শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় জাতি

জালাল আহমদ
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৭

বাংলাদেশের 'শীর্ষস্থানীয়' আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন 'সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি'। এক সময় এই সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীদের 'দলীয় পরিচয়' মুখ্য ছিল না। নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতো আইন অঙ্গনে প্রার্থীর অবদান, একাডেমিক পারফরম্যান্স, প্রফেশনাল এক্টিভিটিজ, পেশাগত জীবনে আইনজীবী সুলভ আচরণ ইত্যাদি।

গত দুই বছরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে যে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ রয়েছে তার জীবন্ত সাক্ষী আমি।অন্যদিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পর পর চার বার অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই ঘটনা যেহেতু আমার চোখের সামনে ঘটেনি, সেহেতু আমি প্রতিবাদ করি নি এবং লেখালেখি করি নি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আমার চোখের সামনেই ব্যাপক অনিয়ম, হট্টগোল, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাব কমিটির আহ্বায়ক মশিউজ্জামান কে অপমান, কারচুপির ঘটনা ঘটেছে বিধায় প্রতিবাদ না করলে রোজ কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার সামনে আমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে। তাই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির বর্ণনা জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি, এবারের নির্বাচনে অতীতের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

প্রথমবার ২০২২ সালে যেভাবে অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছিল: সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সচরাচর বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে থাকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের হাঁকডাক থাকলেও ভোট কম। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে বিএনপির আইনজীবীদের প্রতি সাধারণ আইনজীবীদের সমর্থন 'উঠানামা' করছিল।২০২১ সালে সমিতির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু মারা যাওয়ার পর সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার কথা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিনের । কিন্তু তিনি জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী হওয়ার কারণে এই পদে আসীন হতে পারেন নি। বিএনপিও তাঁকেও জোরালো সহযোগিতা করেন নি। সেই সময় থেকেই উচ্চ আদালতের এই সমিতিতে জামায়াতের সাথে বিএনপির 'মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব' শুরু। ২০২২ সালের সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কোন পদেই জামায়াত কে মনোনয়ন না দেয়ায় বিএনপির আইনজীবীদের সাথে জামায়াতের আইনজীবীদের 'প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব' তৈরি হয়। তবে বিএনপির আইনজীবীদের 'যুক্তি' যেসব পদে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন, সেই পদের জন্য জামায়াতের 'শক্ত' প্রার্থী ছিল না। ফলে সেই নির্বাচনে জামায়াতের অনেক আইনজীবী ভোট দিতে যায় নি। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা এমন একটি সুযোগ খোঁজ ছিল ‌। ভোটের দিন বড় শোডাউন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

তবু ১৫ এবং ১৬ মার্চ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের পর ১৭ মার্চ গণনায় দেখা যায় সবকটি পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের 'প্রাপ্ত ভোটের' ব্যবধান কাছাকাছি। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা এতদিন পর একটা 'মোক্ষম সুযোগ' পেয়ে গেল।সেদিন রাত নয়টায় ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট আব্দুর নুর দুলাল তাঁর সমর্থকদের নিয়ে যথারীতি মিছিল বের করেন। তাঁর সমর্থকদের শ্লোগান 'এই মুহূর্তে খবর এল, দুলাল স্যার এগিয়ে গেল'।

ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী আইনজীবী যিনি শেখ পরিবারের সদস্য, তিনি এসে সমিতির সভাপতির রুমে হাজির। তিনি সবাইকে মাঠে 'থাকার' নির্দেশ দিয়ে চলে গেলেন।

রাত দশটার দিকে ভোট গণনা শেষে ফলাফলে দেখা গেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি সহ ৬টি পদে এগিয়ে ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা এবং সাধারণ সম্পাদক ,‌দুটি সহ- সাধারণ সম্পাদক,কোষাধ্যক্ষসহ অপর ৮টি পদে এগিয়ে ছিল বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সমিতির 'সম্পাদক' পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা সভাপতি পদে জিতলেও সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতো না। সেই সময় অঘোষিত ফলাফলে সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ৪৭ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। ফলাফল ঘোষণার একটু আগেই আওয়ামী লীগপন্থী সাদা দলের আইনজীবীরা সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে বিক্ষোভ করে। পুনরায় ভোট গণনার বিষয়টি সমিতির গঠনতন্ত্রে নেই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মশিউজ্জামান তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ফলাফল ঘোষণায় অনড় থাকে। ফলাফল ঘোষণার জন্য সমিতির দক্ষিণ হলে ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যায়।

এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দিকে খালি পানির বোতল এবং ব্যালট পেপার ছুঁড়ে মারে। ক্ষুব্ধ হয়ে ফলাফল ঘোষণা না করেই তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। শেষ পর্যন্ত রাত তিনটার দিকে বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে ঘোষণা দেন যে 'সম্পাদক' পদে ভোট পুনরায় গণনা নিয়ে দুই প্রার্থীর সাথে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি পরদিন ১৮ মার্চ জুমার নামাজের পর দুই প্রার্থীর উপস্থিতিতে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করবেন। 'চরম ধৈর্যের পরিচয়' দেয়া এই ভদ্রলোক অপমান এবং অপদস্থ বোধ করার কারণে সাব কমিটির আহ্বায়ক থেকে পদত্যাগ করেন ।এর পর আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা 'নিজেদের লোক' কে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদ টি বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কাছ থেকে কেড়ে নেন।তখন থেকেই আওয়ামী লীগপন্থী সাদা দলের আইনজীবীদের সঙ্গে বিএনপিপন্থী নীল দলের আইনজীবীদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ চলে আসছে। তবে সেটা ছিল তুষের আগুন!

দ্বিতীয়বার ২০২৩ সালে যেভাবে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো:

২০২৩ সালে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল আইনজীবীরা শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল হতে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়।

মোঃ মনসুরুল হক আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী হলেও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা মেনে নিয়েছিলেন 'স্বচ্ছ ইমেজ' থাকার কারণে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা নিজেদের লোক হলেও তাকে 'বিশ্বাস' করতে পারেন নি। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা তাঁর কাছে তাদের কথা মতো 'ব্যালট পেপার ছাপানো এবং ফলাফল গণনা'র আবদার করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের কথা এড়িয়ে তিনি নিজের গতিতে কাজ করতে চেয়েছিলেন। মেশিনে ফলাফল গণনা করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা মেশিনের সাহায্যে ভোট গণনা মানে নি।কারণ এতে ভোট ডাকাতি করে তাদের 'ফায়দা হাসিল' সম্ভব হবে না। আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের চাপে নির্বাচনের আগে মনসুরুল হক চৌধুরী 'ব্যক্তিগত কারণ' দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর সৃষ্টি হয় পুরনো দিনের সেই একই বিরোধ।

নির্বাচনের আগে সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। সেই সাথে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে। কমিটিতে থাকা আমাদের ৩ জন সদস্যকে কিছুই জানায়নি। ১ হাজার ব্যালট পেপার বেশি ছাপানো হয়েছিল এবং নির্বাচনের আগে রাত ১০টার দিকে ব্যালট পেপারে সিল মারছিল আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। সিল মারার সময়ই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সেখানে হাজির হন। তৈরি হয় হট্টগোল। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের বক্তব্য, সিল মারা হচ্ছিল না। ব্যালট পেপারে আহ্বায়ক সই করছিলেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে এবং ছিঁড়ে ফেলে। মামলা করা হয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নামে।

ভোটের দিন ১৫ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেয় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। বাধা দেয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। কয়েক দফা ধাক্কাধাক্কি চলে। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের শক্ত অবস্থানের কারণে ভোট গ্রহণ শুরু করা যায় নি। সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ এসে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের। তারা নির্বাচনের স্থান থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর পুলিশ কিল-ঘুষি-লাথি সহ বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকদের। সাংবাদিক পেটানোর হুকুমদাতা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হারুনের করুণ পরিণতি জাতি দেখেছেন।

ধরেই নিলাম, বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পেটানোর একটা যুক্তি এভাবে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে যে, তারা নির্বাচনে বাধা দিচ্ছিলেন। যদিও এই যুক্তি দিয়ে পেটানোর কোনো সুযোগ নেই।কারণ এটা তাদের অধিকার।কিন্তু সাংবাদিকদের কেন পেটানো হলো? তারা তো আইনজীবীদের পেটানোর সময় পুলিশকে বাধা দেয়নি, বাধা দেয়নি নির্বাচনেও। তাহলে সাংবাদিকদের অপরাধ কী ছিল?

অপরাধ ছিল, যা ঘটছিল তা তারা দেখছিলেন, ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। বিনা কারণে আইনজীবীদের পেটানোর দৃশ্য তারা ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সহ কোনো কিছু যাতে সাংবাদিকরা না দেখেন, ক্যামেরায় ধারণ করতে না পারেন, সেকারণে তাদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কারণ সাংবাদিকরা এসব অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের অপকর্মের রেকর্ড জাতি জানতে পারবে।

এই দায় কার? কারা পুলিশ ডেকে আনলেন? ঐদিন দুপুরে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক প্রার্থী সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির কাছে নির্বাচনের অনিয়ম এবং সাংবাদিকদের পেটানোর বিষয়ে সম্পর্কে অবহিত করেন।

প্রধান বিচারপতি বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের বলেছেন, তিনি পুলিশ ডাকেননি বা পুলিশ আসার অনুমতি দেননি। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ডেইলি স্টারের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “নিয়ম না থাকলেও এটাই প্রচলিত রীতি যে প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পুলিশ ঢুকতে পারে না।”

কিন্তু পুলিশ ডাকার দায়-দায়িত্ব কেউই নিচ্ছিলেন না। একটি মামলা থেকে বিষয়টি মোটামুটি স্পষ্ট হলো।

এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলা থেকে জানা যায়, আওয়ামীপন্থী আইনজীবী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর নূর দুলাল পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। পুলিশের মামলার নথিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশের মামলার নথিতে লেখা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্য ও সাধারণ আইনজীবীরাও পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে থাকা তাদের ৩ সদস্য পুলিশের সহযোগিতা চাননি। তারা আরও বলছেন, প্রধান বিচারপতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে কারো পুলিশ ডাকার এখতিয়ার নেই। পুলিশ ডাকার বিষয়টি আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা এখন স্বীকারও করতে চাইছেন না।

ঘটনা পরিক্রমা বিশ্লেষণ করলে পরিস্কারভাবেই বোঝা যায় যে, আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাই পুলিশ ডেকেছেন। পুলিশের করা মামলায় তা লেখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পেটানোর নির্দেশ কে দিলেন? যারা ডেকেছেন, তারাই? যারা পুলিশ ডেকে এনেছেন, তারা কি এই দায় এড়াতে পারেন?সাংবাদিকদেরও পিটিয়ে বের করে দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করতে হলো কেন?

১৫ মার্চ দুপুর বেলায় জোহরের নামাজের সময় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের বিশাল বহর নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের ধাওয়া দেন। আবার আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা পুলিশের সহায়তায় বিএনপির আইনজীবীদের নেতা,সাবেক ছাত্রনেতা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এজিএস এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল এর চেম্বার ভাংচুর করেন। ঘটনার সময় সজল ভাই চেম্বারে ছিলেন না।

১৫ মার্চের পর ১৬ মার্চ আইনজীবীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান ছিল।১৭ মার্চ ফলাফল ঘোষণা করা হলো। যথারীতি পূর্ণ প্যানেলে জয়ী আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা। শুধুমাত্র এক বছরের দায়িত্ব পালনের জন্য সারাজীবন ভোট ডাকাতির 'কলঙ্ক' বহন করতে হবে তাদের।

পচা ডিম নিক্ষেপ: গত বছরের ২ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা দায়িত্ব গ্রহণের দিন পঁচা ডিম নিক্ষেপ করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। তাৎক্ষণিকভাবে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরাও পাল্টা ডিম নিক্ষেপ করেন। হঠাৎ কোথায় থেকে ডিম আনলো তার সূত্র আজ পর্যন্ত অজানা !

ইফতার মাহফিল পন্ড: বিএনপি এবং সাধারণ আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির 'এডহক কমিটি' গঠন করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি পরিচালনা করার জন্য।এডহক কমিটি ও দুলাল- ফকির গ্রুপের চেয়ার ছোড়াছুড়িতে গত ০৬/০৪/২৩ ইং ইফতার মাহফিল পন্ড হয়ে যায়। এদিন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের গায়ে বোতল নিক্ষেপ করেছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।যা মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।

থেকে নেই সাইবার যুদ্ধ : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কে কেন্দ্র করে ২০২২ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সাইবার যুদ্ধ। কতদিন চলে আল্লাহ পাক ভালো জানেন।

মামলা-হামলা: সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কে কেন্দ্র করে মোট ৬ টি মামলায় মোট ২৫ জন আসামি করা হয়েছে। মামলা দিয়েই টিকে থাকার চেষ্টা করছে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। মামলা এবং হামলা চালিয়ে সবকিছুর সমাধান করা যায় না।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় জাতি:

আগামী ৬ এবং ৭ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। যথারীতি আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী এবং বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা মুখোমুখি। অতীতের তিক্ততার মাঝেও এবার বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা 'আস্থা' রাখছেন নির্বাচন সাব কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের এর উপর।যদিও তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী।

গতকাল আইনজীবী এবং প্রার্থীদের নিয়ে পরিচিতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে নির্বাচন সাব কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র এডভোকেট আবুল খায়ের দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। বাংলাদেশে আজ কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই।ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে যা ঘটেছে তা জাতির কাছে আইনজীবীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মতো 'বিবেকহীন' ভোট ডাকাতি হলে মানুষ আরো বেশী আস্থা হারাবে। তাই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বাংলাদেশ। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় জাতি।

কলামিস্ট: সাংবাদিক এবং নির্বাচন বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে