ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের হুমকির প্রেক্ষাপটে এখন সবার নজর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিকে। এই বৈঠকটি রাজনৈতিক সংকট সমাধানে একটি বড় বাঁক এনে দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের মত শক্তির অংশগ্রহণ এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই দলগুলো অন্তর্ভুক্ত না হলে নতুন সরকার বা নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
এদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যর্থ হলে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার’ স্বার্থে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। এটি হতে পারে সরাসরি সামরিক শাসন বা ‘টেকনোক্র্যাট/জাতীয় সরকার’ নামে একটি নতুন রূপে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমঝোতায় না এলে তারা বিক্ষোভ, হরতাল, রোডমার্চ, এমনকি সহিংস আন্দোলন শুরু করতে পারে। ফলে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে। আর এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, জনমনে আতঙ্ক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটার ভয় রয়েছে।
এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের ওপর রাজনৈতিক সমঝোতার চাপ বাড়াবে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে কূটনৈতিক একঘরে হয়ে পড়া, বৈদেশিক বিনিয়োগে পতন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সংকটময় এ পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাদের ভাষ্য, রাজনৈতিক শূন্যতায় ইসলামপন্থী বা প্রভাবশালী ষড়যন্ত্রকারী মহল সুযোগ নিতে পারে। সামরিক-বেসামরিক মিলে নতুন ধাঁচের একটি শাসনব্যবস্থা দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এতে দেশে দীর্ঘ মেয়াদী অনিশ্চয়তা তৈরির শঙ্কা রয়েছে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে এই একটি আলোচনার সাফল্যের ওপর বলে মনে করেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা।
তাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে বৈঠকের ব্যর্থতা মানে শুধু একটি সংলাপের ভাঙন নয়- এটি একটি গোটা রাষ্ট্রীয় সম্ভাবনার মুখোমুখি হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর পরিণত আচরণ, সেনাবাহিনীর সংযম, এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের গঠনমূলক ভূমিকা-এই তিনটি বিষয়ই আগামী দিনের মোড় ঠিক করে দেবে।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এই বৈঠককে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, এই বৈঠকটি যদি সফল হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হলে বিরোধী শক্তির ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। প্রধান উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
এনডিটিভি বলছে, ‘মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি হতে পারে।’
টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, ‘এই আলোচনায় সেনাবাহিনী এবং ইসলামপন্থী নেতাদের ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’