সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক

টি এইচ মাহির
  ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

পস্নাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে পরিবেশদূষণ বেড়েই চলছে। দূষণ ঠেকাতে পস্নাস্টিকের বিকল্প হতে পারে 'বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক'। সাধারণত পস্নাস্টিক সহজে পচে না; কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে পচে যায়। বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক বা জীবাণুবিয়োজ্য পস্নাস্টিক সাধারণত নবায়নযোগ্য কাঁচামাল, অণুজীব, পেট্রোকেমিক্যাল এই তিনটির সমন্বয়ে উৎপাদিত হয়। অন্যান্য পস্নাস্টিকের তুলনায় বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক পরিবেশবান্ধব। নবায়নযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি হওয়ায় এটি সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বিভিন্ন অণুজীব এবং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পরিবেশে বিয়োজিত হয় এই পস্নাস্টিক। জৈবিক পরিবেশে মিশে যাওয়ায় এটি পরিবেশবান্ধব। তবে বায়োপস্নাস্টিক এবং বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক এক নয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পস্নাস্টিক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রায় সবখানে আমরা এখন পস্নাস্টিক ব্যবহার করি; কিন্তু পস্নাস্টিক ব্যবহারের পর তা মাটিতে ফেলে দিলে পচে না। যার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হায়। তাছাড়া দিন দিন সমুদ্রের জৈবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে পস্নাস্টিকের কারণে। কিন্তু জৈব পস্নাস্টিক নবায়নযোগ্য কাঁচামাল, সেলুলেজ, স্টার্চ ইত্যাদি জৈব উপাদান থেকে তৈরি হয় বলে এই পস্নাস্টিক সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। উদ্ভিজ উপাদান থেকে তৈরি হয় বলে বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক মাটির উর্বরতা আরও বৃদ্ধি করে।

বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক থেকে তৈরি করা হয় ১) জৈব-ভিত্তিক পদার্থের মিশ্রণ, যেমন স্টার্চ এবং সেলুলেজ; ২) বায়োডিগ্রেডেবল সিন্থেটিক পলিয়েস্টার যা জীবাশ্মভিত্তিক বা ৩) জৈবভিত্তিক তেল, যেমন- আখ, যা সবসময় বায়োডিগ্রেডেবল হয় না। কাঁচামালগুলো সংগ্রহ করা হয় যেমন কমলার খোসা, ভুট্টার তেল, সুইচগ্রাস, সয়াবিন, অণুজীব ও স্টার্চ থেকে। তাছাড়া বাংলাদেশে পাট থেকে বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে পৃথিবীতে উৎপাদিত বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিকের মধ্যে আছে পলিবিউটাইরেট এডিপেট টেরেফথালেট (পিবিএটি), পলিবিউটিলিন সাকিনেট (পিবিএস), পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিওএইচ/পিভিএ) এবং পলিক্যাপ্রোল্যাকটোন (পিসিএল)। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ জৈব পস্নাস্টিক তৈরি হয়, তার বেশির ভাগই ফসলের উপজাত অংশ দিয়ে তৈরি করা হয়। ১৮৬২ থেকে চলা এই বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক দিন দিন উন্নত হচ্ছে। চীনে এই পস্নাস্টিক ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগেই। পস্নাস্টিকের দূষণের ফলে দিন দিন পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় মানুষ এখন পস্নাস্টিকের

বিকল্প খুঁজছে।

বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিকের উপকারিতার সঙ্গে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রচলিত পস্নাস্টিকের তুলনায় আরও ব্যয়বহুল হতে পারে এই পস্নাস্টিক। তাই সাশ্রয়ী নাও হতে পারে এটি। সব বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক সমানভাবে তৈরি হয় না। কিছু বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিক ভেঙে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অবস্থার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন- উচ্চ তাপমাত্রা বা নির্দিষ্ট ধরনের অণুজীব। এগুলো প্রথাগত পলিমার যেমন- চঊ (পলিথিলিন), চচ (পলিপ্রোপিলিন) এবং চঝ (পলিস্টাইরিন) অতিরিক্ত উপাদান (ধাতু লবণ)সহ তৈরি করা হয়। তবে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা হয়তো আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বায়োডিগ্রেডেবল পস্নাস্টিককে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে