শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় তথ্যপ্রযুক্তি

আনিসুর রহমান
  ০৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

বইমেলা বাঙালিদের অস্তিত্ব বহন করে। বইমেলাকে বাঙালি সংস্কৃতির মিলনমেলা বললেও ভুল হবে না। বাংলা ভাষাভাষী লোকদের জন্য বইমেলা এক প্রকার প্রাণের সঞ্চার করে। কারণ বই মানুষের মনের তৃষ্ণা মেটায়। একজন মানুষকে মানবিক ও উদর মনের অধিকারী হতে সাহায্য করে। জাগ্রত করে মানুষের মধ্যে ঘুমন্ত থাকা বিবেকবোধ। বই মানুষকে অবসরে সঙ্গ দেয়। বইমেলাকে ঘিরে লেখক-পাঠকদের মিলনমেলা হয়। যদিও করোনার ভয়াল থাবায় এবার তা সম্ভব হচ্ছে না।

করোনার কারণে এবারে বইমেলার আয়োজন নিয়েই ছিল নানা সংশয়। অবশেষে, বাঙালির প্রাণের স্পন্দন বইমেলা, কঠোর সতর্কতার মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংক্রমণের হার কমাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নেওয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ। স্টলগুলোর অবস্থানও সেভাবে দেওয়া হয়েছে। বেশি জায়গাজুড়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মোট ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে ইতিহাসের বিস্তৃত পরিসরে বইমেলা হচ্ছে এবার। এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। সবার জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বড় উৎফুলস্নতার বিষয়, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা বইমেলাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। মেলায় প্রবেশ থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। মেলায় প্রবেশের সময় কারও শারীরিক স্পর্শ ছাড়াই মেটাল চেকআপ যন্ত্রের সাহায্যে চেকআপ। রয়েছে ডিজিটাল হ্যান্ডওয়াশিং যন্ত্র।

এরপর বইমেলাজুড়ে রয়েছে শত শত স্টল। এবারে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রয়েছে ৩৩টি প্যাভিলিয়নও। এত এত স্টলের ভিড়ে কাঙ্ক্ষিত স্টলটি খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে এখন তা মোটেই দুষ্কর নয়। কারও কাছে জিজ্ঞাসা না করেও প্রযুক্তি সাহায্য নিয়ে খুব সহজে স্টলের যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। গুগল স্ট্রিট ভিউ দেখেই জানা যাবে যে কোনো স্টলের অবস্থান।

\হবইমেলায় রয়েছে বাংলা একাডেমির ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র। এখানে স্থাপন করা হয়েছে দুটি কিয়স্ক। এই কিয়স্ক দুটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি স্পর্শ পর্দার মনিটর। এখান থেকে মুহূর্তেই জানা যাবে স্টল ম্যাপ, বই ও প্রকাশনীর তথ্যসহ যাবতীয় বিষয়। কিবোর্ড ও টাচের মাধ্যমে যে কোনো বাংলা বর্ণ চেপে ওই বর্ণ দিয়ে নামের বই খুব সহজেই খুঁজে নিতে পারছেন। মেলাতে মোবাইল ব্যাংকিং ও কার্ড পাঞ্চ সুবিধা রেখেছে বিভিন্ন প্রকাশনী। স্টলগুলোতে ব্যবহার করছে পজ মেশিন। হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষায়িত সফটওয়্যার। এসব তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন সহজ হয়ে এসেছে।

মেলাজুড়ে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা। ফলে কোনো বইয়ের তথ্য, গুগল ম্যাপসহ বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইট থেকে নানান তথ্য মুহূর্তেই জানা যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের তালিকা প্রকাশ করে।

মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ দিয়ে মেলায় আসা সব মানুষ বিনামূল্যে এই সুবিধা নিতে পারছেন। যদিও ওয়াইফাই সেবার মান আরও বাড়ানোর দাবি সর্ব সাধারণের।

মেলায় প্রতিটি স্তরে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। আধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে এই সিসি ক্যামেরাগুলো।

প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ এখন মোবাইল ও ল্যাপটপের দিকে বেশি ঝুঁকছে। বইয়ের পাতা উল্টিয়ে পড়ার অভ্যাস যেন দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। এ ভয়ানক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে ই-বুক পদ্ধতি। নামমাত্র খরচ দিয়ে পাওয়া যাবে অসংখ্য বই সংবলিত ই-বুক। মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ দিয়ে পড়া যাবে এসব ই-বুক।

প্রযুক্তির সুফলকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন ঘরে বসেই যে কোনো ধরনের বই কিনতে পারছে। ব্যস্ততার কারণে কেউ বইমেলায় যেতে না পারলেও অনলাইন বা ফোনের মাধ্যমে বই ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে। বাইরে করোনার ঝুঁকি থাকায় মানুষ এখন অনলাইন থেকে বই অর্ডারের দিকে ঝুঁকেছে। অনলাইনে অর্ডার করার জন্য রয়েছে বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাদের জেলা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাঠকের হাতে বই পৌঁছে দিচ্ছে। পাঠক বই হাতে পাওয়ার পরই প্রতিনিধি টাকা নিচ্ছে। ফলে পাঠকের থাকছে না কোনো অভিযোগ।

এছাড়া প্রকাশনীর পেজ, ওয়েবসাইট বা ফোন নাম্বারে কল দিয়ে বই অর্ডার করা যায়। আছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ। ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা কার্ড থেকে বইয়ের মূল্য পরিশোধ করা যায়। বইমেলায় গিয়েছেন কিন্তু টাকা শেষ, এমন অবস্থায় চিন্তার কোনো কারণ নেই। পছন্দের বইটি অর্ডার করে চলে আসুন পরে টাকা পাঠিয়ে দিলে ঘরে বসেই বই পেয়ে যাবেন। আপনার পছন্দের বইটি তারা কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেবে।

বইমেলাতে এসব তথ্য জানান দেয়, মুদ্রিত বইয়ের মেলা হলেও তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া বইমেলাকে সমৃদ্ধ করেছে। দিন দিন প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়ায় বইমেলা আরও সমৃদ্ধ হবে সে প্রত্যাশা সবার। মরণঘাতী করোনার সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশের অনুরোধ রইল।

শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদ,

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

স্থায়ী ঠিকানা-উপজেলা : বালিয়াকান্দি, জেলা : রাজবাড়ী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে