হত্যা সহ দুটি মামলার মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে মোট ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৩ এ মমতাজ বেগমকে উপস্থিত করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক হামলা,ভাংচুর ও মারামারির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক আইভী আক্তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে বেলা ১২ টায় মমতাজকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-১ উপস্থিত করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরতালের সমর্থনে গোবিন্দল এলাকায় শান্তিপুর্ন মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক মুহম্মদ আব্দুন নূর ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ সময় মামলার বাদির পক্ষে বিএনপির শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও মমতাজ বেগমের পক্ষে কোন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিল না। এক পর্যায়ে বিচারকের নির্দেশে মমতাজ বেগম আদালতে নিজেকে নির্দোশ দাবি করেন।
এদিকে মমতাজ বেগমকে আদালতে তোলার সময় বিএনপি পন্থি আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা তাঁর শাস্তি দাবীতে বিক্ষোভ করেন।
এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ঘটনা ঘটে। পরে সদর থানার ওসি এস এম আমান উল্লাহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা মধ্যে রিমান্ড শুনানী শেষে মমতাজ বেগমকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় আসামি মমতাজ বেগমের উপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে এবং মমতাজকে নিয়ে নানা ধরনের অশ্লিল শ্লোগান দেন।
এরআগে সকাল সারে আটাটায় গাজিপুর জেলার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিরাপত্তায় মমতাজ বেগমকে পুলিশের প্রিজন ভ্যান যোগে আদালতের আনা হয়।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে সিঙ্গাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় মমতাজ বেগমকে তিন নম্বর আসামি করে গত ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মো. মজনু মোল্লা বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আওয়ামীলীগ,পুলিশ সহ ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামী করা হয়।
এছারা গত ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলায় মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খান রিতার গ্রামের বাড়িতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মৃত্যু বাষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়।
হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মামলাটি দাযের করেন। মমতাজ বেগমকে হুকুমের আসামী করে ৮৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
আদালত পুলিশ পরিদর্শক ( ওসি) আবুল খায়ের জানান, আজ বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি মামলায় মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানী হয়। এতে হরিরামপুর থানার মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৩ পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর আরেকটি সিঙ্গাইর থানার মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-১ সাত দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক ও বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খান বলেন,বিগত দিনে মমতাজ বেগম দুর্ণীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।
মমতাজ বেগমের ব্যক্তিগত চরিত্রের ঠিক না থাকলেও সে প্রয়াত জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে হত্যা সহ দুটি মামলার শুনানী হয়েছে। দুটি মামলায় বিচারক আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে মোট ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে ঢাকায় বেশ কিছু থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় মমতাজ বেগম চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে মমতাজ বেগমকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।