শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ-কূল ও-কূল দু'কূল গেল তৈমূরের

হাসান মোল্লা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৬

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার দলের প্রার্থী পরাজিত হবে এমন বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে লড়তে গিয়ে এ-কূল ও-কূল দু'কূলই হারিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। একদিকে মেয়র হওয়ার সাধ মিটল না, অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সবচেয়ে বড় নেতার পদ হারাতে হয়েছে। এ ছাড়া দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি অব্যাহতি পাওয়ার পর 'আলহামদুলিস্নাহ' শব্দ উচ্চারণ করে বিএনপিতে ফেরার রাস্তায়ও কাঁটা বিছিয়েছেন তিনি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দেশের অনেক স্থানে স্থানীয় নির্বাচন বিএনপির নেতাদের স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বাহ্যিক সমর্থন ছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের হিসাব অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে ভিন্ন। কারণ সরকার দলের প্রতীক ও প্রার্থী হওয়ার চেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যক্তি ইমেজ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এজন্য এখানে বিএনপি নেতার স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীর ঘোর আপত্তি ছিল। কেন্দ্রীয় নেতারা এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তৈমূর আলম খন্দকারকে বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কথাই কানে নেননি তৈমূর। বরং এর আগে দল তাকে বলির পাঁঠা বানিয়েছে বলে বিভিন্ন স্থানে বলে নেতাকর্মী জনগণের সহনুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুরনো ইতিহাস সামনে এনে দলের হাইকমান্ডের সমর্থন পাওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বরং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে তৈমূরকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় বিএনপি। ওই ঘটনার ৯ দিন পর ৩ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে তৈমূরকে প্রত্যাহার করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তৈমূর আলম খন্দকারকে সংগঠনের সব ধরনের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতির সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তৈমূর বলেছিলেন, 'যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, আলহামদুলিলস্নাহ। আমি মনে করি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আমাকে জনগণের জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আমি রিকশাওয়ালাদের তৈমূর, রিকশাওয়ালাদের কাছে ফিরে যাব। ঠেলাগাড়িওয়ালাদের তৈমূর ঠেলাগাড়িওয়ালাদারের কাছে ফিরে যাব। আমি গণমানুষের তৈমূর, গণমানুষের কাছে ফিরে যাব।' সূত্রমতে তৈমূরের এই প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মী ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই বলেন, দল থেকে বের হওয়ার পর যদি গণমানুষের হয়। তাহলে বিএনপি কি গণমানুষের বাইরের নাকি? এজন্য স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীও নির্বাচনে তার পক্ষে থাকেনি। সমর্থকদেরও অনেকে ভোট দিতে যায়নি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ফল প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, বিএনপি বারবার বলে আসছে বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তা বারবার প্রমাণিতও হয়েছে। এজন্য এই সরকারের অধীন সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনও এর বাইরে নয়। দলের এক নেতা এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে এই সরকারের অধীন তামাশার নির্বাচন নিয়ে কি বলার থাকতে পারে? নির্বাচনের ঐতিহাসিক ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জেতাতে এবং সরকার দলের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারাতে বিএনপির চেষ্টা ছিল সর্বোচ্চ। শামীমকে হারাতে নিজেদের প্রার্থী তৈমূর খন্দকারকে শেষ রাতে বসিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি দলটি। সেই নির্বাচনে আইভী জয়লাভ করেন। সে বছর ২৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনে আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথগ্রহণ করেন। আর সর্বশেষ রোববার তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়ে নিজেকে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে