শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
যে কাউকে 'তারকা' উপাধি

কী বললেন সত্যিকারের তারকারা

ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ১২ মে ২০২২, ০০:০০
ফরিদা আক্তার ববিতা

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।' কেন তিনি সবচেয়ে বড় তারকা? জবাবে তিনি বলেন, 'মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনও আমি দেখেছি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের মতো এত বড় আন্দোলন আমি কোথাও দেখিনি।' এর মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের মধ্যে বড় তারকা, মাঝারি তারকা ও ছোট তারকা এবং তারকা নন এমন গ্রহাণু, উল্কাপিন্ড, ধূমকেতু জাতীয় তারকার অস্তিত্বও স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে 'তারকা' কী- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নানা জন নানা কথাই বলেন। তবে সহজ কথায় 'তারকা' হতে হলে বড় কিছু একটা করে দেখাতেই হবে; নয়তো তাকে তারকা বলা যাবে না। যে তারকার আলো অসীম দূর পর্যন্ত গিয়ে আলোকিত হয়। তবে শোবিজে বড় তারকা, ছোট তারকা এসব শনাক্তে না গিয়ে আজকে এসেই মাত্র শুটিংয়ে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে সবাইকেই তারকা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে শোবিজের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অনেকে এ নিয়ে বিব্রতবোধও করেছেন। তবে বিনোদন জগতে 'তারকা' মূল্য এতটাই সস্তায় নামিয়ে আনা হয়েছে যে, আজকেই যিনি প্রথম কোনো সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তার মহরতে অংশগ্রহণ করলেন তাকেও 'তারকা' বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। তুলনা করা হচ্ছে মহানায়ক উত্তম কুমার, দিলীপ কুমার, মধুবালা, সুচিত্রা সেন বা নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে। এরকমভাবে পরিবেশনা না করলে বিনোদনটা নাকি ভালোভাবে জমে না। এভাবে অতিরঞ্জিত করলেই কি কেউ স্টার বা তারকা হয়ে যাবেন? এ প্রসঙ্গে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, 'আমি কোনো স্টার নই, আমি বিনোদন করি, বিনোদন; আমি যে সব চলচ্চিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছি তার সবগুলোই ফ্লপ, সুপার-ডুপার ফ্লপ। একটাও ব্যবসা সফল হয়নি। নির্মাতাদের সবাই আর্থিকভাবে লোকশান গুণেছেন।'

রাইসুল ইসলাম আসাদের এই পরিহাস থেকেও বোঝা যায় শোবিজে তারাই 'তারকা' যাদের অভিনীত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে সুপার-ডুপার ব্যবসাসফল হয়েছে। সেই সিনেমা হয়তো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে কোনো একটি বিভাগেও পুরস্কার পাওয়া দূরের কথা, সাধারণ স্তরের কোনো পুরস্কারও মেলে না। কিন্তু একটি ফুটবল টিম বা ক্রিকেট টিম যদি সুপার-ডুপার ক্রীড়াশৈলী দেখাতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত দেখাতে পারে- তার পুরস্কার বা ট্রফি জুটবেই। না হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে কারো না কারো পুরস্কার বা স্বীকৃতি জুটবে। না জুটলেও ক্ষতি নেই, দর্শক তাদের ক্রীড়ায় মুগ্ধ হলেও কারো না কারো তারকামূল্য থাকবেই। কিন্তু চলচ্চিত্রে বা নাটকে কেন তারকা বিচারের কোনো মানদন্ড থাকবে না?

অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই আছেন, যারা দু'একটি কাজ করে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছেন। তারপরও দেখা যায় তাদের এই স্বল্পকালীন উপস্থিতি দিয়েই তারকা হয়ে বিনোদন জগৎ আলো করে বসে আছেন। এ বিষয়ে দেশবরেণ্য অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা বলেন, 'এইটা তো আমরা করিনি। এইটা আপনারাই করেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একেকজনকে রাতারাতি সুপার স্টার, মেগা স্টার বানিয়ে দিয়েছেন এবং বলছেনও। এ জন্য তো ওদেরও কিছু করণীয় নেই। তবে এক্ষেত্রে একজন তারকা হওয়ার জন্য কী রকম মানদন্ড থাকা উচিত যে প্রশ্ন করলে আমি বলবো, এজন্য ভালো অভিনয়ের পাশাপাশি গুণী পরিচালকের সঙ্গে ভালো কাজ করতে পারলে এবং তাতে ধারাবাহিকতা থাকলে সে শিল্পীও সে পর্যায়ের হতে পারবে। কিন্তু সেটা বিবেচনা না করে একজন রাজ্জাক সাহেব, আলমগীর সাহেব, ববিতা ম্যাডাম, শাবানা ম্যাডাম কিন্তু একদিনেই এত বড় হননি। এজন্য তাদের দীর্ঘসময় চড়াই-উতরাই পার করে আসতে হয়েছে। অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে।'

বিশিষ্ট অ্যাওয়ার্ড কন্যা ফরিদা আক্তার ববিতা এখানে তারকা হওয়ার জন্য ফুটবল ক্রিকেটের কোচের মতোই শোবিজেও নির্মাতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যেটা অভিনেতা রাইসুল ইসলামের উক্তিতেও আছে। নির্মাতার গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি কিছুই করিনি; সব কৃতিত্ব আমার নির্মাতার। তিনি যেভাবে চেয়েছেন আমি সেভাবেই অভিনয় করে দেখিয়েছি।' কিন্তু বাস্তবে শোবিজে নির্মাতাদের তারকা বলা হয় না। সাধারণ মানুষের অধিকাংশই অনেক খ্যাতিমান নির্মাতার নামও জানেন না। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরের নাম এ দেশের মানুষ কয়জনই বা জানেন? কিন্তু বুলবুল আহমেদের নাম কে না জানেন! তারপরও বুলবুল আহমেদকে সাধারণ দর্শক মনে হয় ভালো অভিনেতা মনে করলেও কীসের অভাবে যেন তাকে তেমন 'তারকা' মনে করতেন না। সেজন্যই কি আলমগীর কবির বুলবুল আহমেদকে দিয়ে 'মহানায়ক' বানিয়েছিলেন? যে ছবিটির প্রযোজনা করেছিলেন বুলবুল আহমেদ স্বয়ং? এক্ষেত্রে বড় তারকা, ছোট তারকা বা মাঝারি তারকার কোনো ব্যাখ্যায় না গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মালেক আফসারী সুপারস্টার সম্পর্কে বলেছেন, 'সুপারস্টার, সুপারস্টারই। তার কোনো কিছুতেই পরাজয় নেই। তিনি সবসময়ই বিজয়ীর বেশে পর্দার রঙ্গমঞ্চ ছাড়েন। একজন সুপারস্টারকে সবাই পরিচালনা করতে পারেন না। কারণ, গল্পটি সুপারস্টারের মতো করেই হবে। সুপারস্টার কখনো জাতীয় পুরস্কারের কথাও ভাবতে পারেন না। তাহলে তাকে গল্পের কাটাছেঁড়া মানতে হবে। আসলে একজন সুপারস্টারের গল্প সব নির্মাতারা বুঝতেও পারেন না। সুপারস্টারের নায়িকা কখনো ধর্ষিতা হতে পারবে না। যেমন 'মনের মতো মানুষ পাইলাম না'- এটিতে নায়িকা বুবলী ধর্ষণের শিকার হয়। এখানেই সুপারস্টারের পরাজয়। ফলে সেক্ষেত্রে এমন নায়ক 'সুপারস্টার' হতে পারে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে