সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যানবাহনে নারী কেন হয়রানির শিকার?

নেছার উদ্দিন চৌধুরী
  ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এই দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। এজন্য দেশের জনগণ, সরকার ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এত উন্নয়নের মাঝে আমাদের বাঙালির মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন কী সম্ভব নয়? পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাবে নারীর হয়রানি বন্ধ করা কী সম্ভব নয়? যানবাহনে নারী হয়রানিতে সরকারের সজাগ দৃষ্টিপাত কী সম্ভব নয়? আমাদের দেশে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল। আরও কত কী? কেন এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে? শুধুই কী পুরুষদের উন্নয়নের জন্য নাকি নারীদেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের জন্য? যোগাযোগের এই ব্যবস্থাগুলো তৈরি করে মানুষের কর্মঘণ্টা বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কর্মঘণ্টা বাঁচিয়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে। মেট্রোরেলের কারণে আমাদের ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা যানজটের হাত থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং এতগুলো কর্মঘণ্টা নষ্টের কারণে দেশের প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হতো, তা আজ অনেকটাই মুক্ত হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়ন কী শুধুই পুরুষকেন্দ্রিক- নাকি নারীদের জন্যও? যদি নারীদের জন্যও হয় তাহলে কেন রাজধানী শহর থেকে শুরু করে প্রত্যেক কর্মব্যস্ত শহরগুলোতে চলাচলের পথে নারীরা আজ হয়রানির শিকার? কেন তারা আজ অন্যায়ের প্রতিবাদে ব্যর্থ? কেন তারা এক পরোক্ষ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ? নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা কাজে ঘরের বাইরে যেতে হয়। কিন্তু চলাচলের রাস্তা তাদের জন্য কেন নিরাপদ নয়? কেন পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে যানবাহনে আরোহণ করতে হয়? কেন তাদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন পেতেও তারা ব্যর্থ হয়? কে দেবে এতগুলো কেনর উত্তর? অথচ, ইসলাম নারীদের যে সম্মান দিয়েছে, তাতে হওয়ার কথা ছিল নারীদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। নারী দেখামাত্রই পুরুষ নিজের আসনটাও ছেড়ে দেবে। নিজের কাজকে প্রাধান্য না দিয়ে কষ্টে জর্জরিত নারীকে সাহায্য করবে। এটাই ছিল ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু আমরা বাঙালি জাতির মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন সাধন করতে পারিনি। যার ফলে আমাদের এমন কিছু অনুপাত দেখতে হচ্ছে- যা অকল্পনীয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যার ঘটনার ৫০% মহাসড়কে, ২৫ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে ও ২৫ শতাংশ রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কে ঘটে। মাঝারি পালস্নার বাসে ঘটে ২৫ শতাংশ, আন্তঃশহর বাসে ৩০ শতাংশ, স্বল্প দূরত্বের বাসে ২০ শতাংশ, দূরপালস্নার সিটিং বাসে ১৫ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে পরিবহণের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার জড়িত। যাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। আরেকটি অনুপাত যদি আমরা লক্ষ্য করি: তরুণীদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব শীর্ষক সমীক্ষা নিয়ে গত ৫ মার্চ, ২০২২ তারিখে আঁচল ফাউন্ডেশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে দেখা যায়, দেশে মোট তরুণীদের মধ্যে ৬৫.৫৮ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়া ৪৫.২৭ শতাংশ তরুণী গণপরিবহণে যৌন হয়রানির শিকার হন। গণপরিবহণ হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত বাস বা বাসস্ট্যান্ড যৌন হয়রানির মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ৮৪.১০ শতাংশ তরুণী। গণপরিবহণে হয়রানির শিকার এসব নারীদের ৬৫ শতাংশ বিভিন্ন কটূক্তির মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। আজকের দিনে এত উন্নয়ন, কিন্তু যেখানে উন্নয়ন প্রয়োজন সেখানে কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করা থেকে শুরু করে, ধাক্কাধাক্কি করে ওঠানামা- উঠার সময়ে হেলপারের বিরূপ মন্তব্যের শিকার নারীদেরই হতে হচ্ছে। এই উন্নয়নশীল দেশে নারীদের এই হয়রানি বন্ধেও যদি উন্নয়ন ঘটানো যায় তবেই সম্ভব হবে প্রকৃত উন্নয়ন। তবেই সম্ভব হবে মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন। তবেই সম্ভব হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে