শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার রাজধানীবাসীকে ভোগাতে পারে শীতজনিত নানা রোগ

লাইজুল ইসলাম
  ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০৮

বায়ুদূষণের মানমাত্রায় রাজধানী ঢাকার একিউআই স্কোর ২৯ নভেম্বরে ছিল ১৫২, যা বাতাসের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা নির্দেশ করে। এর ফলে রাজধানীর গর্ভবতী মা, শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হতে পারে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টের মতো ভয়ংকর রোগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে তো শীত তার ওপর রাজধানীতে ধুলার পরিমাণ প্রায় দেড়শ' ভাগ বেশি। এই সময় শিশু ও বয়স্কদের জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। অতিরিক্ত ধূলিকণার কারণে রাজধানীবাসী বিবিধ রোগে ভুগতে পারেন। রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, দেড়শ' ভাগ নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা-সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ে তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, রাজধানীর ভেতরের শিশুদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া নিয়ে আসে হাসপাতালে। তবে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলো থেকে শিশু রোগী বেশি আসছে। সরেজমিন রাজধানীর শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা গেছে, রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে স্বজনরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন। মানিকগঞ্জ থেকে আসা শাহাবুদ্দিন জানান, তার বাচ্চার বয়স দুই বছর। কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা ও সর্দি লেগে ছিল। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখান। সেখান থেকে বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসতে বলেন চিকিৎসক। এখন তিনি বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করাবেন। সাভার থেকে এসেছেন সালেহা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে। শীত আসতে না আসতেই তার মেয়ের শরীরে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসা নিতে ভয় পাওয়ায় চলে এসেছেন শিশু হাসপাতালে। এ ধরনের সমস্যা মেয়ের আগে ছিল না বলেও জানান তিনি। ধামরাই থেকে আসা সুজন শিশু হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নিউমোনিয়ার সমস্যা। দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে তার মেয়ে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডা সমস্যায় ভুগছিল শিশুটি। অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নিয়ে আসতে হয়েছে শিশু হাসপাতালে। শিশু হাসপাতলের বহির্বিভাগ কানায় কানায় পরিপূর্ণ শিশু রোগীতে। এই রোগীর বেশির ভাগই এসেছেন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। কারও কারও ডায়রিয়া সমস্যাও আছে। তবে বেশির ভাগ রোগীই ঠান্ডা, সর্দি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বাচ্চাকে ধুলাবালু থেকে দূরে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পুরো ঢাকার কোনো জায়গা কি আছে যেখানে ধুলাবালু নেই। এদিকে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবিতে গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালীন ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে আসছে শিশুরা। শীতে শিশুদের ডায়রিয়া রোগের প্রভাবও বৃদ্ধি পায়। কর্মরত নার্সরা বলেন, রোগী কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তা আয়ত্বের বাইরে নয়। কিন্তু শীত যত বাড়বে ততই শিশুর ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকতে পারে। শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, শীতে বাতাসে ধুলার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এতে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। অনেক সময় শিশুদের হাসপাতালে স্থান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শীত শুরু হলেও রাজধানীতে তেমন কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি। তবে ঢাকার বাইরের রোগীরা আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই সময়টাতে বাচ্চাদের বাবা-মায়ের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুদের মোটা কাপড়ের পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঘেমে ভিজে না যায়। সুতি কাপড় ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া পরিবারের মুরুব্বিদের প্রতিও অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। এ সময় তাদেরও বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ডা. শফি বলেন, শীতে বাতাসে অতিরিক্ত সিসা দেখা যায়। এই সিসা বাচ্চা ও বয়স্কদের জীবনও নিয়ে নিতে পারে। তাই বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করাই ভালো। তবে বয়স্কদের আপাতত অতিরিক্ত বালুর মধ্যে না যেতে দেওয়াই শ্রেয়। এই সময়টায় চর্ম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা, সর্দি লাগতে পারে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগের ৫০ শতাংশ রোগীই শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া সমস্যা নিয়ে আসে বলে জানান তিনি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে এজমা পরিবার থেকে আসে মাত্র ৫ শতাংশ, আর বাতাসের বালু থেকে হয় ৯৫ শতাংশ। রাজধানীর বাতাস খুবই ক্ষতিকর একজন মানুষের জন্য। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। তিনি বলেন, শীতের সময়টাতে সপ্তাহে একবার রাজধানীর রাস্তা ধোঁয়া হলে বাতাসে বালুর পরিমাণ কমবে। আর ভালো করে প্রতিদিন দুইবার রাস্তা ঝাড়ু দিতে হবে। রাজধানীর বাতাস থেকে শিশু বা বয়স্কদের বাঁচার একমাত্র উপায় মাস্ক। শীতকালীন সময়ে অতিরিক্ত বালু শিশু ও বয়স্কদের জীবনের জন্য হুমকি। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডক্টর আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে শীতে কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় দূষণে। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ধুলা সমস্যা করে। যেহেতু এই সময়টাতে বৃষ্টি হয় না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো না হওয়ায় জীবাণুগুলো বালুর সঙ্গে আকাশে উড়তে থাকে। মাটি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত ধোঁয়াসার একটি আবরণ তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, এই ধুলার সঙ্গে জীবাণুগুলো বিভিন্নভাবে গর্ভবতী মা, শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত করে। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এসব রোগ নিয়ে শুধু রাজধানী নয়, রাজধানীর বাইরের রোগীরাও আসে। কারণ রাজধানীর বাইরেও ধুলা বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবাণুগুলো সেখানেও সমান তালে গর্ভবতী মা, শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত করছে। শীতের এই সময়টাতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই সবাইকে সাবধানতার পাশাপাশি সচেতনও হতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় শীতের কাপড়ের পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে