সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

'সাইন্টিফিক এরিয়ায় গ্রেইট পিপলদের সংস্পর্শে না গেলে, গ্রেইট হওয়া টাফ'

নতুনধারা
  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
ড. রউফুল আলম

ড. রউফুল আলম একজন অর্গানিক কেমিস্ট্রির গবেষক। তিনি সুইডিশ কেমিক্যাল সোসাইটি ও আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য। বর্তমানে তিনি সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দুরারোগ্য রোগের অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান পিটিসি থেরাপিউটিকস এ। বিজ্ঞান নিয়ে ও বাংলাদেশের তরুণদের জন্য বাংলায় নিয়মিত লেখালেখি করেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে এমন একজন বিজ্ঞানীর গল্প এ দেশের তরুণদের অনুপ্রেরণা দেয় সবসময়ই। সম্প্রতি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। তার শৈশব, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন এবং এ দেশের তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী কিছু বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-আজমাঈন রিয়াদ

প্রশ্ন : প্রথমেই আপনার ছেলেবেলা এবং বাংলাদেশে আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ড. রউফুল আলম : আমার শৈশব কেটেছে চাঁদপুরে। তারপর আমার বাবা চাকরি থেকে রিজাইন দেয়, এবং রিজাইন দেওয়ার কারণে আমরা গ্রামে চলে আসি। আমি ছিলাম হাজীগঞ্জ পাইলট স্কুলে, কিন্তু ওখানে আর পড়া হয়নি। সিক্সের মাঝামাঝি সময়ে চলে এসেছি। আমার পুরো প্রাইমারি স্কুলটা কেটেছে চাঁদপুরে, হাজীগঞ্জেই। ক্লাস সিক্সের মাঝামাঝি থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত গ্রামেই ছিলাম এবং গ্রামের স্কুলেই এসএসসি পাস করি।

তারপর, আমি নটর ডেম কলেজে চান্স পাই। কিন্তু নটর ডেমে আমি পড়তে পারিনি, কারণ ঢাকায় আমার থাকার জায়গা ছিল না। যার কারণে, বাবার পরামর্শ অনুযায়ী 'কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া কলেজ'-এ ভর্তি হই। কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে আমি চান্স পাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ক' ইউনিটে। কিন্তু, ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। ওয়েটিং-এ আমি সাবজেক্ট পাই পরিসংখ্যান, জিওগ্রাফি এবং সাইকোলজি। ওইসময় আমি আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিটলিস্টে ছিলাম 'ক' ইউনিটে। পরে ওখানে আমি 'ক' ইউনিটে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হই।

প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসির যাত্রাটুকু সংক্ষেপে শুনতে চাই।

ড. রউফুল আলম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং মাস্টার্স করি। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে আমার সিজিপিএ ছিল ৩.৪৭। এটা অতটা এক্সপেক্টেড বা আশানুরূপ না হওয়ায় আমি একটু সিরিয়াসলি পড়াশোনা করলাম। মাস্টার্সে আমি ফার্স্ট হলাম ৩.৭১ পেয়ে। তারপরে আমি মোটামুটি যতগুলো স্কলারশিপ অফার করে, সবগুলোতেই অ্যাপস্নাই করি। কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, গড়হড়নঁশধমধশঁংযড় স্কলারশিপ মোটামুটি সবটাতেই অ্যাপস্নাই করি। আনফর্চুনেটলি, আমি আসলে স্কলারশিপগুলো পাই নাই। গড়হড়নঁশধমধশঁংযড় ছাড়া অন্যগুলোতে সাধারণত খুব কম সংখ্যক স্টুডেন্ট অ্যালাউ করে। আরেকটা ফ্যাক্ট হলো, অনেক স্কলারশিপই কিন্তু আসলে যারা ফ্রেশলি পাস করে বের হয় তাদের জন্য না। এগুলো তাদের দেওয়া হয় ইউনিভার্সিটিতে যারা অলরেডি শিক্ষকতা করছে, তাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য বা রিসার্চ ইনস্টিটিউটগুলোতে যারা সায়েন্টিস্ট হিসেবে ঢোকে তাদেরই ওই অপুরচুনিটিটা দেওয়া হয়, তারা যেন ট্রেনিংটা নিয়ে আসতে পারে। ফ্রেশ যারা বের হয়, তাদের এই সুযোগটা থাকে না। বাট একটা লাকি বিষয় হলো, ওই টাইমটাতে, ২০০৭-৮ এ আমরা ইন্টারনেট জিনিসটাকে ইউটিলাইজ করেছি সাইবারক্যাফে থেকে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থাটা ওই সময় তেমন একটা ছিল না। ২০০৮ সালের দিকে গিয়ে ফেসবুক বাংলাদেশে আলোচিত হচ্ছিল, একেবারে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে। আমার মনে আছে, প্রথম আলোতে ফিচার ও হয়েছিল যাদের যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, যারা শো বিজ এরিয়ায় কাজ করত, সেলিব্রিটি। সাধারণ মানুষের তখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল না প্রায়। সেই সময় এই সুযোগটা আমি নিলাম। সুইডেনসহ নরওয়ে, জার্মানি ইত্যাদি অনেক দেশে ফ্রি এডুকেশন এখনো আছে। তখন আমি সুইডেনে অ্যাপস্নাই করি, 'স্টকহোম ইউনিভার্সিটি' ও 'উপসালা ইউনিভার্সিটি' দুটোতে আমি কেমিস্ট্রিতে অ্যাপস্নাই করি। কারণ, ওই দুটো ইউনিভার্সিটি কেমিস্ট্রিতে হিস্ট্রিকালি রিচ। পরে স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে আমি অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হই ২০০৯-এ।

প্রশ্ন : স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ ছিল?

ড. রউফুল আলম : হঁ্যা, পার্শিয়াল স্কলারশিপ, টিউশন ফি এক টাকাও না, জাস্ট থাকার খরচটুকু। পরে আমি স্টকহোম যাওয়ার এক বছরের মাথায় ইরাসমাস স্কলারশিপ পাই বি ক্যাটাগরিতে। ইরাসমাস মূলত দুটো ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ দেয়। একটা হলো অ ক্যাটাগরি, যারা এখান থেকে অ্যাপস্নাই করে স্কলারশিপ পায় তাদের জন্য, আর ই ক্যাটাগরি হলো যারা অলরেডি ওখানে আছে, ওখান থেকে যারা অ্যাপস্নাই করে, তাদের জন্য। ওখানে অ্যামাউন্টেও একটু পার্থক্য থাকে, যারা এখান থেকে নিয়ে যায় তাদের ১০০০ ইউরো প্রতি মাসে, আর যারা ওখানে থাকে, তারা ৫০০ ইউরো প্রতি মাসে। কিন্তু আমি ইরাসমাস স্কলারশিপ এক্সেপ্ট করিনি কারণ, ইরাসমাস স্কলারশিপ এক্সেপ্ট করলে তখন আমাকে আরও দুই বছর ওখানে কাটাতে হতো। কিন্তু, আমি অলরেডি এক বছর স্পেন্ড করেছি এবং অনেক কনফিডেন্ট ছিলাম যে আমি যতটুকু কাজ করেছি, আমি পিএইচডিতে এনরলড হয়ে যাবো। আর সেটা হয়ে গেলে তো স্কলারশিপের টাকা প্রতি মাসে আসবেই। আমি পরে ওখানে যে গ্রম্নপে মাস্টার্স করছিলাম, ওই গ্রম্নপেই পিএইচডি শুরু করি।

প্রশ্ন : আপনার পিএইচডির বিষয়বস্তু কী ছিল?

ড. রউফুল আলম : আমার পিএইচডিতে আমি ঞৎধহংরঃরড়হ গবঃধষ ঈধঃধষুংঃং এর ওপর কাজ করেছি।

প্রশ্ন : আপনার বৈজ্ঞানিক গবেষণাধর্মী প্রকাশনাগুলো সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

ড. রউফুল আলম : সায়েন্টিস্ট হিসেবে যারা কাজ করে তারা তাদের ফিল্ডে যে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল আছে, সেখানে পাবলিশ করে। প্রত্যেকটা ফিল্ডেই অনেক ভালো ভালো ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল আছে এবং সেইগুলোর মানেরও একটা ক্রম আছে, যেটা আমরা ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর দিয়ে যাচাই করি। আমাদের ফিল্ডে যেমন- ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ :যব ধসবৎরপধহ পযবসরপধষ ংড়পরবঃু যেটা আমেরিকার ক্যামিকাল সোসাইটিতে পাবলিশ হয়, যাকে সংক্ষেপে ঔঅঈঝ বলা হয়। এটা খুবই প্রেস্টিজিয়াস একটা জার্নাল। তারপর জার্মানি থেকে পাবলিশ হয়, অহমবধিহফঃব ঈযবসর আরেকটা প্রেস্টিজিয়াস জার্নাল। এগুলোতে যদি কারও পাবলিশিং হয়, তাহলে সাধারণত ধরা হয়, সে তার ফিল্ডে আসলে খুব ভালো কাজ করেছে বা কোনো ফান্ডামেন্টাল বা ব্রেকথ্রম্ন কাজ করেছে এবং তার থিসিসটাকে খুব ভ্যালুয়েবল ধরা হয়। ওই হিসেবে বিবেচনা করলে আমার পিএইচডির সময় আমার ঔঅঈঝ পাবলিকেশন ছিল দুটো। একটাতে আমি ফার্স্ট অঁঃযড়ৎ ছিলাম, আরেকটাতে সেকেন্ড অঁঃযড়ৎ ছিলাম। অহমবধিহফঃব পাবলিকেশন ছিল দুটো। এটারও একটাতে আমি ফার্স্ট অঁঃযড়ৎ ছিলাম, আরেকটাতে সেকেন্ড অঁঃযড়ৎ ছিলাম। তারপর বাকি যে পাবলিকেশন গুলো ছিলো সেগুলো সবই আমেরিকান ক্যামিকাল সোসাইটির জার্নালে ছিলো যার ফলে আমার পুরো থিসিসটা ওখানে আমার ডিপার্টমেন্টে খুবই ভ্যালু পায় এবং এটা যে খুবই হাইলি ভ্যালুড থিসিস ছিলো সেটা আমি অন্যভাবে প্রমান করেছি। সেটা হলো, আমি সুইডিশ ক্যামিকাল সোসাইটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল এর জন্য বড় অঙ্কের একটা স্কলারশিপ পাই, যেটা বাংলাদেশি অর্থমূল্যে তখন ছিলো ৪০ লাখ টাকা প্রায়। পরে ওটা দিয়ে আমি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়াতে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চের জন্য যাই ২০১৬ তে।

প্রশ্নঃ- স্যার, বাংলায় আপনার যে বইগুলোর নাম যদি পাঠকের বলতেন

ড. রউফুল আলম:- আমি আমেরিকা যাওয়ার পর, 'একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়' এবং 'বাংলাদেশের 'স্বপ্নচোখ' লিখেছি। গতবছর লিখেছি একটা মোটিভেশনাল টাইপের বই তরুণদের জন্য, 'সফল মন্ত্র'।

প্রশ্ন:- আপনার বর্তমান পেশাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই

ড.রউফুল আলম:- ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়াতে আমি দুই বছরের মতো কাজ করি।ওখানে কাজ করার পর আমি ২০১৮ সালে ড্রাগ ইন্ড্রাস্ট্রিতে ঢুকে যাই। ওখানেই আমি এখন ড্রাগ ডিস্কভারিতে সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছি। আমি মেডিসিনাল কেমিস্ট বা অর্গানিক কেমিস্ট। আমি পার্সোনালি, অর্গানিক মলিকিউল বা ড্রাগলাইক মলিকিউল ডিজাইন করি, সিন্থেসিস করি এবং আমাদের আরো অন্যান্য টিম আছে, যারা ফার্মাকোলজিতে বা অন্যান্য এরিয়াতে কাজ করে, তারা এগুলোকে আরো স্টাডি করে। তারপর, এরকম কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার কম্পাউন্ড এভাবে স্ক্রিনিং করার পরে আমরা একটা বা দুইটা কম্পাউন্ড ফাইনালি সিলেক্ট করি।

*এবার আপনার সমসাময়িক কিছু লিখা থেকে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

প্রশ্ন:- আপনি বলেছেন, 'সাইন্টিফিক এরিয়াতে এটা আরো সত্য যে একজন গ্রেইট মেন্টর আরেকজন গ্রেইট মেন্টরকে জন্ম দেয়' জ্ঞান-গবেষণার ইতিহাসে মেন্টর তৈরি করার এই যে ধারাবাহিক সংস্কৃতি, এটা আবশ্যক। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যেনো সর্বাধুনিক জ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে, ভবিষ্যতের কালকে দেখিয়ে দিতে পারে সেজন্য মেন্টর, সুপারভাইজর, শিক্ষক তৈরির ধারাবাহিক সংস্কৃতি লাগবেই।'

যেটা আমাদের সমাজে নেই। একজন গবেষক হিসেবে,আপনার মেন্টর কারা ছিলেন? বাংলাদেশের যেসব তরুণরা গবেষক হওয়ার পথে স্বপ্ন দেখে, তারা কীভাবে এই মেন্টরশিপ পাবে? এজন্য আপনার জানা অর্গানাইজড কোনো উদ্যোগ আছে কিনা?

ড. রউফুল আলম:- সায়েন্টিফিক এরিয়াতে এটা একেবারে বাস্তব। একজন মেন্টর যদি ভালো না হয়, তার কাছ থেকে আসলে ভালো কাজ শেখা সম্ভব না। নোবেল লরিয়েটদের বায়োগ্রাফি দেখলে দেখা যাবে, তাদের মেন্টররাও নোবেল লরিয়েট ছিলো অথবা নোবেল পাওয়ার মতো যোগ্য ছিলো। এটা একটা ধারাবাহিকতার মতো। আমার যিনি পিএইচডি স্কলার ছিলেন তিনিও নোবেল লরিয়েটের আন্ডারে ছিলেন। আমি যে পোস্ট ডক্টরাল করেছি, উনিও পিএইচডি করেছেন নোবেল লরিয়েটের আন্ডারে, সেই নোবেল লরিয়েটের নাম হলো এইচ সি ব্রাউন। উনি চঁৎফঁব টহরাবৎংরঃু তে কাজ করতেন পরে ১৯৭৯ সালে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে নোবেল প্রাইজ পান। তো, এটা আমাদের সায়েন্টিফিক এরিয়াতে খুব ই কমন জিনিস যে তুমি যদি গ্রেট পিপলদের আন্ডারে বা সংস্পর্শে না যাইতে পারো তাহলে গ্রেট হওয়া টাফ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, সায়েন্টিফিক এরিয়াতে আসলে আমাদের দেশে কোন রিসার্চ নাই বললেই চলে। এক। আমাদের যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সেখানেও কাটিং এজ রিসার্চ যেটাকে বলে বা বিশ্বমানের গবেষনা আসলে নাই। বিশ্বমানের গবেষনা যদি না থাকে তাহলে ওখানে মেন্টর ও তৈরি হওয়ারও সুযোগ নেই। এটাতো একটা ধারাবাহিক প্রক্রিইয়া। তুমি যদি দেখো জার্মানি, জাপান, ইউএসএ, ইউকেতে ওরা আসলে হিস্ট্রিকালি কয়েকশ' বছর ধরেই এধরনের একটা সংস্কৃতি বিল্ড করেছে। একটা সময় আমাদের দেশেও এরকম গ্রেট মেন্টর কিছু ছিলো, যেরকম সত্যেন বোস, উনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ই শিক্ষক ছিলেন, সেখানেই কাজ করেছেন। পরে ইন্ডিয়াতে চলে যাওয়ার পর ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট যেভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে, আমরা তো সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশে যারা গ্রেট মেন্টর ছিলো, তাদের ধারাবাহিকতায় যে ধরণের গবেষক তৈরি হওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। কালক্রমে আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই দূষিত হয়ে গেছে।

\হবাংলাদেশের যেসব তরুণরা গবেষক হওয়ার পথে স্বপ্ন দেখে, তাদের জন্য এদেশে অর্গানাইজড কোনো উদ্যোগের সম্ভাবনা আসলে কম, বাংলাদেশের যেকেউ যদি সায়েন্টিফিক এরিয়াতে ভালো গবেষনা করতে চায়, তাকে বাংলাদেশের বাইরে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ লাগবে, রাষ্ট্র যদি চায় কিছু মেগা প্রজেক্ট নিতে পারে। যেমন,যদি বলে ৫০০০ কোটি টাকা খরচ করে এখানে ন্যাচারাল সাইন্স রিসার্চ সেন্টার তৈরি হবে, তৈরির পরের দেশের-বিদেশের ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টদের আনবো। যেমন, সৌদি আরবের রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর কথা বলা যায়, ওদের রিসার্চ সেন্টার করার টাকা ছিলো কিন্তু গবেষক নেই। সেজন্য, ওরা চায়না থেকে গবেষক নিয়ে আসলো।আমেরিকা, ইউরোপ থেকেও ওরা নিয়ে এসেছে। ওনাদের পস্ন্যান হলো এদের দিয়ে আমরা আমাদের লোকাল গবেষকদের বিল্ড করব। এরকম পস্ন্যান লাগবে বাংলাদেশে।

প্রশ্ন:- বর্তমানে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কলেজ পড়ুয়া, এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার একটা ব্যাপক আগ্রহ দেখতে পাই। এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি জেনে আজকের সাক্ষাৎকারের ইতি টানবো আমরা।

ড. রউফুল আলম:- আসলে অনেকেই এখন এগুলো নিয়ে লেখালেখি করে তো, তাই আগ্রহটা শুরু হয়েছে। এটা খুবই পজিটিভ একটা জিনিস। যেকোন একটা সংস্কৃতি যখন এস্টাবলিশড হতে যায়, এটার ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখবা একটা হিস্ট্রি থাকে। তুমি যদি স্বাধীনতার ইতিহাস পড়ো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ো, মুক্তিযুদ্ধটা হয়েছে ৭১ সালে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আগে কিন্তু একটা লম্বা পিরিয়ড আছে, যাকে আমরা বলি প্রিপারেশন চলছিলো। যেকোন সংস্কৃতি আসলে এস্টাবলিশড হতে গেলে আগে কিছু কেওটিক টাইম পার করতে হয়। ওই কেওস থেকেই ভালো কিছু তৈরি হয়। অনেকের কাছে এটা কেওস মনে হবে, কিছু খারাপ জিনিসও আছে, যেমন- ছেলে-মেয়েরা না বুঝে বাজে পাব্লিকেশন করে, লো কোয়ালিটি পাবলিশ করে। তারপরেও আমার মনে হয় এটা ফাইন যে,কেওসের মধ্যেও এটার পজিটিভিটি বেশি বলে আমি বিশ্বাস করি।কেনো না, ছেলেমেয়েদের ভেতর একটা বড় ধরণের আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং একটা ফ্লো তৈরি হয়েছে যে, বিদেশে যাওয়া, ওখানে কাজ করা এবং ওখানেও যারা কাজ করে তারা কিন্তু নানাভাবে সোসাইটিতে কন্ট্রিবিউট করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে