শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণে করোনা, তবুও শয্যা সংরক্ষিত!

'অব্যবহৃত আইসিইউ উপজেলায় পাঠানো যেতে পারে'
লাইজুল ইসলাম
  ০৯ মে ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ০৯ মে ২০২২, ০৯:০৩

করোনা হাসপাতাল শূন্যপ্রায়। প্রতি হাসপাতালেই শয্যা খালি আছে করোনা রোগীদের জন্য। কিন্তু এসব শয্যায় দীর্ঘদিন রোগী ভর্তি না হওয়ায় জমেছে বালুর আস্তরণ। রোগীশূন্য এসব শয্যা ব্যবহার করা নিয়ে এক প্রকার দোলাচলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদি হঠাৎ রোগী বাড়তে শুরু করে, সেই শঙ্কায় এখনো হাসপাতালের বিশাল সংখ্যার শয্যা ব্যবহার না করেই ফেলে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা চিকিৎসা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তবে যেহেতু রোগীর সংখ্যা কম তাই অব্যবহৃত শয্যা অন্য রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্তত আইসিইউ ও এইচডিইউগুলো সাধারণ রোগীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা আপাতত ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে এসব শয্যার বাইরেও সাধারণ রোগীদের জন্য সবকিছুই বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনার বিষয়ে আরেকটু দেখে-শুনে শয্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে চায় অধিদপ্তর। রাজধানীর ১৫টি প্রতিষ্ঠানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। ৬ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ১৫ হাসপাতালের কোভিড সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৩ হাজার ১৯৪টি। মধ্যে খালি আছে ৩ হাজার ১৬৬টি। কোভিড আইসিইউ শয্যা ৩৫১টি, যার মধ্যে খালি ৩৪৩টি। কোভিড এইচডিইউ শয্যা ৪২৩টি যার মধ্যে খালি ৪২২টি। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ৬১৯টি। অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটার ২৩৭টি ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১৫টি। ঢাকায় ৩২টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হয়ে থাকে। ৬ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ৩২টি হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ১ হাজার ৪২৬টি। যার মধ্যে খালি আছে ১ হাজার ৪২৬টি। কোভিড আইসিইউ আছে ৩৬৯টি যার মধ্যে খালি আছে ৩৬৭টি। কোভিড এইচডিইউ আছে ১০৭টি, যার সবই খালি। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ৪০৭ ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটার ১২৬টি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে ৩২টি। হিসাব করে দেখা যায়, শুধু ঢাকা বিভাগে সাধারণ শয্যা আছে ৪ হাজার ৬২০টি যার মধ্যে ৪ হাজার ৫৯২টি খালি। আইসিইউ আছে ৭২০টি যার ৭১০টি খালি। এইচডিইউ আছে ৫৩০টি যার মধ্যে ৫২৯টি খালি। সরকারি ও বেসরকারি হাপসাতালগুলোয় আইসিইউ, এইচডিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলে খালি আছে ৫ হাজার ৮৩১টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারি হাসপাতাল আছে ৪টি। যার সাধারণ শয্যা ৫৫৭টি আর খালি আছে ৫৫১টি। কোভিড আইডিইউ আছে ৩৩টি ও খালি আছে ৩৩টি। এইচডিইউ আছে ১৬টি খালি আছে সব। বেসরকারি হাসপাতাল আছে ৬টি। সাধারণ শয্যা আছে ৩৬০টি আর খালি আছে ৩৫৯টি। আইসিইউ আছে ৩১টি যার সবই খালি। হিসাব করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় সাধারণ শয্যা আছে ৯১৭টি। আইসিইউ আছে ৬৪টি ও এইচডিইউ আছে ১৬টি। সব মিলিয়ে ৯৯৭টি শয্যা। চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর এইচডিইউ, আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলিয়ে খালি আছে ৯৮৯টি। এই দুই বিভাগ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে কোভিড সাধারণ শয্যা আছে ১৩ হাজার ১৩৪টি। যার মধ্যে খালি আছে ১৩ হাজার ৮৮টি। আইসিইউ আছে ১ হাজার ১৭৩টি যার খালি আছে ১১৫৮টি। এইচডিইউ আছে ৭০৫টি যার মধ্যে খালি আছে ৭০০টি। হিসাব করলে দেখা যাবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে আইসিইউ, এইচডিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলে মোট শয্যা আছে ১৫ হাজার ১২টি। যার মধ্যে খালি আছে ১৪ হাজার ৯১৪টি। আইসিইউ, এইচডিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলিয়ে দেশে করোনা রোগীর জন্য শয্যা আছে ২১ হাজার ৮৭৯টি। যার মধ্যে খালি আছে ২১ হাজার ৭১৪টি শয্যা। চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশে করোনা সন্দেহভাজন কোয়ারেন্টাইন করছেন ৪৫ হাজার ৯২ জন। আইসোলেশনে এই মুহূর্তে আছেন ৩০ হাজার ৩৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, সারাদেশে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কোনো সিট খালি নেই। এগুলো সবই ব্যবহার হচ্ছে। তবে শয্যাগুলো খাতা-কলমে নির্দিষ্ট করা আছে মাত্র। যদি করোনা রোগী বৃদ্ধি পায় তবে এগুলো ব্যবহার করা হবে। সারাদেশের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যেখানে করোনা কম সেখানেই শয্যাগুলো সাধারণ রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হবে। তিনি আরও বলেন, তবে দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ডিএনসিসি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেলসহ অন্য হাসপাতালগুলো নিয়ে এখনো চিন্তাভাবনা চলছে। যেহেতু করোনা কমে গেছে সব সরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের দেখা হচ্ছে। করোনার পাশাপাশি স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলছে। ডা. বেলাল আরও বলেন, আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে আইসিইউ এইচডিইউ ব্যবহার না করে ফেলে রাখা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে হয়তো এগুলো সাধারণ রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা শুরু করেছে। রোগী না থাকলে আইসিইউ ফেলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম মনে করেন, বড় বড় শহরগুলো থেকে অব্যবহৃত আইসিইউ, এইচডিইউগুলো গ্রাম, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পাঠানো যেতে পারে। জেলা, উপজেলা বা গ্রামে যেখানে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করার মতো সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক আছে সেখানে পাঠাতে হবে। এতে আইসিইউ সুবিধা উপজেলা লেবেল থেকেই নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, তবে এগুলোর সুবিধা পেতে হলে কিছু কাজ করতে হবে। হাসপাতাল বা ক্লিনিকের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ট্রেনিং করাতে হবে। এর সঙ্গে আইসিইউ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু জনবল গড়ে তুলতে হবে। রুট লেবেলেই যদি এত ভারী যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও চালানোর মতো লোক আমাদের থাকে তবে ভবিষ্যতে যত বড় দুর্যোগই আসুক না কেন চিকিৎসা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। এই অধ্যাপক আরও বলেন, আমাদের দেশের এত কিছু অকেজো পড়ে থাকার কোনো যুক্তি নেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সব সিট ভাগ করে দিয়ে সেখানে সবকিছু প্রস্তুত রাখা যেতে পারে। এতে করোনা বাড়লেও ঢাকা বা জেলা শহরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। উপজেলাতেই চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এতে চিকিৎসাসেবা ডিসেন্ট্রালাইজড হবে, মানুষও সেবা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে