সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
অনুপ্রেরণা

হরিজন সম্প্রদায় থেকে প্রথম আইনজীবী হলেন কৃষ্ণ দাশ

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

পিছিয়ে পড়া হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান কৃষ্ণ দাশ। তার মা-বাবা দুজনই হরিজন সম্প্রদায়ের। এই জনগোষ্ঠীতে সমবয়সি অন্যরা মা-বাবার মতো পরিষ্কার-পরিুছন্নতার কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও কৃষ্ণ দাশ ছিলেন ব্যতিক্রম। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম তাকে পড়ালেখা থেকে দূরে সরাতে পারেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন পরিছন্নতাকর্মী (সেবক) হিসেবে কাজ করেছেন। জোগাড় করেছেন পড়াশোনার খরচ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, হরিজনদের মধ্য থেকে কৃষ্ণই প্রথম আইনজীবী হয়েছেন।

গত ৯ মার্চ বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া কৃষ্ণ দাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত।

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে অন্য আর দশজনের মতো কৃষ্ণ দাশের বেড়ে ওঠা। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন কৃষ্ণ। এরপর ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন।

আগে থেকেই কৃষ্ণের ইচ্ছা ছিল তিনি আইনজীবী হবেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহায়তায় তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচালনাধীন। তার কাছ থেকে নামমাত্র ভর্তি ফি নেওয়া হয়। পরে তার বেতনও মওকুফ করা হয়। শুধু পরীক্ষার সময় ফিগুলো দিতে হতো।

কৃষ্ণ দাশের বাবা চিরঞ্জীব দাশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পরিছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তিনি স্ট্রোক করেন। মা ছায়া দাশও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতাকর্মী। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মাকে একাই সংসার খরচ ও বাবার ওষুধের খরচ চালাতে হতো। কৃষ্ণ তখন তার পড়াশোনা ও নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে ওঠেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বন্ধুরা যখন দামি গাড়ি করে ক্যাম্পাসে আসতেন, তখন কৃষ্ণ কখনো হেঁটে আবার কখনো কাজ শেষ করে দৌড়ে শ্রেণিকক্ষে পৌঁছাতেন। কারণ, ক্লাসের আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি খন্ডকালীন পরিছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে বিকালে আরও দুটি টিউশনি করতেন।

২০১৮ সালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবিতে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন কৃষ্ণ। এরপর চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সাইমুল চৌধুরীও কৃষ্ণকে আগে থেকেই পড়াশোনাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করতেন।

হরিজন সম্প্র্রদায় থেকে দেশের প্রথম আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত কৃষ্ণ দাশকে গাউন পরিয়ে দেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া। গত ১৪ মার্চ বিকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে গাউন পরিয়ে দেওয়া হয়। এ আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে