শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫৪ ধারার মোকাবিলা

কোনো ব্যক্তিকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে তদন্ত বা রিমান্ডের নামে পুলিশের মারধর করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অর্থাৎ পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে কাউকে অযথা মারধর করতে পারে না। কখনো কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে যত দ্রম্নত সম্ভব নিকটস্থ থানায় তা অবহিত করতে হবে। সম্ভব হলে সরাসরি থানায় জানাতে হবে। সরাসরি জানাতে দেরি হলে কোনো ফ্যাক্স কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে তা জানানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরে থানায় এজাহার দায়ের করতে হবে
হাসনাইন আহমেদ
  ৩১ মে ২০২২, ০০:০০

পুলিশ কি কাউকে মারধর করার অধিকার রাখে? মনে রাখা দরকার, আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হলো কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর অমানসিক বা লাঞ্ছনার দন্ড দেয়া যাবে না কিংবা কারো সঙ্গে সে রকম ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো ব্যক্তিকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে তদন্ত বা রিমান্ডের নামে পুলিশের মারধর করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অর্থাৎ পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে কাউকে অযথা মারধর করতে পারে না। তবে কিছু কিছু বিষয় ব্যতিক্রম।

* কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হলে বা আসামি পলায়ন করলে, আসামিকে ধরা বা পলায়ন রোধের জন্য যতটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু বল প্রয়োগ করতে পারে।

* দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক আক্রমণের শিকার হলেও পুলিশ বল প্রয়োগ করতে পারে।

* শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ কোনো বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্যও বল প্রয়োগ

করতে পারে।

তবে স্বেচ্ছায় কোনো আত্মসমর্পণকারী বা শান্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ বল প্রয়োগ করতে পারে না।

ধারা ৫৪ : পুলিশ যখন বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারে যে কোনো পুলিশ অফিসার ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অথবা পরোয়ানা ব্যতীত কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন, তারা হলো :

প্রথমত, কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি এরূপ জড়িত যে, তার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ ও সন্দেহ রয়েছে অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত যার কাছে ঘর ভাঙার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে। এ আইনসঙ্গত কারণ প্রমাণ করার দায়িত্ব তার।

তৃতীয়ত, এ কার্যবিধি অনুসারে অথবা সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে।

চতুর্থ, পুলিশ অফিসারকে তার কাজে বাধাদানকারী ব্যক্তি অথবা যে ব্যক্তি আইনসঙ্গত হেফাজত থেকে পলায়ন করেছে।

পঞ্চমত, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি। যাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে।

ষষ্ঠত, চোরাই বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে। এরূপ মাল যার কাছে রয়েছে এবং এরূপ মাল সম্পর্কে কোনো অপরাধী কাজ করেছে বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায়।

সব সময় লক্ষণীয় আসামি গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে যুক্তিসঙ্গতভাবে যতটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই করবে। অযৌক্তিক বল প্রয়োগ বেআইনি।

গ্রেপ্তারের পর সংবিধান অনুযায়ী সবার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার অধিকার আছে। সে ক্ষেত্রে আইনজীবীর করণীয় :

* আইনসঙ্গত যে কোনো উপায়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে থানা থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া।

* থানা থেকে মুক্ত করা সম্ভব না হলে অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রম্নত এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট কোর্টে গিয়ে জামিনের জন্য আবেদন করা।

* তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে পর্যায়ক্রমে জেলা জজ কোর্ট বা হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করা।

* মনে রাখতে হবে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির জামিন পাওয়া নির্ভর করে তাকে কোন আইনে এবং কী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে এর ওপর।

* সর্বোপরি কাউকে জামিনে মুক্তি দেয়া বা না দেয়া আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা।

সপ্তমত, এমন অপরাধ যা বাংলাদেশে করা হলে শাস্তিযোগ্য হতো। বাংলাদেশের বাইরে এরূপ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ, সন্দেহ এবং বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গিয়েছে। যার জন্য সে প্রত্যার্পণ সম্পর্কিত কোনো আইন অথবা ১৮৮১ সালের পলাতক অপরাধী আইন অনুসারে অথবা অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হতে বাধ্য।

অষ্টমত, কোনো মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি মুক্তির পর বাসস্থান বা বাসস্থান পরিবর্তন বা বাসস্থান থেকে অনুপস্থিতির বিজ্ঞপ্তিকরণ সম্পর্কে সরকার কর্তৃক প্রণীত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে।

নবমত, কাউকে গ্রেপ্তারের জন্য অন্য কোনো পুলিশ অফিসারের কাছে থেকে অনুরোধ পাওয়া গেছে এবং তার অপরাধ ও গ্রেপ্তারের কারণ প্রেরণ করা হয়েছে। সেই অফিসার ওই ব্যক্তিকে আইনসঙ্গতভাবে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে করণীয় : কখনো কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে যত দ্রম্নত সম্ভব নিকটস্থ থানায় তা অবহিত করতে হবে। সম্ভব হলে সরাসরি থানায় জানাতে হবে। সরাসরি জানাতে দেরি হলে কোনো ফ্যাক্স কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে তা জানানো

যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরে থানায় এজাহার

দায়ের করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে