সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকিত মানুষ গড়ার পথিকৃৎ আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ

এস ডি সুব্রত
  ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা ষাটের দশকে বাংলাদেশের নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ একজন সুবক্তা এবং সত্তরের দশকের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র' তিন দশক ধরে বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের ২৫ জুলাই কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার অন্তর্গত কামারগাতী গ্রামে। তার পিতা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক। দেশভাগের পর আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে। পিতার চাকরি সূত্রেই তার শৈশবের কিছু সময় কাটে টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। সেখানকার বংশী নদী তার শৈশবের মনোহর চিন্তায় ছায়া ফেলেছে গভীরভাবে। ১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুলস্নচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষা ও সামাজিক বাস্তবতায় 'আলোকিত মানুষ চাই' স্স্নোগানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ যেন একসূত্রে গাঁথা একটি নাম।

২০০০ সাল থেকে সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ স্যারের। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলন বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন প্রাণ পেয়েছিল তার নেতৃত্বে। শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।

পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুব উলস্নাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রোটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), এম এ হক ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক (২০০১), রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), ডা. ইব্রাহীম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০০৬), শেল্টেক পদক (২০০৬), পরিবেশ পদক (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ২০০৯), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৯), চ্যানেল আই আনন্দ আলো পুরস্কার (২০১০), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পুরস্কার (২০১১), কাজী আজাহার আলী স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১১), বাংলা একাডেমী পদক (২০১১)। অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে ৫৭টি গ্রন্থ লিখেছেন। সেগুলো হলো- দ্যাগ হ্যামারশোল্ড (অনুবাদ) নওরোজ কিতাবিস্তান (১৯৬৯), দুর্বলতায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ মুক্তধারা (১৯৭৬), শৃঙ্খলিত প্রমিথিউস বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৮২), মৃতু্যময় ও চিরহরিৎ ঋদ্ধি (১৯৮৮)/মওলা ব্রাদার্স (২০০৮), উত্তর প্রজন্ম শিল্পতরঙ্গ (১৯৯২) প্রকাশনী/মওলা ব্রাদার্স (২০০৮), বিশ্বস্ত জার্নাল সাহিত্য প্রকাশ (১৯৯৩)/সময় প্রকাশন (২০১৪), বিদায়, অবন্তী! পার্ল পাবলিকেশন (১৯৯৫), রোদনরূপসী বর্ণায়ন (১৯৯৬)/সময় প্রকাশন (২০০৮), যুদ্ধযাত্রা কৃষ্টি প্রকাশনী (১৯৯৭), খরযৌবনের বন্দী পার্ল পাবলিকেশন (১৯৯৮), নিষ্ফলা মাঠের কৃষক মওলা ব্রাদার্স (১৯৯৯), রস্ট্রাম থেকে (১ম খন্ড) মওলা ব্রাদার্স ২০০০), বন্ধ দরজায় ধাক্কা মওলা ব্রাদার্স (২০০০), নিউইয়র্কের আড্ডায় সুবর্ণ প্রকাশন (২০০১), মুখোমুখি মওলা ব্রাদার্স (২০০২), ভালবাসার সাম্পান মওলা ব্রাদার্স (২০০২), রস্ট্র্রাম থেকে (২য় খন্ড) দিব্যপ্রকাশ (২০০৩), সংগঠন ও বাঙালি দিব্য (২০০৩)/মওলা ব্রাদার্স (২০১৩), বহে জলবতী ধারা (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০০৩), আমার উপস্থাপক জীবন সময় প্রকাশন (২০০৫), নদী ও চাষীর গল্প সময় প্রকাশন (২০০৬), ব্রাহ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া অনন্যা (২০০৭), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আমি মওলা ব্রাদার্স (২০০৭), অপ্রস্তুত কলাম সময় প্রকাশন (২০০৮), কথোপকথন অন্যপ্রকাশ (২০০৯), গণতন্ত্র ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা মওলা ব্রাদার্স (২০০৯), ওড়াউড়ির দিন (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১০), বহে জলবতী ধারা (২য় খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১১), অন্তরঙ্গ আলাপ সময় প্রকাশন (২০১২), স্বপ্নের সমান বড় সময় প্রকাশন (২০১২), গল্পসল্প সময় প্রকাশন (২০১৪), স্বনির্বাচিত প্রবন্ধ ও রচনা অনন্যা (২০০১), গল্প সংগ্রহ অনন্যা (২০০৩), সেরা লেখা (১ম খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০০৭), সেরা লেখা (২য় খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০০৮), কিশোর সমগ্র শব্দশৈলী (২০০৯), রৌদ্র ও প্রকৃতির কাব্য মওলা ব্রাদার্স (২০০৯), রৌদ্র ও প্রকৃতির কাব্য মওলা ব্রাদার্স (২০০৯), আমার বোকা শৈশব সময় প্রকাশন (২০১১), বক্তৃতা সংগ্রহ (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১৩), বক্তৃতা সংগ্রহ (২য় খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১৩), সাক্ষাৎকার সংগ্রহ (১ম খন্ড) মওলা ব্রাদার্স (২০১৩), রচনা সমগ্র (১ম খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০০৬), রচনা সমগ্র (২য় খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০০৮), রচনা সমগ্র (৩য় খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০০৮), রচনা সমগ্র (৪র্থ খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০১০), রচনা সমগ্র (৫ম খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০১১), রচনা সমগ্র (৬ষ্ঠ খন্ড) অন্যপ্রকাশ

(২০১১), রচনা সমগ্র (৭ম খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০১৩), রচনা সমগ (৮ম খন্ড) অন্যপ্রকাশ (২০১৪), সাম্প্রতিক ধারার গল্প সিটি লাইব্রেরি (১৯৬৪)/বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৭), এক দশকের কবিতা নলেজ হোম (১৯৭৫), সাম্প্রতিক ধারার প্রবন্ধ মুক্তধারা (১৯৭৬), কবিতা ও অন্যান্য: খান মোহাম্মদ ফারাবী (সম্পাদনা) জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী (১৯৭৬), মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ কবিতা: হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯১), সুকান্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯৫)। ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ টেলিভিশনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উচ্চ প্রশংসিত বেশকিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: হারজিত (বিনোদনমূলক) ১৯৭৩-৭৪, সপ্তবর্ণা (বিনোদনমূলক) ১৯৭৫-৭৬, আনন্দমেলা (বিনোদনমূলক) ১৯৭৮-৭৯, চতুরঙ্গ (বিনোদনমূলক) ১৯৭৯-৮০, মানচিত্র (শিক্ষামূলক) ১৯৮১-৮২, চারুপাঠ (শিক্ষামূলক) ১৯৯৪-৯৫, সোনালী দরোজা (শিক্ষামূলক) ১৯৯৯-২০০০। বর্তমান সময়ের শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে তার নিষ্ফলা মাঠের কৃষক গ্রন্থে স্পষ্ট ভাষায় তিনি লিখেছেন?'আজ দেশের স্কুল-কলেজগুলোয় কার্যত লেখাপড়া হচ্ছেই না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লাখ লাখ শিক্ষকের অধিকাংশই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নন, যারা যোগ্য তারা ছাত্রদের দেন অতি সামান্য। ফলে অভিভাবকরা কেউই বিদ্যালয়কে আজ তাদের সন্তানদের বিকাশের অঙ্গন হিসেবে মনে করেন না। ফলে বাণিজ্যিক উদ্যমসম্পন্ন গৃহশিক্ষকরা আজ হয়ে উঠেছেন ছাত্রসমাজের মূল আশ্রয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে