গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্তে রক্ত পরীক্ষার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সামান্য জ্বরে আক্রান্ত রোগীদেরও। শনিবার সকালে হাসপাতালের কাউন্টারে তাদের রক্ত পরীক্ষার জন্য টিকিট কাটতে গিয়েও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেলের ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগে কর্মরত টেকনোলজিস্ট পাপিয়া সুলতানা জানান, বর্তমানে আমাদের ল্যাবে দৈনিক ২৫০ জনেরও বেশি রোগীর রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে। তার মধ্যে ৭০—৭৫টির মতো ডেঙ্গু টেস্ট করতে হচ্ছে। দুইমাস আগেও ডেঙ্গু টেস্টের সংখ্যা ছিল ৫—৭টি। গত ২জুলাই ৬৫টি স্যাম্পলের মধ্যে ২জনের ডেঙ্গু পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালের উপ—পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, এ হাসপাতালে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ২৬৯ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ১০জনসহ বর্তমানে মোট ২৭জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান জানান, ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গাজীপুরে ডেঙ্গু পজেটিভ ছিল ২৪ জনের মধ্যে, এছাড়াও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭জনসহ টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ১০জন
এবং কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১জন করে মোট ৩৯জন ডেঙ্গু রোগী ছিলেন। গত ১ জুলাই থেকে ৫জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬৩জনে ডেঙ্গু পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে।গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল এলাকার বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে জ¦রে ভুগছি। ১০০ডিগ্রির উপরে জ¦র থাকে, সাথে শরীর ব্যাথা।
ডেঙ্গু না করোনায় আক্রান্ত হয়েছি তা জানতে হাসপাতালে যাই। সেখানে কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি দীর্ঘ লাইন। প্রায় ২০মিনিট পরে টিকিট কাটতে সক্ষম হই।
ডাক্তারের শরনাপন্ন হই। ডাক্তার আমার লক্ষণ শুনে রক্ত পরীক্ষা করতে বলেন। পরে আবার যাই রক্ত পরীক্ষার জন্য কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে দেখি আবারও পূর্বের ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে গিয়ে বেলা সাড়ে ১২টা বেজে যায়। পরে রক্ত পরীক্ষার জন্য কোনমতো রক্ত দিতে পারলেও রিপোর্ট এদিন পাইনি। সেখান থেকে বলা হলো আজকে স্যাম্পলের সংখ্যা অনেক, পরীক্ষা করতে সময় লাগবে। তাই রিপোর্ট আজকে দেয়া সম্ভব নয়।গাজীপুর মহানগরের না্ওজোর এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া বললেন, তিনিও ক’দিন ধরে জ¦র এবং শরীর ব্যথায় ভুগছেন। হাসপাতালের রোগীর ভিড়ের কথা জানতে পেরে শনিবার ভোরে হাসপাতালের কাউন্টারে যান। তার আগেও তিনি অনেক রোগীকে লাইনে অপেক্ষা করতে দেখেন। তিনি খেঁাজ নিয়ে জানতে পারেন। তারমতো জ¦রের রোগীর সংখ্যাই বেশি।
তাজউদ্দীনে করোনা নেগিটিভ: শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালের উপ—পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, গত ১৯জুন থেকে করোনা স্যাম্পল পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এ যাবৎ ২০জনের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এসব পরীক্ষায় করোনা জীবানু নেগেটিভ হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত ১১জুন করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালানা ও নজরদারি করতে হাসপাতালের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলামকে প্রধান কেও ২২ সদস্যেও একটি কমিটি গঠণ করা হয়েছে।
ডাক্তারদের এসি'র গরমে রোগীরা অতিষ্ঠ: শনিবার সরজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলায় আউটডোর রয়েছে। সেখানে বেশ কিছু এসি স্থাপন করা হয়েছে। এসির ভেতরের অংশ চিকিৎকদের কক্ষের ভেতরে স্থাপন করা হলেও এসির বাইরের অংশ (আউটার) স্থাপন করা হয়েছে চিকিৎকদের রুমের বাইরে ভবনের ভেতরেই রোগীরা সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া থেকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আউটডোরে চিকিৎসা নেয়ার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছিলেন সোনিয়া আক্তার। এমনিতেই মানুষের ভিড়ে গরম লাগছিলো। তিনি বলেন, তার মধ্যে এসি বাইরের অংশ থেকে গরম বাতাস বাইছে আমাদের দিকে। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের আউটডোরে নিজ কক্ষে অবস্থানরত লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সমস্যার বিষয়টি কতৃর্পক্ষের কাছে জানালেও কোন সুরাহা হয়নি।
এসি'র বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ হাসপাতালে আমি যোগদানের আগেই এসিগুলো ওইভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। আমি অবগত হওয়ার পর এ ব্যাপারে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত ওই সমস্যার সমাধান করেনি।
গাজীপুর গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, সমস্যাটার বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করে দেয়া হবে।