সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিমুর মৃতু্য মানতে পারছেন না কেউ

তারার মেলা রিপোর্ট
  ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃতু্য এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলো। কিন্তু এই মৃতু্য রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। এ নিয়ে হিমুর সহকর্মী, ভক্ত ও অনুরাগীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা করছেন। হিমুর মৃতু্য রহস্য উদ্ঘাটনে সন্দেহভাজন তথা কথিত প্রেমিক রাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেকাপ আর্টিস্ট মিহিরকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। অচিরেই হিমুর মৃতু্য রহস্যর উদ্ঘাটন চান ভক্ত অনুরাগীরা। অবশ্যর্ যাব জানায়, গত ২-৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় বিপুল অর্থ অপচয় করেন। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় হিমু ও জিয়াউদ্দিন রাফির মধ্যে মনোমালিন্য হয়। সেই মনোমালিন্যের সূত্রে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন।

এ প্রসঙ্গে নাটকের অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম বলেন, 'হুমায়রা হিমু কিছুদিন যাবত কাজ করেননি। কিছুটা বিরতির পর সম্প্রতি তিনি দু-তিনটা ধারাবাহিক নাটকে যুক্ত ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে আমাদের শিল্পীদের বড় আয়োজন ছিল। সেখানে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। তবে এমন না যে, তার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল বা কাজ পাচ্ছিল না। হিমুর কীভাবে মৃতু্য হয়েছে, সেটা পোস্টমর্টেম হওয়ার পরই জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব। কিন্তু এখন আমরা কোনো কিছু বলতে পারছি না।'

এদিকে অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃতু্যর খবর সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে 'মিহির' নামটিও আলোচনায় আসে। মিহির হিমুর মৃতু্যর সময় পাশে ছিলেন। ফলে তাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা ওঠার সঙ্গত কারণ রয়েছে। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ মারা যাওয়ার সময়ও এই মিহির পাশে ছিলেন। তাজিন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু পরে অভিনয় শিল্পী সংঘ জানতে পারে তাজিন আহমেদের মৃতু্য সাধারণ ঘটনা ছিল না। কারণ তাজিন আহমেদকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে রেখে কেউ একজন পালিয়ে যান। জানা যায়, তাজিনের সঙ্গে সেদিন তার এক বন্ধু ও একজন মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন। তার নাম 'মিহির'। ফলে সঙ্গত কারণেই হিমুর রহস্যজনক মৃতু্যর পরে মিহিরের নাম আলোচনায় আসে। শুধু তাই নয়, মিহিরের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী। মিহির হোমায়রা হিমু মৃতু্যর আগে তার বাসায় ছিলেন।

এ বিষয়ে অবশ্য মুখ খুলেছেন হুমায়রা হিমুর মোকাপ আর্টিস্ট মিহির। ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে মিহির জানান, 'আমার কাজ বন্ধ, আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। রাতে হয়ত আমি আমার বাসায় থাকতাম, দিনে আমি হিমুর দেখাশোনা করতে চলে আসতাম। হিমু না খেয়ে কান্নাকাটি করত, আর আমি শুটিং থেকে ছোট ভাইকে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাইয়া ওর জন্য রুমে খাবার পাঠাইছি। ওর জ্বর, অসুস্থ- বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কাউকে তো দেখিনি ওকে খাবার দিতে, ওর খেয়াল নিতে, ওর পাশে এসে দাঁড়াইতে। আপনারা কলিগ- ও মরার পর ওরে নিয়া বিভিন্ন মিটিং মিছিল করবেন। কিন্তু জীবিত থাকতে তো ওরে নিয়া এরকম নাচেন নাই কেউ। এখন এগুলো বললে তো আমি খারাপ। আমি অবশ্যই খারাপ, আমাকে নিয়া ফাঁসি দিয়ে দেন।'

টিভি নাটকের নিয়মিত অভিনয়শিল্পী হুমায়রা হিমু লক্ষ্ণীপুর জেলায় ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। হিমুর আসল নাম হুমায়রা নুসরাত হিমু। বিনোদন দুনিয়ায় কাজ করতে এসে পর্দায় তিনি হন হুমায়রা হিমু। অভিনেতা টনি ডায়েসের অনুপ্রেরণাতেই নতুন নামের অবতারণা। এক সাক্ষাৎকারে হিমু একবার জানিয়েছিলেন, টনি ডায়েস তাকে বলেছিলেন, পৃথিবীর সব বিখ্যাত মানুষের নাম দুই শব্দে হয়। ছোটবেলা থেকেই নাটকে কাজ করার ইচ্ছে ছিল হিমুর। কিন্তু সেই সঙ্গে এয়ার হোস্টেজ হতেও চেয়েছিলেন। দুটো ইচ্ছের একটি জয়ে তিনি দিব্যি সফল হয়েছেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন হিমু। 'ফ্রেঞ্চ' নাট্যদলের হয়ে অভিনয় করেন। ২০১১ সালে 'আমার বন্ধু রাশেদ' সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় হুমায়রা হিমুর। অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন হিমু। হিমুর অভিনীত নাটকের মধ্যে রয়েছে 'ছায়াবিবি', 'ডিবি', 'সোনাঘাট', 'চেয়ারম্যান বাড়ি', 'বাটিঘর', 'শোনে না সে শোনে না' ইত্যাদি। অভিনেত্রী হিসেবে সাফল্য পেয়েছিলেন হিমু। শেষের দিকে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেও দেখা গেছে তাকে। করোনা মাহামারির পর থেকে কাজ কমে যায় হিমুর। সেই থেকে অনেকটা নিসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন তিনি। এছাড়া কাছের আত্মীয়স্বজনও তেমন কেউ ছিল না। গত ২ নভেম্বর উত্তরার বাসায় মৃতু্যবরণ করেন হিমু। এরপর ৩ নভেম্বর শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লক্ষ্ণীপুর পৌরসভার লামচরী জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মসজিদের কবরস্থানে তার মা শামিম আরা চৌধুরীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে