শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান করেছেন বীথি

সোহেল রানা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
উদ্যোক্তা বীথি খাতুন

কুষ্টিয়ায় এক সাহসী নারী উদ্যোক্তা বীথি খাতুন। সদর উপজেলার ভবানীপুরে বীথির পৈতৃক নিবাস। স্বামী ও শিশুসন্তান ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তিনি বসবাস করেন শহরের পূর্ব মজমপুরে ভাড়া করা বাসায়। বাল্যবিয়ের শিকার বীথি ঘুরে দাঁড়িয়েছে নিজের কর্মের মধ্যদিয়ে। এখন বীথির বয়স ৩২। পড়ালেখায় খুব বেশি এগোতে না পারলেও একজন উদ্যোক্তা হয়ে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হয়। তার স্বামী কুষ্টিয়ার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিজ উদ্যোগে হস্তশিল্পের কাজ শিখেছেন বীথি। শুধু নিজে নয়- শিখিয়েছেন অন্যদের। প্রাতিষ্ঠানিক হস্তশিল্পের শিক্ষা না থাকলেও থ্রি-পিস, নকশি কাঁথা, ওয়ানপিস, টপস বানানোয় পারদর্শী বীথি খাতুন এখন একটি পরিচিত নাম। ছোট পরিসরে নিজে শুরু করলেও এখন তার উদ্যোগে ১১০ জন কর্মী কাজ করে চলেছেন দিন-রাত। ছোঁয়া হস্তশিল্প নামের একটি প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন বীথি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মন্ডলপাড়া, মটপাড়া এবং হররা গ্রামে ৩টি প্রদর্শনী সেন্টার রয়েছে তার। এ তিনটি গ্রামে ১১০ জন কর্মী কাজ করছেন হস্তশিল্পের। উদ্যোগ এবং বিনিয়োগ করেছেন বীথি।

বীথি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের হাট পোড়াদাহ থেকে তিনি ক্রয় করেন কাপড়। এরপর তাতে ডিজাইন করে অংকন করেন কাপড়ের গায়ে। তার সঙ্গে ডিজাইন করার জন্য ৫ জন কর্মী সহযোগিতায় রয়েছেন। নিজ বাড়িতে কাজগুলো করে থাকেন বীথি খাতুন। ডিজাউন শেষে সুতা এবং কাপড় দিয়ে দেন কর্মীদের হাতে। তারা তা প্রস্তুত করেন এবং বীথি প্রদর্শনী সেন্টারগুলো তা বিক্রি করেন। পাশাপাশি অনলাইনে ছোঁয়া হস্তশিল্প নামের একটি ফেসবুক পেজ বানিয়েছেন বীথি। সেখানে ছবি পোস্ট করা হয় হরেকরকম ডিজাইনের থ্রি-পিস, টু-পিস ওয়ান পিস, নকশি কাঁথা। অনলাইনেও বিক্রি হয় উৎপাদিত পণ্য। বীথি জানান, ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে থ্রি-পিস। নকশি কাঁথা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাকও বানান বীথি। শিশুদের পোশাকের বিক্রি অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হররা গ্রামের উর্মি খাতুন নামের এক গৃহবধূ জানান, বীথির কাছ থেকে হস্তশিল্পের কাজ শিখেছেন। গৃহস্থালির কাজ করার পাশাপাশি তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে মাসে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করেন। এতে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। মন্ডলপাড়া গ্রামের কলেজছাত্রী সন্ধ্যা সুলতানা বলেন, বীথির উদ্যোগে তারা অংশ নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এই কাজ করে তার পড়ালেখার খরচটি খুব ভালোমতো চলে যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি হস্তশিল্পের কাজ করেন। বীথি জানান, কয়েকজন কর্মী তিনি কাজ শুরু করলেও এখন তার ছোঁয়া হস্তশিল্প পরিবারের সদস্য ১০০ পেরিয়ে গেছে। মাসিক আয়ও সন্তোষজনক। তিনি নারীদের প্রতি আহ্বান জানান, পুরুষদের পাশাপাশি নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে