সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইনের আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের সেবা দেওয়া আইনজীবীদের পেশাগত কর্তব্য

১৪ জানুয়ারি তার নিজের গ্রামের বাড়িতে এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ধারালো ছ্যান এবং রামদা’র উপর্যুপরি কোপের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মোল্লা। এরপর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজুর রহমান (মন্টু) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ জানুয়ারি জানানো হয় যে, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মোল্লার ওপর হামলাকারীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় আসামিপক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য দাঁড়াবেন না। বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মোল্লার ওপর ১৪ জানুয়ারি আনুমানিক ৬টা ৪৫ ঘটিকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে কতিপয় সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারী। এ ঘটনায় নবাবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যার নম্বর ৬(১)২৩। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য মামলা পরিচালনা করবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মোল্লা জাসাস জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক আইন সম্পাদক, জাতীয়তাবাদ আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর ঢাকা জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়। প্রায় সময়ই দেখা যায় বিভিন্ন আইনজীবী সমিতি আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আদতে এসব সিদ্ধান্তের কোনো সাংবিধানিক, আইনগত কিংবা নৈতিক ভিত্তি নেই। তদুপরি বিভিন্ন আইনজীবী সমিতি এমনকী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে মূলত নিজেদের ক্ষমতার বিকার ঘটান। এসব বিষয় নিয়ে খুব বেশি আইনজীবী কথা বলতে পারেন না বা সাহস করেন না। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ মোল্লার ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লিখেছেন সমিতির দুইজন সদস্য মুকুল মুস্তাফিজ এবং এস এম তাসমিরুল ইসলাম উদয়।
-মুকুল মুস্তাফিজ
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ সাহেবের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে আমি তার নিন্দা জানাই এবং অপরাধীদের বিচার চাই, উপযুক্ত শাস্তি চাই। এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মামলা দায়ের হয়েছে সেই মামলার এজহার নামীয় ও সন্ধিগ্ধ যে কোনো আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী মামলা করতে পারবেন না বলে ঢাকা আইনজীবী সমিতি যে নোটিশ প্রকাশ করেছে আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। প্রত্যেক ব্যক্তিরই আইনের আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে। আইনজীবীরা সেই অধিকার সহজতর করার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। আমি বলি এটাই আইনজীবীদের পেশাগত কর্তব্য। যুক্তরাজ্যে ঈঅই জধহশ জঁষব নামক আইন আছে, যার মর্মার্থ হল আইনজীবীর কাছে কোনো ব্যক্তি আইনগত সহায়তা চাইলে তিনি তা ফেরত দিতে পারবেন না। যদিও বাংলাদেশে এর বিপরীত রুল চালু আছে। যেমন একজন আইনজীবী ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো মামলা পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। কিন্তু ঢাকা বার এসোসিয়েশন আইনজীবীদের ওপরে কোনো মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। এই ধরনের কোনো ম্যান্ডেট বা আইনগত ভিত্তি এসোসিয়েশনের নেই। শুধু আইনগত কেন? সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেও এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। এটা সমাজে আইনজীবীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। সাধারণ মানুষ থেকে আইনজীবীরা দূরে সরে যাবে। ফলে আইনজীবের ওপর চড়াও হওয়া আরও স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে। তাছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত আইনজীবী সমিতির পেশাগত ক্ষমতার অপব্যবহার বলে আমি মনে করি। তাই অচিরেই আইনজীবী সমিতির এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে