বিশ্বজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটের বাইরে রয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ | বৈশ্বিক মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ মানুষ এখনো সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনো পৃথিবীর ২৬৩ কোটি মানুষের কোনো ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছেনা।
শিক্ষা যোগাযোগ ও চিকিৎসাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সুবাদে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হলেও তারা এখনো এ সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।
২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের প্রায় ৫৬৪ কোটি মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তিন বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৪৯০ কোটি।
বিশ্ব যখন রোবট তৈরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি ও সোশ্যাল মিডিয়ার হালনাগাদ নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত, তখনো পৃথিবীর অনেক মানুষ জানেই না ‘প্রযুক্তি’ আসলে কী। আধুনিক এ যুগে দাঁড়িয়ে তাদের কাছে ডিজিটাল জগৎ এখনো অপরিচিত এক বাস্তবতা।
গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ বিশেষ করে গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের অঞ্চল এখনো মোবাইল ইন্টারনেটের বাইরে রয়েছে। এসব এলাকায় ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলা ব্যয়বহুল ও জটিল। যেমন সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে টেলিকম টাওয়ার বসানোর কাজ ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় আটকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা জটিল নীতিমালা রয়েছে। এসব জায়গায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকি এড়িয়ে চলে। ফলে তারা আর সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগই নেয় না।
এছাড়া ব্যয়ের বিষয়টিও বড় একটি বাধা। অনেক নিম্ন আয়ের দেশে সাধারণ ইন্টারনেট সংযোগ নিতে মাসিক আয়ের প্রায় ৯ শতাংশ খরচ হয়, যা উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি। এছাড়া যেখানে সংযোগ আছে, সেখানে বহু মানুষ ডিজিটাল দক্ষতার অভাবে ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে বাড়তে থাকে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগে বৈষম্য বা ডিজিটাল ডিভাইট।
ফ্রি থিংক ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, কেবল ইন্টারনেট কাভারেজ বাড়ালেই ডিজিটাল বিভাজন দূর হবে না। এখানে ইউজেস গ্যাপও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ৯৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযুক্ত অঞ্চলে বসবাস করলেও বাস্তবে ৬৭ শতাংশ তা ব্যবহার করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ব্যবধানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো খরচ। আবার ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতার অভাবও এর জন্য দায়ী।
এ ডিজিটাল বিভাজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রবণতা। কারণ নতুন প্রযুক্তি সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায় না।
ভিন্ন গবেষণা বলছে, যেখানে উন্নত দেশগুলোয় ৮৯ শতাংশ মানুষ দ্রুততম ৫জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারে, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ এ সুবিধা পায়। সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোয় এখনো থ্রিজি ইন্টারনেটই ব্যবহার করে।
তবে ডিজিটাল বিভাজন দূর করা শুধু ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছে দেয়া নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও দক্ষতাও দিতে হবে যেন তারা ইন্টারনেটের পূর্ণ সুযোগ নিতে পারে।
সম্মিলিত এ প্রচেষ্টা জীবনে পরিবর্তন আনতে, নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে ও বৈশ্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা।