সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুবর্ণ সময়ের তীরে...

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'কাবুলিওয়ালা' নামের একটি সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি; সেই ১৯০৬ সালে। সেটিই ছিল তার জীবনের প্রথম অভিনীত সিনেমা। শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন দীঘি। তারপরে আরও দুটি সিনেমায় অভিনয়ের কারণে শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে যে উড়ন্ত সূচনা হয়েছিল দীঘির সেই শিশুটিই আজ পূর্ণ বয়েসি নায়িকা।

পূর্ণ বয়সি নায়িকা হওয়ার আগে অবশ্য দীঘি পাঁচ/ছয় বছর চলচ্চিত্রের বাইরে ছিলেন। সিনেমায় অভিনয়ের আগে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন দীঘি। এখন তিনি দাঁড়িয়ে আছেন এমন একটি সুবর্ণ সময়ের তীরে যে, যেখানে থেকে মুখিয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার' নামের চলচ্চিত্র পর্দায় প্রদর্শিত হওয়ার দিনটির জন্য। কেননা, 'রেণু' চরিত্রে অভিনয় করা এই সিনেমাটির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই হতে যাচ্ছে প্রার্থনা ফারদিন দীঘির জন্য একটি রুপালি স্বপ্নের মুহূর্ত। আগামীকাল শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে ঐতিহাসিক এই সিনেমাটি।

শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এই সিনেমাটি নিয়ে এখন দারুণ উচ্ছ্বাসে ভাসছেন বলে জানালেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। বললেন, 'অনেক উত্তেজনা কাজ করছে। সম্প্রতি ট্রেইলার প্রকাশ পেয়েছে। তারপর থেকেই সবার প্রশংসা পাচ্ছি। আমার কাছে এটি শুধু একটি সিনেমাই নয়, এটা একটা জাতির ইতিহাসও। এই ইতিহাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে অনেক গর্বিতও আমি।'

কিন্তু ছবিতে যে চরিত্রটিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন সেই রেণু চরিত্রটিতে অভিনয় করতে পেরে নিজেকে কতটা সুখী মনে করেন এমন প্রশ্নে প্রার্থনা বলেন, একজন চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে আমি রেণু চরিত্রে অভিনয় করে খুবই হ্যাপি। এটা তো অবশ্যই আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। প্রথম যখন শিওর হলাম আমিই পারফর্ম করতে যাচ্ছি রেণু চরিত্রটির, তখন থেকে বিভিন্ন বইপড়া শুরু করি এবং ভিডিও দেখা শুরু করি। ফিল্ম আর্কাইভে যাই। শেখ ফজিলাতুন্নেছার জীবনী পাঠ করি। তার তরুণী জীবন সম্পর্কে জানি। আব্বু বই কিনে দেন। তারপর তো লকডাউন এলো। লকডাউনের সময় স্ক্রিপ্ট পাই। এরপর জানতে পারি, যে কোনো দিন শুটিং শুরু হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিই। পুরো স্ক্রিপ্ট মুখস্ত করি। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এই সিনেমাটির শুটিংয়ে অংশগ্রহণ করি।'

অবশ্য ইতোমধ্যে মুক্তি পাওয়া শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত 'টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই' সিনেমাতেও এই একই শেখ ফজিলাতুন্নেসার তরুণী বয়সকালীন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে বড় ক্যানভাসের হিসাবে নিঃসন্দেহে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার' সিনেমাটির সঙ্গে সেটির কোনো তুলনা হয় না। বিপুল বাজেটে ছবিটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায়।

সেদিক থেকে প্রার্থনা ফারদিন দীঘি 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার' সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছার তরুণী বয়সকালীন চরিত্রে অভিনয় করতে পারার গর্বে গর্বিত শুধু তা-ই নয়, পাশাপাশি এই ছবিটির মধ্য দিয়েই তিনি একজন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের অধীনেও কাজ করার সুযোগ পেলেন। এটাও কম গর্বের বিষয় নয়। কেমন লেগেছে এমন একজন বিশ্বমানের চলচ্চিত্র পরিচালকের অধীনে কাজ করতে পেরে- এমন কথায় প্রার্থনা ফারদিন দীঘি বলেন, 'শ্যাম বেনেগাল স্যার কোন লেভেলের পরিচালক তা বলে বোঝানো যাবে না। শুরুতে বিশ্বাস করতে পারিনি তার মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করব। এত সুন্দর করে সবার কাছ থেকে নিখুঁত অভিনয়টা বের করে নিয়েছেন যে, এক কথায় অবিশ্বাস্য। তিনি আমাদের শতভাগ এফোর্ড দিয়েছেন।'

ছবিটি আরও একটি দিক থেকে দীঘির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই জন্য যে, এই সিনেমাটিতেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ সংখ্যক তারকা অভিনয় শিল্পীর সমাবেশ ঘটেছে- যা ইতোপূর্বে আর কোনো সিনেমাতেই ঘটনি। একসঙ্গে অনেক তারকা অভিনয় শিল্পীকে নিয়ে একই ফ্রেমবন্দি হয়ে থাকাটাও কম গৌরবের নয়। অনেকে তো এই ছবিতে যুক্ত হতে না পারার দুঃখে নীরবে অন্তর জ্বালায় পুড়ছেনও! তাইতো, প্রধান চরিত্র আরিফিন শুভর মতো প্রার্থনা ফারদিন দীঘিও এই ছবিতে অভিনয় করতে পারার সুখে বলতে পারছেন, 'আমার আর কোনো সিনেমায় অভিনয় না করলেও চলবে।'

এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার আগে দুটি সিনেমায় পূর্ণ নায়িকা হিসেবে রুপালি পর্দায় দেখা গেছে প্রার্থনা ফারদিন দীঘিকে। যার মধ্যে প্রথম অভিষেক ঘটে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত 'তুমি আছো তুমি নেই' সিনেমায়। অবশ্য প্রথম সিনেমা হিসেবে দীঘির অভিজ্ঞতা তেমন সুখকর হয়নি। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে চরম মার খায়। পরিচালক হিসেবে দেলোয়ার জাহান ঝুন্টুও যেন তার ক্যারিয়ারে প্রথম ধাক্কাটি খেলেন। এই ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণেই কিনা কে জানে, একপর্যায়ে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু দীঘির ওপর রাগও ঝাড়েন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে