শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নারী

নন্দিনী ডেস্ক
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী চলমান বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ২৩ ডিসেম্বর 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নারী'বিষয়ক অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভার শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন তরুণ সংগীতশিল্পী মৃদুলা সমাদ্দার।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সহস্র বছরের অর্জন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে পাই। এ মুক্তিযুদ্ধে গ্রামীণ বাংলার অগণিত নারীরা সাহস আর দৃঢ়চেতা মনোবল নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, চিকিৎসা-খাদ্য সহযোগিতা করে, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে, গেরিলাবাহিনীতে অংশগ্রহণ করে সহায়তা করেছে। তাদের এ গৌরবগাথার ইতিহাস এখনো অনেকের অজানা। তিনি নতুন প্রজন্মের জন্য এসব নারীকে এ গৌরবগাথার ইতিহাসকে সংকলিত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এ সংকলন আপামর জনগণের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে, নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে সহায়ক বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। রেকর্ডকৃত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন আমাদের জন্মই হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। নারীর মমতাময়ী, ঘরমুখী এমন ধারণার বদল হয় নারীর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও নারী আন্দোলন একই সূত্রে গাথা। নারীর বীরত্ব, সাহসিকতা, অধিকারের পরিচয় পাই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে সংগঠনের কর্মকর্তাদের গণনারীর মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার বিষয়টি জানতে যুক্ত করার আহ্বান জানান। আমরা উন্নয়নের বাহক কেবল লক্ষ্যমাত্রা নয়। মুক্তিযুদ্ধ এখনো চলছে, এটা চলতেই থাকবে।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, উদ্যোক্তা, নারী নেত্রী ও সমাজসেবক বেগম মুশতারী শফী। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম প্রেরণা ছিল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তার জীবনী এক বৈপস্নবিক চেতনার জন্ম দেয়। তার অনুসারীদের নারী আন্দোলনে ভূমিকা ছিল, মাস্টারদা সূর্যসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রভাগে ছিলেন। চট্টগ্রামের নারীদের আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে নারীদের অবদান শিরোনামে লেখা বইটির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন চট্টগ্রামের কথা লিখলেই যেন মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র মানুষের কথা বলা হয়ে যায়।

এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা ডালিয়া নওশিন, বরিশালের বেগম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, কবি ও গবেষক আসমা চৌধুরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুনু।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ৭১-এর আগে থেকেই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলনে যোগ দেন। যদি কোনো আন্দোলনে নারীরা যুক্ত না হয় তবে তা পূর্ণতা পায় না। অথচ ইতিহাসে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি নেই। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন করার দাবিতে পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয় তবে তা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। এটি নারী আন্দোলনের ব্যর্থতা। তাদের মূলধারায় আমরা আনতে পারিনি। অনেক অর্জন নারীদের হয়েছে তবে এখনো দুস্তর বাধা আছে নারীদের জীবনে এবং বাংলাদেশের পথে। বাংলাদেশের প্রগতিশীল যাত্রার উপরে বাধা আছে, এজন্য ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। কেননা সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটেছে প্রবলভাবে, একে নির্মূল করার জন্য সরকারকে এবং জনগণকে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। ওই আলোচনা সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও আলোচকরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে