সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের অমরত্ব প্রচেষ্টা

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ দীর্ঘ জীবন আশা করে। শুধু দীর্ঘ জীবন নয়, বলা যায় অমরত্ব লাভ করতে চায়। শুধু চেয়ে-ই মানুষ বসে নেই, কীভাবে আরও বেশিদিন বেঁচে থাকা সম্ভব তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে বিজ্ঞানীদের। সেই অতীতকালেও যখন বিজ্ঞানের আলো পড়েনি তখনো মানুষ তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে অমরত্ব লাভ করার চেষ্টা করেছে। এর কারণ হয়তো মানুষ মৃতু্যকে ভয় পায়। হয়তো কোনো একদিন সেই পদ্ধতি বা ওষুধ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে
অলোক আচার্য
  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ কয়েকদিন আগে ১২৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। মৃতু্য পৃথিবীর চরম সত্য। পৃথিবীতে শতবর্ষ পার করা মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যারা বেঁচে থাকেন তারা সৌভাগ্যবান। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ দীর্ঘ জীবন আশা করে। শুধু দীর্ঘ জীবন নয়, বলা যায় অমরত্ব লাভ করতে চায়। শুধু চেয়ে-ই মানুষ বসে নেই, কীভাবে আরও বেশিদিন বেঁচে থাকা সম্ভব তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে বিজ্ঞানীদের। সেই অতীতকালেও যখন বিজ্ঞানের আলো পড়েনি তখনো মানুষ তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে অমরত্ব লাভ করার চেষ্টা করেছে। এর কারণ হয়তো মানুষ মৃতু্যকে ভয় পায়। হয়তো কোনো একদিন সেই পদ্ধতি বা ওষুধ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে। যেভাবে দেবতাদের হাতে অমরত্ব সুধা এসে তাদের অমর করে দিয়েছে, অনেকটা সেভাবে বিজ্ঞানও একদিন মানুষের হাতে হাতে সেই অমৃত পৌঁছে দিতে সমর্থ হবে। আজ পর্যন্ত তো বিজ্ঞান মানুষকে অনেক কিছুই দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত যা গবেষণা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা মানুষ করতেই পারে। কেউ হয়তো তা অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পৃথিবীকে যা কিছু অসম্ভবকে সম্ভব তা বিজ্ঞানই করেছে। আকাশে ওড়া বা সমুদ্রের গভীরে চলা এসব তো কল্পনাই ছিল এক সময়। এটাও কারও চোখে কল্পনা হতে পারে। তবে একদিন তা সত্যি হতেও পারে। প্রতিটি প্রাণী আরও বেশিদিন বাঁচতে চায়। সেই প্রাচীনকাল থেকে দীর্ঘ জীবন লাভের সূত্র এমনকি অমরত্ব লাভের সূত্র খুঁজে চলেছে মানুষ। এর জন্য বসে নেই বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের গবেষণার একটি বিষয় হলো মানুষের দীর্ঘ জীবন। মানুষ জানে যে মৃতু্য অবশ্যম্ভভাবী। একে ঠেকানোর উপায় আপাতত নেই। তবে মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। এটা বিজ্ঞান বিশ্বাসও করে। কিন্তু কত বছর পর্যন্ত মানুষ বাঁচতে পারে? একশ বছর তো লক্ষ্য নয়। একদিন হতে পারে মানুষ দুইশ বা তিনশ বছর ধরে বেঁচে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ডেভিড ম্যাককার্থির মতে, পুরুষরা ১৪১ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং নারীরা ১৩০ বছর পর্যন্ত। আমাদের দেহ অগণিত কোষের মাধ্যমে গঠিত। সেই কোষ প্রতিনিয়তই ধ্বংস হয়। আমরা সেটা টের পাই না। দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ বিভাজন হারিয়ে ফেলে এবং আর নতুন করে তৈরি হয় না। এর ফলে মৃতু্য ঘটে। আবার আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গই কিন্তু একসঙ্গে মারা যায় না। এখানেও রয়েছে সময়ের বিভাজন। ২০১৮ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ বছর হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল হার্ভাড মেডিকেল স্কুলের গবেষণায় এ আশা দেখা যায়। গবেষকরা দাবি করছেন, বার্ধক্য প্রতিরোধী গবেষণা সফল হলে শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ ব্যবহার করে নতুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও তৈরি করা যাবে। গবেষক দলের প্রধান ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেন, এনএডি নামের একটি অণু এবং সার্ট-ওয়ান নামের একটি প্রোটিন এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। রক্তনালিতে এনএডির মূল কাজ হচ্ছে সার্ট-ওয়ানের উপস্থিতি বাড়ানো। আর সার্ট-ওয়ান রক্তনালি এবং পেশিকলার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। কিন্তু বয়স যত বাড়ে, রক্তনালির মধ্যে এনএডি ও সার্ট-ওয়ান কমতে থাকে। ফলে রক্তনালি এবং মাংসপেশির মধ্যে যোগাযোগও কমতে থাকে। তারা ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে সাফল্য পান। মানুষ জন্মের পর থেকে শিশু, কিশোর, যুবক এবং বৃদ্ধ এই কয়েকটি অবস্থা পার করে। এই স্তরগুলোর মধ্যে মানুষের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। মানুষের শক্তি এবং সামর্থ্য পরিবর্তন হয়। মানুষ সর্বোতভাবে চেষ্টা করছে এই স্তরগুলোতে একটু বিলম্ব করানো। অর্থাৎ বুড়িয়ে যাওয়ার সময়টাকে আরও একটি দীর্ঘ করা। তাহলেই মানুষের আয়ু বাড়তে পারে। যদিও বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ জীবনের সূত্র হিসেবে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের পদ্ধতি, মানুষের টেনশন বা দুশ্চিন্তা, পরিবেশ ইত্যাদির ওপর জোর দিয়েছেন। কোনো কোনো দেশের মানুষের গড় আয়ু এমনিতেই বেশি। যেমন- জাপান। এ ক্ষেত্রে তাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। মানুষের দীর্ঘ জীবনের গবেষণা নিয়ে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে। এই গবেষণায় সামনে আসে 'লবস্টার' বা গলদা চিংড়ি জাতীয় প্রাণীর দীর্ঘ জীবন রহস্য।

পৃথিবীর সব প্রজাতির প্রাণীর মতোই মানুষেরও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শরীরের বিকাশ ঘটে। শরীরের যাবতীয় ক্ষয়-ক্ষতি তারা নিজে থেকেই মেরামত করতে পারে। কিন্তু, তারপর থেকে মানবদেহ ধীরে ধীরে এ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অবশেষে একদিন তারা মৃতু্যর কাছাকাছি উপস্থিত হয়। কিন্তু লবস্টার বা গলদা চিংড়িরা এমন নিয়মের ব্যতিক্রম। তারা এমনিতেই দীর্ঘজীবী। বার্ধক্যজনিত কারণে তাদের মৃতু্য হয় না। তারা মরে হয় মানুষ বা অন্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে, অথবা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলস প্রতিস্থাপন করার সময়ে শারীরবৃত্তীয় কারণে। লবস্টারের এ অবিশ্বাস্য দীর্ঘ জীবনের রহস্য হলো টেলোমারেজ এনজাইম। কোনো কোষের মৃতু্যর আগে বা তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার আগে কোষ বিভাজনের সংখ্যা বাড়ায় এ টেলোমারেজ। মানবদেহের অল্প কিছু কোষে সক্রিয় টেলোমারেজ থাকে অবশ্য। বিশেষ করে স্টেম সেলে। এ কারণেই স্টেম সেল দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের মেরামত করতে পারে। কিন্তু এর একটা সমস্যা রয়েছে। যাই হোক মানুষ চেষ্টা করছে মানুষের গড় আয়ু ১৫০ বছর পর্যন্ত পৌঁছাতে। এ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। একদিন অবশ্যই সেই প্রচেষ্টা সফলও হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে