সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

'প্রাণের টানেই ফিরে আসি'

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
রিচি সোলায়মান

ছোটপর্দার মিষ্টি মুখ রিচি সোলায়মান। নব্বই দশকের একেবারে শুরুর দিকে বিটিভি নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে পা রাখা রিচি সেই যে প্রথমবারের মতো আলোর সামনে দাঁড়িয়ে ঝলক দেখালেন, তা যেন আর কিছুতেই ভুলতে দিলেন না দর্শককে। টনি ডায়েসের বিপরীতে 'বেলা ও বেলা' নামের নাটকের মাধ্যমে তার অভিনয় ও সৌন্দর্য দিয়ে দর্শককে এমনই চমকে দেন তা অব্যাহত রাখেন টানা দেড় দশক। এ সময়ে একাধারে অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী হিসেবে মুগ্ধতা জাগানো অনেক নৈপুণ্য ভাস্বর কাজ করেন তিনি। ধারাবাহিক নাটকসহ অনেক দর্শকপ্রিয় টেলিফিল্ম, নাটক, সিরিয়াল, টিভি বিজ্ঞাপন উপহার দেন। ইতোমধ্যে ৪০০টির বেশি নাটকে অভিনয় করা হয়ে গেছে তার। এসব নাটকের মধ্যে 'অন্ধকারের ফুল', 'বনলতা সেন', 'নাবিলা চরিত', 'নীড়', 'অন্তরীক্ষ', 'লেডিস ফার্স্ট', 'আমি এবং তাহারা' প্রভৃতিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সুঅভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। শুধু নাটক নয়, 'বার্জার পেইন্ট' এবং 'ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি'সহ বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েও ছোটপর্দায় আলো ছড়িয়েছেন তিনি। শুধু অভিনয়ই নয়, রিচি সোলায়মান আত্মপ্রকাশ করেছেন নাট্যকার হিসেবেও। রিচি রচিত প্রথম নাটক 'আলোয় ভুবন ভরা'। তার লেখা অপর একটি নাটক 'রূপার ভালোবাসা'ও প্রশংসিত হয়েছে দর্শকের কাছে।

২০১৫ সালে তার প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত 'নীরব প্রেম' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেও এমন আলোর ফোয়ারা ছড়িয়েছিলেন যাতে বোঝা গিয়েছিল এখানেও তিনি দর্শকের মন জয় করে নেবেন। কিন্তু বিধি বাম! মানুষের জীবনের এক অলঙ্ঘনীয় সংসারে বাঁধা পড়ে তাকে শুধু বড়পর্দাই নয়, ছোটপর্দা থেকেও অনিয়মিত হয়ে যেতে হলো।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা সেই রিচি সোলায়মান এখন সুদূর আমেরিকা প্রবাসী। স্থায়ীভাবে সংসার পেতেছেন সেখানকার পুলিশ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করা স্বামীর সঙ্গে। ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রম্নয়ারিতে বিয়ে করা রিচি সোলায়মান সেখানেই পেতেছেন তার চৌদ্দ বছরের সুখের সংসার। মাঝে-মাঝে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশে আসেন। সেই ফাঁকে কখনো কখনো তার কোনো কোনো নাটকে অভিনয় করা হয়ে যায়। তার মানে নির্মাতাদের কাছে তার চাহিদা এখনো অনেক। এমন এক জাদুকরী অভিনয় শিল্পীর দেশের শোবিজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তার বহু ভক্ত দর্শকের জন্যই পীড়াদায়ক। পীড়াদায়ক এ কারণে তিনি যতই দূরে থাকুন না কেন দর্শক তাকে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাকে এক ঝলকের জন্য হলেও দেখতে চান। সেটা ছোট পর্দায় হোক আর বড়পর্দাতেই হোক। এটা রিচিও বোঝেন। বাংলাদেশের শোবিজের জগতে অনেকেই আছেন বিয়ে থা করে শোবিজকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছেন। রিচি অবশ্য সেরকম একেবারে গুটিয়ে যাননি। সেজন্যই অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধু ভক্ত দর্শকের এই চাহিদা মিটাতেই প্রবাস থেকে দেশে এসে দুয়েকটি নাটকে অভিনয় করা হয়ে যায় তার। বড়পর্দায় আপাতত সম্ভব না হলেও এভাবে রিচির বছরে অন্তত দুয়েকটি নাটক ধারাবাহিকে অভিনয় করা হয়ে যায়। সেরকম চাহিদা মিটাতেই ইতোমধ্যে একটি নাটকে অভিনয় করা হয়ে গেছে তার। মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদ্বীপ পরিচালিত নাটকটির নাম 'মৎস্য কন্যা'। সমুদ্র উপকূলে জীবন-জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করা এক লড়াকু মেয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। কিন্তু এভাবে কি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে? বছরে একটি দুটি নাটকে অভিনয় করে নিজেও কি মনের দিক থেকে তৃপ্ত হতে পারেন? এর উত্তরে রিচি বলেন, 'নিউইয়র্কে আমার স্বামী রাশেক-উর-রহমান মালেক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন। ইচ্ছে থাকলেও এখন আমার পক্ষে দেশে স্থায়ীভাবে থাকা সম্ভব নয়। তবে প্রতি বছর দেশে এসে মিডিয়ায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সত্যি বলতে কী, এই দেশ এই শহর ছেড়ে কোথাওই আমার ভালো লাগে না। কেমন অস্থির-অস্থির লাগে। মন কিছুতেই বসে না। তবুও সংসারের টানে, স্বামীর টানে আমেরিকায় যেতে হয়। রাশেক নিজেও আমার মনের অবস্থা জানে। পুলিশের চাকরি, চাইলেই তো ছাড়া যায় না। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়ই অনেক রকম অঙ্গীকার করতে হয়। একটা নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত চাকরিতে থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। কয়েক বছর পর চাকরির মেয়াদ শেষ হলে আমরা সপরিবারে স্থায়ীভাবে ঢাকাতেই অবস্থান করব। সেই আশাতেই বুক বেঁধে আছি। '

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে