শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেন রূপকথার সেই পরী

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পারিবারিক নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। চলচ্চিত্র মহলে যিনি পরীমনি বলে একনামে পরিচিত। ছোটবেলায় আর দশজন গ্রামীণ আটপৌরে খুবই সহজ সরল কোমল মনের মেয়েই ছিলেন পরী। সাতক্ষীরায় সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম নেয়া এই নায়িকার জীবনী যেন রূপকথার সেই পরীর গল্পই মনে করিয়ে দেয়। চাঁদের মতো রূপ নিয়ে জন্ম তার। পরী যখন তিন বছরের, তখনই মা কী এক অজানা কারণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাবা ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। পুলিশের চাকরি- আজ এখানে তো কাল অন্যখানে। শিশু পরী লালিত-পালিত হবে কোথায়? নানা-নানির কোলেই আশ্রয় হয় অবুঝ পরীর। কোনো এক সময়ে বাবাও চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে একটা ব্যবসা শুরু করেন। সেই বাবাও কোনো অজ্ঞাত বিরোধের সূত্র ধরে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। নিমেষেই অসহায় অনাথ হয়ে পড়েন পরীমনি।

নানা-নানির কোলই হয়ে ওঠে তার পরম ভরসার জায়গা। পরী বড় হতে থাকেন নানা শামসুল হক গাজীর কাছে। নানা-নানি দুজনেই ছিলেন স্কুলের শিক্ষক। পরীর পড়াশোনার সব ভার নানাই নেন। স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসে বুলবুল ললিতকলায় নাচ শেখেন। জানা যায়, ছোট বয়স থেকেই পরী ছিল দুরন্ত প্রকৃতির। প্রকৃতির মতোই উচ্ছল ছিল পরী। অপরূপা হওয়ায় মেয়েটিও শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন একদিন তিনিও ঢাকাই সিনেমার নায়িকা হবেন। যদিও বাবার নির্মম মৃতু্যর ঘটনা তাকে পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্নও দেখিয়েছিল। আবার নায়িকা হতে হলে নাচও জানতে হয়- তাই বুলবুল ললিতকলায় ভর্তি হন। এরপর কর্মজীবনের শুরু হয় মডেলিং দিয়ে। নাচও চালিয়ে যান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। টিভিতে সিঙ্গেল ও ধারাবাহিক নাটক করেন। প্রথম নাটকেই ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান পরী! তবে শৈশব থেকে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার যে স্বপ্ন মনের মুকুরে পুষে রেখেছিলেন সেটাও ভুলেননি। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অভিষেকের আগেই ২৩টি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে হইচই ফেলে দেন পরী। মিডিয়ায়ও নানা খবরের শিরোনামে আলোচিত হয়ে ওঠেন।

এবারও বছরের শুরুতে ফের আলোচনায় পরী। যদিও বছরের শেষটাও টানা হয়েছে তাকে নিয়েই। 'গুণিন' সিনেমার সুবাদে চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে তার প্রেম-বিয়ের আলোচনাও ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে তুমুল হট কেক। সিনেমার চেয়ে বাইরেই একের পর এক আলোচনার জন্ম দেন পরী। যদিও কোনো সিনেমাই ব্যবসা সফল হয়নি। চলচ্চিত্রের শুটিং থেকে শুরু করে মামলা পর্যন্ত পরী যখন শুধুই আলোচনায়, তখনই তার মা হওয়ার খবরটি প্রকাশ্যে আসে। এর আগে গুলশানের ক্লাবে মারামারিকান্ড, বাসায়র্ যাবের তলস্নাশি, জেলজামিন প্রভৃতি তো আছেই। শোবিজে এখন এটা যেন অঘোষিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে- পরী মানেই আলোচনার হট কেক। পরীমনি-রাজ ইসু্য এখন 'টক অব দ্য ঢালিউড'।

এবারেও বছরের শেষ ও শুরু হয় যে আলোচনা দিয়ে সেটা তাদের বিয়ে ভাঙা-গড়ার দোলাচল নিয়ে। রুদ্ধশ্বাস এই আলোচনার মধ্যে সবাই অধীর হয়ে আছেন কী হয় বা না হয় এ নিয়ে। নতুন হলেও সংসারটিকে সুখের হিসেবেই মনে করেছিল দেশের শোবিজ অঙ্গন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশ্যে আসা সম্পর্কটি নিমেষেই আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফেসবুকে রাজ সম্পর্কে পরীর একের পর এক বহু ভালোবাসার ইমোজির নানা স্ট্যাটাস সব সময়েই আলোচনায়। বছর না ঘুরতেই পরীর ঘরে 'রাজ্য' আসায় সবাই নিশ্চিত হন সুখেই দিন পার করছেন তারা। এমন সুন্দর ফুটফুটে 'রাজ্য'র জন্ম দেয়াতে রাজের প্রতি পরীর ভালোবাসাও অনেক গভীর বলে মনে করা হচ্ছিল। এই সম্পর্কটিই সহসা পৌরাণিক কাহিনীর 'জতুগৃহ'র মতোই হয়ে ওঠে। কী অলক্ষুণে হাতের ছোঁয়ায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তাদের সাজানো সংসার? অপেক্ষা শুধু এখন শেষ পরিণতির।

বলা হয়, 'শেষ ভালো যার সব ভালো তার।' ২০২২ সালটি ছিল শরিফুল রাজের জন্য সোনায় মোড়ানো সাফল্যের বছর। বছর শেষেই এমন ধাক্কা খাবেন সেটা শরিফুল ঘুণাক্ষরেও টের পাননি! জানা যায়, কয়েক মাস ধরেই টানাপড়েনে ছিল তাদের সম্পর্কটি। আর এখনকার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আগামী উজ্জ্বল ভবিষ্যতটিও যেন হুমকির মুখে পড়ে গেল রাজের।

পরী অনেক আবেগপ্রবণ- একথা শোবিজের প্রায় সবাই জানেন। পরী নিজেও সবসময়ে তা-ই বলেন। এই কারণেও অনেকে দ্বিধান্বিত সংসারটি ভেঙেই গেল নাকি এটা পরীর প্রগাঢ় ভালোবাসাজনিত অভিমানের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়! নিছক অভিমান হলে দূরত্বটি ঘুচে যেতে পারে এমনটিই আশা করছেন শুভাকাঙ্ক্ষিরা। তবে অবিবেচক আবেগ ভুল করলে তত দ্রম্নতই বিপরীতও হয়ে যায়। কেননা, রাজকে পরীমনির স্বামী হিসেবে নির্বাচন, বিয়ে, সন্তান সবকিছুই ঘটেছে অত্যন্ত দ্রম্নতগতিতে। এটা বিবেচনাপ্রসূত আবেগ বলা যায় না। তবে তারপরও পরীর মনে অন্যকিছু থাকলে এতদ্রম্নত সন্তান গর্ভে নিতেন না। যেটা শোবিজে সাধারণত কম ঘটে। পরী নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, 'একটা সম্পর্কে পুরোপুরি সিরিয়াস বা খুব করে না চাইলে একটা মেয়ে বাচ্চা নেওয়ার মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনোই।'

তাহলে কী হয়েছে- বছর না ঘুরতেই তার মোহভঙ্গ হলো? মানুষের জীবনে একটি শব্দ আছে 'পরকীয়া'। এই সন্দেহের কারণেও কত সুখের সংসার ছাড়খার হয়ে গেছে, ইয়ত্তা নেই। শোবিজ মাত্রই উদার জীবন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই উদারতা কখনো 'নীতিহীন'ও করে দেয়। এ সুযোগে ঢালিউড কেন হলিউড-বলিউডসহ সব শোবিজ অঙ্গনেই এ ঘটনা অহরহই ঘটছে। কেউ মজা করেও কারো সুখের সংসারে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারকাদের এসব ঘটনা গোটা বিশ্বেই বহুল চর্চিত। ব্র্যাড পিট-অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বিচ্ছেদও তাই। তাদের ঘরেও সন্তান আছে। তারপরেও সেটা বিয়ে বিচ্ছেদ রোধে কাজে আসেনি। ঢালিউডে শাকিব খান-অপু বিশ্বাস বা বুবলীর ঘটনাও তাই। তবে তাদের জীবনে এটা ঘটেছে যখন তারা অভিনয় জীবনের পড়ন্ত বেলা দেখছেন। কিন্তু রাজের তো তা নয়- সবে ফুটন্ত বেলা। পিতাও হয়েছেন সবে মাত্র।

পরীমনিও তাই বলেন। 'রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বারবার সব ভুলে যাই। সব ঠিক করার জন্য পড়ে থাকি। কিন্তু তাতে কি আসলেই আমার বাচ্চা ভালো থাকবে! ...রাজ্যের মুখ চেয়ে এতদিন মুখ খুলিনি। অবশেষে না পারতেই মুখ খুললাম।' তবে এই মুখ খোলাও আবেগের নাকি অনেক চিন্তাভাবনার, নিকটজন ছাড়া কে বুঝবে! ঘনিষ্ঠ জনরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। আঙুলে চিড় ধরা নিয়ে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে পরীকে। কিন্তু বাঙালির সংসারে তো এরকম কমবেশি প্রায়শই ঘটে। তাই বলে পরীর ভালোবাসার সংসার সহসা ঠুনকো হয়ে পড়বে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে