সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চন্দ্র বিজয়ের একাল সেকাল

এই মহাশূন্যের কোথায় কী ঘটছে তা জানতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। এখানে মূলত একটি বিষয় স্পষ্ট, মানুষ চেষ্টা করছে এই পৃথিবীর বাইরে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যায়। পৃথিবীর বাইরে বাসযোগ্য একটি গ্রহ বা চাঁদের মতো কাছের কোনো উপগ্রহতে যদি বাসস্থান গড়া যায় তাহলে পৃথিবীর জনসংখ্যা সমস্যাটির একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। বিজ্ঞান একদিন সেখানে পৌঁছাবে যেখানে চাঁদ হতে পারে এখনকার কোনো প্রতিবেশী দেশের মতো দূরত্বে! সেখানে আপনি-আমি আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যাবো! আজ হয়তো কল্পনা কিন্তু কাল তা বাস্তব।
অলোক আচার্য
  ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

চাঁদের মাটি কথাটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক রহস্যে ঘেরা উপগ্রহের এবড়ো-খেবড়ো ভূপৃষ্ঠ। সেই চাঁদের মাটিতে মানুষ নেমেছে বহু বছর আগেই। ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই। পৃথিবীর ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় সময়। সেই প্রথম মানুষের পা পৃথিবীর বাইরের কোনো উপগ্রহে পড়েছিল। প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিল। তারপর বহু বছর পেরিয়ে গেছে। আর কোনো মানুষ চাঁদে যায়নি। তারপর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চন্দ্রযান চাঁদে যায়। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যা করেছে তা রীতিমতো ইতিহাস। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাদের চন্দ্রযান-৩ নামার পরপরই সেটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৪০ দিনের যাত্রা শেষে ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতে নামে। এরপর তার পেটের ভেতর থেকে নেমে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। এটি ঘুরে ঘুরে দেখবে, তথ্য সংগ্রহ করবে এবং আরও কাজ করবে। অজেয় অঞ্চলে ভারত রীতিমতো গবেষণা চালাবে। চাঁদের মাটিতে নেমেই ছবি পাঠাতে শুরু করেছে। ৬০০ কোটি ভারতীয় টাকার চন্দ্রযান-৩ চন্দ্রযান মিশনটি গত ১৪ জুলাই লঞ্চ করে। চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২ এরপর এই মিশন নিয়ে একদিকে ছিল উৎসাহ এবং অন্যদিকে আশঙ্কা। ইসরোর আগের চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হওয়া অথবা রাশিয়ার এবারে ব্যর্থ হওয়ায় একটু যেন খটকা লেগেছিল? এই স্বপ্ন সত্যি হবে কিনা? অবশেষে ভারত পেরেছে। চাঁদে কোনো যান যাওয়ারও কয়েক দশক পেরিয়ে গেছে। বিজ্ঞান ক্রমেই অগ্রসর হয়েছে। সেই সঙ্গে পরাশক্তির দেশগুলো আরও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে প্রতিটি দেশ। এরই অংশ হিসেবে নিরন্তর গবেষণা চলছে এই মহাবিশ্বের প্রাণের খোঁজ। তবে চাঁদ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। কারণ চাঁদের পরিবেশ এবং বসবাসযোগ্যতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। ফলে কয়েকটি দেশ চাঁদ নিয়ে বা চাঁদের আবহাওয়া নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছে। মহাকাশ দখলের প্রতিযোগিতা অথবা মহাকাশে রাজত্ব করা এখন পরাশক্তি দেশগুলোর কাছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। যদিও এই প্রতিযোগিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদে পদার্পণের সময়েও ছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযুদ্ধ তুঙ্গে। ঠিক সেই সময়ে চাঁদে পৌঁছায় মার্কিন নভোচারী। এ এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস যা আজও মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করছে। কিন্তু এরপর আর কোনো মানুষ কেন চাঁদে যায়নি সেই প্রশ্নও রয়েছে। চাঁদ আয়তনে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক। এখন চাঁদ নিয়ে এত আলোচনারও একটি কারণ রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চাঁদে তাদের চন্দ্রযান পাঠিয়েছে এবং রাশিয়াও একই পথে। যদি রাশিয়ার এই অভিযান আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। ৪৭ বছর পর এসে রাশিয়ার নবচন্দ্রাভিযান শেষমেশ ব্যর্থ হয়েছে। ভারত ও রাশিয়া দুই দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করছে। এই অঞ্চল এখনো জয় করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে আসছে শতাব্দী ধরেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদের মাটিতে পা রাখার সাফল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয় অনেকটা। এরপর চাঁদ ছাড়া অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ নিয়েও বিস্তর গবেষণা চলছে। কিন্তু আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চাঁদ। আমাদের সবচেয়ে কাছের বলেই হোক আর কিছুটা উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যাবে এই আশায় হোক চাঁদ নিয়েই আগ্রহটা বেশি। অবস্থা এমন যে ভবিষ্যৎ এমন হতে পারে যে কোনো দেশ চাঁদের কত অংশে বসতি গড়ে তুলতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। আজ না হলেও একদিন তা হবে বলেই বিশ্বাস। ভারতের চন্দ্রযান এগিয়ে গেছে কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে। এর আগের চন্দ্র অভিযান রাশিয়ার মতোই ব্যর্থ হওয়ায় এবার কিছুটা ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। এই অভিযানের শেষটা অর্থাৎ চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার অংশটুকুই ছিল সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। এই সময় করতে হয় সফট ল্যান্ডিং। ভারতের এই চন্দ্রযান-৩ এর দিকে তাকিয়ে আছে ভারতসহ সারা বিশ্বই। প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই চন্দ্রযানটি এখন বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এই কাজে সফল হয়েছে। এখন ভারতের সঙ্গে যোগ হলো। চেষ্টা করছে চীন, জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এখন প্রশ্ন হলো- এই দক্ষিণ মেরুতেই কেন দুই দেশের চন্দ্রযান নামার চেষ্টা করেছে। এর কারণ হলো বিজ্ঞানীরা চাঁদের এই অংশকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তারা বিশ্বাস করে চাঁদের এই অংশে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ বরফ জমে আছে। আর বরফ মানেই কোনোদিন তরল পানির অস্তিত্ব ছিল বা পাওয়া সম্ভব হবে। আর পানি মানেই প্রাণের অস্তিত্ব বা বেঁচে থাকা বা টিকে থাকার সম্ভাবনা। এমনকি সেখানে জ্বালানি ও অক্সিজেন পাওয়াও সম্ভব হতে পারে। যদিও এসব এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে করা অনুমান। কিন্তু সেখানে যেতে না পারলে তো সঠিক তথ্যই পাওয়া যাবে না। আর পৃথিবীর জন্য এটা পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। মূলত মহাকাশ ও মহাবিশ্বের মহারহস্য নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। এই মহাশূন্যের কোথায় কি ঘটছে তা জানতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। এখানে মূলত একটি বিষয় স্পষ্ট, মানুষ চেষ্টা করছে এই পৃথিবীর বাইরে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যায়। পৃথিবীর বাইরে বাসযোগ্য একটি গ্রহ বা চাঁদের মতো কাছের কোনো উপগ্রহতে যদি বাসস্থান গড়া যায় তাহলে পৃথিবীর জনসংখ্যা সমস্যাটির একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। বিজ্ঞান একদিন সেখানে পৌঁছাবে যেখানে চাঁদ হতে পারে এখনকার কোনো প্রতিবেশী দেশের মতো দূরত্বে! সেখানে আপনি-আমি আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যাবো! আজ হয়তো কল্পনা কিন্তু কাল তা বাস্তব। অন্তত অতীত সেটাই বলে। বিজ্ঞানীদের এমনটাই ধারণা। মানুষ ছুটে চলেছে বাসযোগ্য গ্রহ-উপগ্রহের খোঁজে। মানুষ যখন প্রথম অ্যাপোলো-১১ তে চড়ে চাঁদের বুকে পা রাখল সেদিন থেকেই পৃথিবীর বাইরে মানুষের পদচারণার নবযাত্রা শুরু হয়েছিল। আজও চাঁদ নিয়ে মানুষ নিরন্তর গবেষণা চলছে। পৃথিবীর এই একমাত্র উপগ্রহের নানা প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা চাঁদের পাথর, মাটি সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছেন। কোথাও পানির অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানতে চেষ্টা করছেন। একদিন কল্পনার কবিতার চাঁদ হয়তো মানুষের বসবাসের উপযুক্ত হবে। চাঁদের বুড়ির বদলে সেখানে থাকবে বর্তমান পৃথিবীর মানুষ। একদিন চাঁদ হবে আমাদের প্রতিবেশী

কোনো বাড়ি!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে