শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এ সময়ের ফেরদৌস

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মাস ছয়েক আগেই নিজের পঞ্চাশ বসন্ত স্পর্শ করেছেন দুই বাংলার নায়ক বলে খ্যাত ফেরদৌস আহমেদ। এখনো তিনি সেই আগের মতোই নায়কসুলভ বডি ফিটনেস ও চেহারা ধরে রেখেছেন। সমসাময়িক জয়া আহসান যদি এই বয়সে নায়িকা হয়ে থাকতে পারেন ফেরদৌস আহমেদ কেন পারবেন না। তার ওপর তিনি দীর্ঘ দুই যুগের বেশির্ যাম্প মডেল হিসেবে পায়চারি করেছেন। যারার্ যাম্প মডেল হিসেবে পারফর্ম করেন তারা বডি ফিটনেস কী করে ধরে রাখতে হয় সেটা বরাবরই ভালো জানেন। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ এইর্ যাম্প মডেল থেকেই আজকের অবস্থানে এসেছেন। এখনোর্ যাম্প মডেল হিসেবে হাঁটেন কিনা, জানতে চাইলে বলেন, 'কেন নয়, এখনো আমি কোথাও থেকে এই হাঁটার জন্য ডাক এলে এখনো হাঁটি। কারণ, এইর্ যাম্প মডেল হিসেবেই তো আমার আজকে পথচলা। কাজেই আমি যেখান থেকে আজকের অবস্থানে এসেছি সেটা তো আমি কখনো ভুলে যেতে পারি না। এখনো ডাক এলে আমি হাঁটি।'

কলকাতা থেকে নির্মিত সিনেমা 'হঠাৎ বৃষ্টি' যাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। এই ছবি দিয়েই তার কলকাতায় থিতু হওয়ার গল্পের শুরু। এরপর থেকে কলকাতার সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন প্রায় ৫০টিতে। দুই বাংলা মিলিয়ে আর কোনো নায়কের কেউই এতগুলো সিনেমায় অভিনয় করতে পারেননি। কলকাতার টালিউড থেকে আসা কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী যেমন ঢাকার ঢালিউডে এত সিনেমায় অভিনয় করতে পারেনি তেমনি ঢালিউড থেকে যাওয়া কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীই টালিউডে এত সিনেমায় অভিনয় করতে পারেনি। দুই বাংলা মিলিয়ে এই কৃতিত্ব একমাত্র ফেরদৌস আহমেদেরই। মূলত নায়ক হিসেবে ফেরদৌসের যে রকম লুক সেটা টালিউডের সিনেমার জন্য ঢাকাই সিনেমার আর কোনো নায়কই উপযুক্ত না হওয়াতে আর কেউ এমন কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। তবে সম্প্রতি টালিউডে বেশ কিছু নায়িকা/অভিনেত্রী টালিউডের সিনেমায় প্রচুর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এ বিষয়টির প্রতি ফেরদৌস আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, ঢাকা থেকে একমাত্র আপনিই টালিউডে সবচেয়ে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। শাকিব খানকে এ বিষয়ে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমি ঢাকাই সিনেমার উন্নতিতেই কাজ করতে চাই। টালিউডের সিনেমার প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। যদিও তিনি এরপর 'শিকারী' সিনেমায় অভিনয় করেছেন। উত্তরে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, 'পাই না তাই খাই না- এ আর কি। সেরকম সুযোগ পেলে তো কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করবেন। তবে নায়িকাদের কথা যদি বলেন, তাহলে আমি বলবো নায়কই একটি সিনেমার সবকিছুকে ডমিনেট করে। নায়িকা নয়। এখন টালিউড হোক আর ঢালিউডই হোক, তারা নায়িকা কোথা থেকে নেবেন সেটা সিনেমায় কোনো ম্যাটার করে না। নায়িকা তারা যে কোনো অঞ্চল থেকেই নিতে পারেন। একজন নির্মাতা ঢাকা, কলকাতা, তামিল, বোম্বে- যে কোনো অঞ্চল থেকেই নায়িকা নিতে পারেন। তবে সিনেমার প্রধান আকর্ষণ নায়কই। আমি তো কলকাতা এবং বলিউড মিলিয়ে অনেক নায়িকার সঙ্গেই প্রায় পঞ্চাশটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। দুই বাংলা মিলিয়ে আমার চেয়ে বেশি আর কেউ এত সিনেমায় অভিনয় করেনি।'

কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে ঢাকাই সিনেমারও তো অনেক ভালো ভালো সিনেমার কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে- কী বলেন? 'তা তো হয়েছেই। শুধু ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির অনেক ভালো সিনেমাই নয়, কখনো কলকাতারও অনেক ভালো ভালো সিনেমার কাজও ছেড়ে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া তো কিছু করারও ছিল না।'

বর্তমানে ফেরদৌস আহমেদের বেশ কয়টি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারি অনুদানের সিনেমাও রয়েছে। এগুলোর কোনোটি চলতি বছর মুক্তি পাবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, বর্তমানে যে রকম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে মনে হয় না এ বছর এগুলো মুক্তি পাবে। মুক্তি প্রতীক্ষিত এই সিনেমাগুলোর ছাড়াও আরও একটি নতুন সিনেমার কাজ হাতে নিয়েছেন বলে, ফেরদৌস আহমেদ বলেন। এই সিনেমাটিতে আমি একজন আর্মি অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করছি। বাংলাদেশের এই প্রথম আর্মিদের ওপর চলচ্চিত্র হতে যাচ্ছে।'

চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ একবার ঢাকার অভিজাত পাড়া গুলশান-১৭ আসন শূন্য হলে (চিত্রনায়ক ফারুকের আসন) তিনি সেখান থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য মনোয়ন পত্রও কিনেছিলেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা জানতে চাইলে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, 'আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লোক। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করেন। এখন তিনি যদি চান আমি নির্বাচন করি তাহলেই দেখা যেতে পারে।' কিন্তু আপনার নিজ থেকে ইচ্ছে আছে কিনা- এমন প্রশ্নে ফেরদৌস আহমেদ তার স্বভাবসুলভ হাসিতে বলেন, 'যদি জনগণ চায়, আপনারা যদি চান তাহলে সেটা তো ভেবে দেখতেই পারি। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক হিসেবে তিনি যা চাইবেন তা-ই হবে।'

এজন্য নিজের এলাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন কিনা- জানতে চাইলে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, 'নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যোগাযোগ নেই। তবে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে মাঝে-মাঝেই যাওয়া-আসা করি। সেখানে আমার আব্বার প্রতিষ্ঠা করা একটা স্কুল আছে। সেই দায়বোধ থেকেই সেটার দেখাশোনা করতে আমাকে মাঝে মাঝে যেতে হয়। সেখানকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। এসব অবশ্য নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করেও করছি না। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং আমার এলাকাবাসী যদি চান আমি ওখান থেকে নির্বাচন করি, তাহলে তো এই যোগাযোগ নিয়মিতই রাখতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে