বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিএনপি-এনসিপির দ্বন্দ্বে রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর শঙ্কা

সাখাওয়াত হোসেন
  ২১ মে ২০২৫, ২০:১২
বিএনপি-এনসিপির দ্বন্দ্বে রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর শঙ্কা
ছবি: লোগো

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে।

একদিকে ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের বিষয় নিয়ে বিএনপি প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব, অন্যদিকে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এনসিপি এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিএনপিকে অভিযুক্ত করছে।

1

ফলে রাজনীতির ময়দানে এই দুই বিরোধী দলের দ্বন্দ্বে রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই দলের মধ্যে এতোদিন যে বাকযুদ্ধ চলেছে, তা এখন মিছিল-মিটিং ও পাল্টা কর্মসূচিতে রূপ নিয়েছে। বিএনপি ইতিমধ্যে শপথ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

এনসিপিও পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে ইসি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দ্ব›দ্ব যদি নিয়ন্ত্রিত না থাকে, তবে তা সহিংস রূপ নিতে পারে এবং সাধারণ জনগণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

এই দ্বন্দ্বের একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সরকারকে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে, রাজপথকেন্দ্রিক রাজনীতিতে পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও সংলাপের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণের পথ তৈরি করা জরুরি। তা না হলে রাজপথের উত্তাপ রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দেশের সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী চক্র এর সুযোগ নিতে তৎপর হয়ে উঠবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দু’পক্ষের দ্ব›দ্ব সংঘাত সহিংসতায় রুপ নিলে তা সরকারকেও বেকায়দায় ফেলবে। কেননা এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে ততটা সহজ হবে না। এতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। যা সরকারের বিরুদ্ধে জনমতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এরইমধ্যে একাধিক অঞ্চলে দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দখলদারি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধ বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে গুজব, কটাক্ষ ও অপপ্রচারে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ততা বেড়েছে।

এর আগে ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ এই ইস্যুতেও দুই দলের বিরোধী অবস্থান দেখা গেছে। সংস্কার প্রশ্নেও প্রকাশ্যে পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা গেছে দুই দলের নেতাদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের ইস্যুটিকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে বিএনপি শো-ডাউনের রাজনীতি করছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপি বারবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দাবি করে আসছে।

তবে ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’ এই টাইমলাইনই বেঁধে দিচ্ছে সরকার। ফলে মি. ইশরাকের ইস্যুকে কেন্দ্র করে যা ঘটছে সেটিকে মূলত ‘বিএনপির সাথে এনসিপির শক্তির পরীক্ষা’।

এদিকে মেয়র নির্বাচনের পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ‘মীমাংসিত ইস্যু’ নিয়ে বিএনপির এই মাঠে নামাকে ‘শো-ডাউনের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ। কারণ হিসেবে তিনি মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারির পরই এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর তো পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। তখন তারা কারচুপির অভিযোগ এনে প্রার্থিতাই প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে বলা যায় যে নির্বাচনটাই তাদের (বিএনপি) কাছে ভুয়া।’ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে কালক্ষেপণ করছে এই মনোভাব থেকেই বিএনপির এই রাজনৈতিক অবস্থান বলে মনে করছেন মহিউদ্দিন আহমদ।

এদিকে বিভিন্ন সংস্কার প্রশ্নে এনসিপি ও বিএনপির সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বিরোধও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতিতে তো কোনো পরিবর্তন আসেনি। পাঁচই অগাস্টের কোনো ছোঁয়া তাদের লাগেনি। এখানেই এনসিপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক বিরোধ।’ এক্ষেত্রে সরকারের ‘ব্যালেন্সড’ অবস্থান কতদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে