পানি এনে দেবার জন্য একজন, নাস্তা খাওয়ানোর জন্য একজন, কাগজপত্র দেখানোর জন্য আউট সোর্সিং-এ চার জন এবং অফিস সহায়ক হিসেবে একজন কাজ করেন। আর খাজনা আদায়ের জন্য রয়েছেন আরও একজন। এছাড়া অফিস কেন্দ্রিক দালালও আছেন কয়েকজন। তারপরও জনবল সংকটে কাজ করতে পারেন না তিনি।
এমনটিই দাবি মণিরামপুরের নেহালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার বিষ্ণুপদ মল্লিক। তিনি নেহালপুর ইউনিয়ন ভ্মি অফিস কেন্দ্রিক গড়ে তুলেছেন ঘুসের সাম্রাজ্য। অনেকেরই দাবি ইউনিয়ন তহসিলদার বিষ্ণুপদ মল্লিকের এই ভ্মি অফিসে যে জনবল, তা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভ্মি) কার্যালয়েও নেই। অফিসে ঘুস ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না অভিযোগ সেবা গ্রহনকারিসহ স্থানীয়দের।
বুধবার দুপুরের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের একটি টিম এই ভূমি অফিসে অভিযান চালায়। জমির নামজারি, কাগজপত্র দেখিয়ে দেওয়া এবং খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও সেবা গ্রহনকারিদের হয়রানিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।
জানাযায়, বিষ্ণুপদ মল্লিক নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘুস আদায়ে এই ভূমি অফিস কেন্দ্রিক গড়ে তুলেছেন ঘুসের সাম্রাজ্য। কাজের দোহায় দিয়ে শুধু আউট সোর্সিং-এ তিনি বাদশা মোল্যা, চয়ন কুমার পাল, শুভংকর কর, রিপন কুমার কুন্ডু নামের চারজনকে নিজের মত করে নিয়োগ দিয়েছেন। এর বাইরে হালিম মোল্যা ও মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন কাজ করেন। এছাড়া অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করেন আশিকুল ইসলাম।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তার বাড়ি নেহালপুর ভূমি অফিসের পার্শ্ববর্তী পোড়াডাংগা গ্রামে হওয়ায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। আওয়ামীলীগ ঘরোয়ানা এই বিষ্ণুপদ মল্লিক আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালিন অদৃশ্য খুঁটির জোরে ঘুষ বাণিজ্য মগ্ন হয়ে যান। আর এই ঘুষ বাণিজ্য করে তিনি ভারতে জমি ক্রয় করে সেখানে আলিশান বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। যে কারনে তিনি প্রায়ই ছুটি নিয়ে ভারতে পাড়ি জমায় বাড়ির কাজ দেখভালের জন্য। এছাড়াও প্রচার রয়েছে মণিরামপুর পৌর শহরে কয়েক জায়গায় জমি ক্রয় করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষ্ণুপদ মল্লিক জানান, কাজ সামলাতে কাগজপত্র খোজার জন্য আউট সোর্সিং-এ চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যা তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবহিত বলে তিনি দাবি করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হালিম মোল্যা তার পানি খাওয়ান এবং মুজিবুর রহমান তার নাস্তা এনে দেন।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি (এ্যাসিল্যান্ড) নিয়াজ মাখদুম বলেন, কোনভাবেই চারজনকে দিয়ে আউট সোর্সিং-এ কাজ করার বিধান নেই এবং তাকে অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তিনি বিষয়টি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
এদিকে দুদকের অভিযান চলাকালে স্থানীয় নেহালপুর গ্রামের আলমগীর শরীফ ও আব্দুল খালেক গাজী বিষ্ণুপদ মল্লিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির এন্তার অভিযোগ তুলে ধরেন। আলমগীর শরীফ দুদকের টিমের কাছে অভিযোগ করেন, তার জমি নামজারি করতে বিষ্ণুপদ মল্লিক ২৪ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এছাড়া স্থানীয় আম্রঝুটা গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, তিনি পত্রিক জমির খাজনা দিতে গেলে তার কাছে অতিরিক্ত বিশ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন তিনি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে ফের বিষ্ণুপদ মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল সংযোটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অভিযান শেষে তহসিলদার বিষ্ণুপদ মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে দূর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর এর সহকারী পরিচালক আল-আমিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত গণমাধ্যমক কর্মীদের নিশ্চিত করেন।