শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

​ শেরপুরে ৫২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২৯টিতেই নৌকার পরাজয় কেন?

তপু সরকার হারুন, শেরপুর
  ১০ জানুয়ারি ২০২২, ২০:১৭

গত ৫ জানুয়ারি বুধবার ছিল শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ৫ম ধাপের শেষ ৭ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল উৎসবমুখর, চোখে পড়ার মতো ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলাকালে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ৬৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন।

দ্বিতীয় ধাপে শেরপুর সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এখানে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ৩ জন কে ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচিত ৬ জন । সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা ৯টি।

তৃতীয় ধাপে নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে নালিতাবাড়ী ও নকলায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ২টিসহ ৯টিতে আওয়ামী লীগের নৌকা।

চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপ শ্রীবর্দী ও ঝিনাইগাতী ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ টিতে আওয়ামী লীগের নৌকা ।

শেরপুর জেলায় ৫২টি ইউনিয়নের মধ্য ২৯টিতেই নৌকার ভরাডুবি। এদিকে ২৩টি নৌকা বিজয়ের মধ্য ৫টিতে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায়। নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর এবং প্রভাবমুক্ত। শেরপুর জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশিদ জেলা পুলিশ সুপার মো. নাহিদ হাসান চৌধুরী, জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শানিয়াজ্জামান তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সহকারী কমিশনার অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটসহ জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার কঠোরভাবে নিরাপওার দায়িত্ব পালন করে।

শেরপুরের অভিজ্ঞ মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে জেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং অনেক নেতারও উন্নয়ন হয়েছেÑ বাড়ি, গাড়ি থেকে শুরু করে সবই করেছেন পরিবার কেন্দ্রিক। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতৃত্ব চলেছে পরিবারকেন্দ্রিক ও ইজারাদারের মতো। প্রতিটি ওয়ার্ডেও একই অবস্থা এবং বেশির ভাগ পরিচয় বহন করে. কে কার লোক?

এদিকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের গ্রুপিং উপজেলা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও ইউনিয়নগুলোতেও ২/৩টি করে গ্রুপিং।

স্থানীয় এমপির মৌন সমর্থন না থাকলে, সেখানে তার নিজের লোকজন ও চারপাশের চাটুকার ও হাইব্রিড নেতারা প্রকাশ্যে নির্বাচন করলেও ভোটের সময় নৌকা ঠেকাও বলে আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।

আরেকটি বিষয় দিন দিন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে নব্য ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগের কারণে অনেক ত্যাগী এবং দুঃসময়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে।

তৃতীয় ধাপে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ইউপি নির্বাচনের ২দিন আগে মুকুল তালুকদার নামে একজন নৌকার মনোনীত প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় একটি বক্তব্যই গোটা উপজেলার ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের প্রভাব পড়ে বলে নালিতাবাড়ী আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন। তার বক্তব্যের ভিডিওটি নির্বাচনের ২দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় : ওই ওসির আমার কথা শুনতে হবে ..এবং আমার কথা শুনতে হবে , বাংলাদেশে ১টি এসপি থাকলে , যত এসপি আছে সব আমার। নৌকা আমার যা কমু তাই করব পুলিশ, পিট্টা রসুন তুইলা ফেলমু। তার নির্বাচনী এ বক্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেটিও নৌকার পরাজয়ের বড় কারণ ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আধিপত্য নিয়ে সেখানে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রæপে বিভক্ত। এরই মধ্যে চাঁদাবাজ, ভাঙচুর, ভূমি দখল ও মাদক নিয়ে একজন প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদপুষ্ট নালিতাবাড়ী পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের নামে দুটি মোকাদ্দমা হয়। তার বিরুদ্ধে দেশের নামকরা দুটি টিভি চ্যানেলে ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিউজ হয়। এ মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাজারো অভিযোগ। প্রকাশ্যে কথা বলার লোক নেই। নীরবে নিভৃতে নালিতাবাড়ীর মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। নালিতাবাড়ী ইউপি নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ের এটাও একটি বড় কারন।

নকলা উপজেলায় সেখানেও একই অবস্থা বিবদমান দুটি গ্রুপ এবং একজনের একক আধিপত্য। সেখানে একটি কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন একজন সাংবাদিককে তার দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে গাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে অপমানিত করেন পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় আসে। ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের এটিও একটি কারণ বলেও অভিজ্ঞ মহল মনে করে। জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে একই অবস্থা বিরাজমান।

সে কারণেই এক শ্রেণির স্থানীয় হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জামায়াত, বিএনপি ও সরকারের শরিকদলের লোকজন মিলে স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে