সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বই আলোচনা

মাটির ফুল

নির্ভিক রহমান
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

তুলি আলম তরুণ কবি। জন্ম আশির দশকে। তাঁর ভাষ্যমতে লেখালেখি করছেন অনেকদিন ধরে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সবই তিনি লেখেন। 'মাটির ফুল' তাঁর প্রথম কবিতা গ্রন্থ। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে একুশের বইমেলায়। 'মাটির ফুল'সহ মোট ৭৬টি ছোট-বড় কবিতা দিয়ে সাজানো বইটি। কবি নিজেই বলেছেন বইটির 'মাটির ফুল' নামকরণের নেপথ্যের কথা। দেশের অসংখ্য পথশিশুদেরকে তিনি 'মাটির ফুল' বলে ডাকেন। বইটিও তিনি উৎসর্গ করেছেন পথশিশুদের জন্য। বই-এর শুরুতেই 'মাটির ফুল' কবিতার প্রথম চরণে লিখেছেন- 'সেদিন রাস্তার ধারে দেখলাম চেয়ে/কাঁদছিল শিশু এক ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে/চেয়ে অসহায় মুখ পানে বলিলাম তাকে/কাঁদছো কেন খোকা, মা মেরেছে তোমাকে। এই কবিতায় তিনি পথ শিশুদের দুঃখ, কষ্টের কথাগুলোই তুলে ধরেছেন।

তুলি আলমের আরও অনেক কবিতায় আছে কষ্টের কথা, অভিমান আর অনুরাগের কথা। আছে আক্ষেপ, ভালোবাসার কথা। রোমান্টিকতাকেও এড়িয়ে যাননি। অনেক কবিতাতেই আছে ছন্দ ও সুরের ছোঁয়া আছে। তবে কোনো কোনো কবিতাতে বিচ্ছেদ আর অভিমানের কথা একটু বেশিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বইয়ের প্রথম কবিতা 'তাসের ঘর'। শুরুতেই কবি লিখেছেন- কত নিশ্চল বিনিদ্র রজনী পার করেছি/তমিসাখন ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারাচ্ছন্ন গৃহে/হৃদয়ের গহিন নিরীক্ষণে অবশেষে বুঝেছি/ডুবে ছিলাম কাপট্যে তাসের ঘরের মোহে। এই কবিতার ইতি টেনেছেন এভাবে- যে ঘর আমার নয়/বৃথা কেন স্বপ্ন বুনি তবু/মনের স্বর্গ রাজ্যে, ভলোবাসার কুটিরে। সেই ভালো ভস্ম হোক ছলনার তাসের ঘর/মুক্তি মিলুক চাতুরী থেকে অভাগী অন্তরে। বোঝা যায় কোথায় যেনো কবি মনে ঢের অভিমান, অনুতাপ, খেদ জমা আছে। 'আক্ষেপ' কবিতার কথা ধরা যাক। শেষাংশে লিখেছেন- যাক সবাই যাক আমায় তবে একা ফেলে যাক/ অনুতাপের অনল জীবনে দুঃখই পড়ে থাক/ তবুও ভালো কেউ না কেউ সঙ্গী হয়ে রয়ে গেল/ নিরাশার কালো আঁধারে পাই যদি আশার আলো।

তুলি আলমের কবিতায় মূল বৈশিষ্ট্য কবিতাসমূহ সহজ-সরল শব্দ চয়নে লেখা। চেনা-জানা শব্দ দিয়েই তিনি অনুভূতিগুলো তুলে ধরেছেন। অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে যা অনুভব করেছেন বলেছেন তা নিজের মতোই করে। যেমন- 'কেন এসেছো কেড়ে নিতে লাজ ভেঙে দিতে শরম/ আমিতো আপন মনে/ পড়ে রয়েছে গৃহকোণে (শংকিত প্রাণ, পৃষ্ঠা ৪৪)-একেবারে সহজ উচ্চারণ। আবার লিখেছেন-'হৃদয় তবে হয়েছে কি অভিশপ্ত/ দুঃখের দহন তাড়া করে অবিরত/ হৃদয়খানা তাই জ্বলছে অনলতপ্ত। (অভাগীর দিনরাত, পৃষ্ঠা: ৬৩)

ভালোবাসা, ক্ষোভ, আক্ষেপের বাইরে ব্যক্তিবিশেষকে নিয়েও কবিতা লিখেছেন তিনি। যেমন- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, কবি নুরুল হুদাকে নিয়ে লিখেছেন আলাদা করে। আবার রানা পস্নাজার দুর্ঘটনা নিয়েও লিখেছেন। প্রকৃতির প্রতি তার যে অনিঃশেষ ভালোবাসা মমত্ববোধ তাও উচ্চারণ করেছেন। 'পলস্নীমায়া', 'শ্রীহীন প্রকৃতি', 'হৈমন্তী কন্যার আগমন' এবং 'হেমন্তের ছড়া' পড়লেই তা অনুভব করা সম্ভব। 'হৈমন্তী কন্যার আগমন' কবিতার প্রারম্ভে লিখেছেন- 'আমি হৈমন্তী কন্যা এসেছি হেসে হেসে মিষ্টি সোনালি রোদ নিয়ে'। এরকম আরও প্রিয় শব্দমালা দিয়ে সাজিয়েছেন তিনি। 'পলস্নীমায়া' কবিতায় শৈশব ও কৈশরের রোদমাখা দিন খুঁজেছেন আপন মনে।

কবিতার প্রতি তুলি আলমের অবাধ্য প্রেম আর ভালোবাসাকে প্রশংসা করতেই হয়। এই প্রেম-ভালোবাসা তাকে নিয়ে যাবে আরও সামনে। 'মাটির ফুল' বইটির দাম ১৫০ টাকা। রকমারি ডটকমে অর্ডার দিয়ে যে কেউ বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে