বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

পাপ মুক্তির সুযোগ নিয়ে এলো মাহে রমজান

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৭
ছবি-যায়যায়দিন

‘শাবান শেষে নবীন বেশে, উঠল বাঁকা চাঁদ/মহান রবের পক্ষ হতে, মুক্তির-ই বারাত।’ বছর ঘুরে মুসলিম উম্মাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এসেছে দীর্ঘ এগারো মাসের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ। আজ মাহে রমজানের প্রথম দিন।

হজরত সালাম ইবনুল আকওয়া (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন ‘ওয়া আলাল্লাজিনা ইউত্বিকুনাহু’ আয়াতটি নাযিল হয় তখন আমাদেরকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল যে, যার ইচ্ছা সে রোজা রাখবে এবং যার ইচ্ছা সে রোজার পরিবর্তে ফেদিয়া দিয়ে দেবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন ‘মান শাহিদা মিনকুমুশ্্ শাহরা ফালইয়াছুমুহু’ শীর্ষক আয়াত নাযিল হয়, তখন রোজা কিংবা ফেদিয়া দেওয়ার এখতিয়ার রহিত হয়ে যায় এবং সুস্থ সবল ও সমর্থ লোকদের ওপর কেবল রোজা রাখাই অপরিহার্য হয়। (সহিহ বুখারি, মুসলিম, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদ)

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, ইসলামের প্রথম অবস্থায় সালাতের নির্দেশ সম্বলিত তিনটি স্তর যেমন অতিক্রান্ত হয়েছে তেমনি রোজার ব্যাপারেও অনুরূপ তিনটি স্তর পর পর বিন্যস্ত হয়েছে। (১) রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় তশরিফ আনেন তখন প্রতি মাসে তিনটি এবং আশুরার দিন একটি রোজা রাখতেন, (২) এরপর ‘কুতিবা আলাইকুমুছ্্ ছিয়াম’ আয়াত নাজিল হয়। তখন সবারই এখিতয়ার ছিল, যে কেউ রোজাও পালন করতে পারত কিংবা এর পরিবর্তে ফেদিয়া আদায় করতে পারেন, (৩) প্রথমাবস্থায় ইফতার গ্রহণের পর হতে শয্যা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী সম্ভোগের অনুমতি ছিল। কিন্তু শয্যা গ্রহণ করে নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর দিনের রোজা আরম্ভ হয়ে যেত। ফলে ঘুম ভাঙলে রাত থাকা সত্ত্বেও পানাহার এবং স্ত্রী সম্ভোগের এযাজত ছিল না। তারপর আল্লাহ পাক ‘উহিললাকুম লাইলাতাছ ছিয়ামির রাফাছু’ নির্দেশ সূচক আয়াত নাজিল করলেন। এতে ইফতারের পর হতে সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগের অনুমতি প্রদান করেছেন। (সুনানে আহমদ, ইবনে কাছির, সহিহ বুখারি, মুসলিম ও সুনানে আবু দাউদেও অনুরূপ অনুমতি সম্বলিত বর্ণনা আছে)

স্বাভাবিকভাবে ‘ওয়া আল্লাজিনা ইউত্বিকুনাহু’ শীর্ষক আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, যারা পূর্ণ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখতে পারে না, তারা রোজার বদলে ফেদিয়া দিতে পারবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বলে দেওয়া হয়েছে যে, ‘ওয়া আন তাছুমু খাইকুল্লাকুম’ অর্থাৎ রোজা রাখাই হবে তাদের জন্য মঙ্গলকর।

প্রকৃতপক্ষে উপরোক্ত আয়াতের স্বাভাবিক যে অর্থ ধরা হয়, তা সঠিক নয়, সঠিক অর্থ হচ্ছে, ‘রোজা রাখা যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে ফেদিয়া দান করবে।’

আল-কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর ওই রোজা চাপিয়ে দেবেন না, যার শক্তি আমাদের নেই (সুরা বাকারাহ:রুকু-৪০) এই আয়াতে যার শক্তি আমাদের নেই- এর অর্থ হচ্ছে যার সামর্থ্য আমাদের নেই, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, অর্থাৎ যা আমরা করতেই পারি না। বস্তুত আল কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক এ কথাও সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ পাক বান্দাদের এমন কোনো হুকুম প্রদান করেন না, যা সে পালন করতে অক্ষম। যেমন আল-কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ পাক কোনো প্রাণীকে হুকুম প্রদান করেন না কিন্তু এর যা তার সাধ্যের আওতাভুক্ত।’ (সুরা বাকারাহ : রুকু-৪০)।

সুতরাং এ কথা সুস্পষ্ট যে, এই দোয়ার অর্থ এভাবে করা, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর ওই বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যা আমরা বহনই করতে পারবে না’ শুদ্ধ হবে না; বরং এই দোয়াতে শক্তি না থাকার অর্থ হবে, ‘যা আমরা অতিকষ্টে বহন করতে পারি।’

কোরআনুল কারিমে মুসলমানদের লক্ষ্য করে যেখানে রোজার হুকুম দেওয়া হয়েছে সেখানে এই নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে সহজ এবং নমনীয়তা প্রকাশ করতে চান। কিন্তু কষ্ট ও কাঠিন্য কামনা করেন না।’ (সুরা বাকরাহ : রুকু- ২৩)। তাছাড়া ইসলামের সাধারণ নিয়ম-নীতি হচ্ছে এই যে, ‘আল্লাহপাক কোনো মানুষকে শক্তির বহির্ভূত কোনো বোঝা বহন করতে বাধ্য করেন না।’ (সুরা বাকারাহ:রুকু-৪০)। কোরআনুল কারিমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বীন প্রচারের মৌলিক গুণাবলিকে এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদেরকে পুণ্য-কর্মসমূহ নিষ্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন এবং অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করেন এবং যেসব তাউক ও জিঞ্জিরসমূহ তাদের ওপর আরোপিত আছে সেগুলোকে অপসারিত করেন।’ (সুরা আ’রাফ : রুক-১৯)

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে