শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তানিয়ার গৌরবময় অধ্যায়

তানিয়া আহমেদ সর্বশেষ প্রয়াত সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় হেনোলাক্সের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করেন। তানিয়া জানান, শিগগিরই নতুন আরেকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে তার কাজ করার কথা রয়েছে। তবে এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। আবার তানিয়া বর্তমানে নারীদের নিয়ে জিটিভিতে প্রচার চলতি বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান আজকের অনন্যার উপস্থাপনা করছেন নিয়মিত। আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত থাকবেন এর শুটিংয়ে। এরপর আগামী ২০ জুন থেকে তিনি সালাহ উদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় একটি ঈদ নাটকের শুটিং করবেন। আগামী ঈদের পর আরও একটি বড় প্রজেক্টের কাজ শুরু করবেন বলে জানান তানিয়া...
ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৯ জুন ২০২২, ০০:০০

তখন সবেমাত্র বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে যাত্রা করেছিলেন শোবিজ জগতে। দেখতে দেখতে অনেক পেরিয়ে গেছে। সেই যে আজ থেকে তিন দশক আগে অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেনের পরিচালনায় 'ডায়মন্ড ব্র্যান্ড' নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে লাইট-ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তানিয়া আহমেদ তা আজও নিস্প্রভ আছে। সেই পথচলা এগিয়ে নিয়ে গেছেন শোবিজের আরও নানা শাখায়। বিজ্ঞাপনের সেই টিভি স্ক্রিনে আসার পর থেকেই বাজিমাত; ড্রয়িংরুম দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে ফেললেন তার জাদুকরী কেশবরণ রূপ দিয়ে। এই রূপের জাদুতে ধরাশায়ী হলো একে একে বড় বড় প্রোডাক্টগুলো। অথচ কোনো প্রোডাক্টের মডেল হবেন- এটা নাকি তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তার নাকি ইচ্ছেই ছিল না এ মাধ্যমে কাজ করার। কিন্তু সাফল্য যখন হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেয় তখন তো সেটা প্রাণপণ মুঠোবন্দি করে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তানিয়া আহমেদও তাই করলেন। এরপর একের পর এক বিজ্ঞাপনে মডেলিং করতে লাগলেন তানিয়া আহমেদ। সেই থেকেই তার চাহিদা বিস্তৃত হলো ছোটপর্দার নাটকে।

১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো 'সম্পর্ক' নামের একটি টিভি নাটকে দেখা দিলেন। এটি রচনা করেছিলেন অরুন চৌধুরী এবং নির্মাণ করেছিলেন ফারিয়া হোসেন। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন সামসুর রেজা বাদল। এ নাটকেই তপন চৌধুরী ও মিতালী মুখার্জির 'তুমি আমার প্রথম সকাল' গানটি ব্যবহৃত হয়। এরপর তানিয়া বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে প্রশংসার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মডেলিং জগতের একজন পথিকৃৎ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত তানিয়া আহমেদ।

সুদর্শনী এই গস্ন্যামার গার্ল শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি; নির্মাতা হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এ লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো এস আই টুটুল, নিলয়, রেশাদ ও জুয়েলের চারটি গানের মিউজিক ভিডিও নির্দেশনা দেন। এই কাজে তাকে সহায়তা দেন তার ছোটভাই রানা। যা ২০০৪ সালে চ্যানেল আই'তে প্রচারিত হয়। এ সময়ে তিনি তিনটি গানের ভিডিওর অ্যালবাম পরিচালনা করেন। অ্যালবামগুলো হলো মুহূর্ত, ময়নিস ও আর কত কাঁদাবে। ২০০৪ সালে আসিফ আকবরের গাওয়া 'উড়ো মেঘ' গানের ভিডিও নির্দেশনা দেন। এই ভিডিওতে চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজসহ বেশ কয়েকজন নবীন শিল্পী কাজ করেন। এরপর 'আমার জোছনা দিনে' নামের নাটকটি প্রথম নির্দেশনা দেন তিনি। এতে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, জিতু আহসান ও শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নী। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা 'ভালোবাসা এমনই হয়'। বিশেষত্বের দিক থেকে ২০০৪ সাল হচ্ছে তানিয়া আহমেদের জন্য পূর্ণ বিকশিত হওয়ার সময়। এই বছরেই তিনি বেশ কিছু সৃজনশীল কাজ করেছেন; পাশাপাশি এ বছরেই তিনি চলচ্চিত্রের অভিনয়েও পদার্পণ করেন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় 'শ্যামল ছায়া'র নামে মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পলায়নরত এক নৌকায় নারী ডাক্তার রাত্রি চরিত্রে তার অভিনয় বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বেও সামাদৃত হয়। ২০১৪ সালে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন। শুরুতে চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হয় গুড মর্নিং লন্ডন। পরে তা 'ভালোবাসা এমনই হয়' নামে পরিবর্তন করা হয়। এটি বাবা ও মেয়ের দ্বন্দ্বের গল্প। তানিয়া ২০১৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওন নির্মিত 'কৃষ্ণপক্ষ' চলচ্চিত্রে জেবা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

তানিয়া আহমেদ সর্বশেষ প্রয়াত সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় হেনোলাক্সের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন। তানিয়া জানান, শিগগিরই নতুন আরেকটি বিজ্ঞাপনে তার কাজ করার কথা রয়েছে। তবে এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। আবার তানিয়া বর্তমানে নারীদের নিয়ে জিটিভিতে প্রচার চলতি বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান আজকের অনন্যার উপস্থাপনা করছেন নিয়মিত। আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত থাকবেন এর শুটিংয়ে। এরপর আগামী ২০ জুন থেকে তিনি সালাহ উদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় একটি ঈদ নাটকের শুটিং করবেন। আগামী ঈদের পর আরও একটি বড় প্রজেক্টের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তানিয়া।

তানিয়া আহমেদ বলেন, 'দীর্ঘ তিন দশকের পথচলায় আমি আমার জীবনে কিছু খাঁটি মানুষ যেমন পেয়েছি পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি। এখনো যখন অনেক ভক্ত ও দর্শকের সঙ্গে দেখা হয়, তখন তারা আমাকে যে সম্মান করেন তা কোনো কিছুর বিনিময়েই অর্জন করা যাবে না। অনেকের হয়তো কোটি কোটি টাকা থাকে কিন্তু তিনি কী সবার ভালোবাসা ও সম্মান নিয়ে এই পৃথিবী ছাড়তে পারেন? আমি কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, সম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। এই সম্মান-ভালোবাসা নিয়েই চলে যেতে চাই।'

এরই মধ্যে একদিকে অভিনয়ের তিন দশক পূর্তি উদযাপন আছে অন্যদিকে ১৯৭২ সালের ৫ জুন জন্ম নেয়া জীবনের ৫০ বসন্ত পূর্তি উপলক্ষে চলতি মাসের পাঁচ তারিখে বরাবরের থেকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নিজের জন্মদিনটিও মনে রাখার মতো উদ্‌যাপন করে নিয়েছেন বহুমাত্রিক এই তারকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে