রাস করতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন অনৈতিক কাজ সম্পর্কে তাদের বিমুখ করতে হবে। মোটকথা বয়ঃসন্ধিকালের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে।