শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২
জুলাইয়ের আড়ালের গল্প

‘সিক্রেট কোডিং ছিল দুই চট্টলার বাটন ফোনের লোকাল কনভার্সেন’

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৩
‘সিক্রেট কোডিং ছিল দুই চট্টলার বাটন ফোনের লোকাল কনভার্সেন’
সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদ

গতবছরের জুলাই-আগষ্টে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেগুলোর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে হাজারো নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়।

আন্দোলন দমাতে না পেরে একপর্যায়ে সারাদেশের সকল প্রকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। তখন আন্দোলনকারীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল অফলাইন।

সেসময়ের আড়ালের গল্প তুলে ধরেন ঢাবি শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিকুর রহমান।

তিনি আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুলাইয়ের সেই আড়ালের গল্প তুলে ধরেন।

আশিকুর রহমানের ফেসবুক পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘জুলাই আন্দোলনের সিক্রেট কোডিং সিস্টেম’ আজ হঠাৎ জুলাই বিপ্লবের একটা মজার স্মৃতি মনে পড়লো। চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকজন ভালো রিলেট করতে পারবেন।

আন্দোলন তখন একেবারে তুঙ্গে। সকল প্রকার ইন্টারনেট সংযোগ সরকার বন্ধ করে দিছে। তাই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হইলো অফলাইন। তখন আন্দোলনের প্রয়োজনে এক প্রকার বাধ্য হয়ে কয়েকটা বাটন ফোনের মাধ্যমে আমরা সকল যোগাযোগ মেইন্টেইন করতাম।

যাইহোক, এমনই এক ক্রিটিক্যাল সময়ে একদিন ফরহাদ ভাইয়ের মোবাইলে একটা কল আসলো। ভাই কলটা রিসিভ করলেন এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ কিছুক্ষণ কি কি যেন বললেন।

আমার কাছে চট্টগ্রামের ভাষা আর চাইনিজ ভাষার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই, কারণ কোনোটারই আমি কিছুই বুঝি না।

সাধারণত দেখতাম যে ফরহাদ ভাইয়ের বাড়ি থেকে কেউ ফোন করলে তিনি এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই বাড়িতে কার সাথে কথা বললেন?

ভাই বললো বাড়ি থেকে না, সাদিক ভাইয়ের সাথে কথা বললাম।

আমি মাথা চুলকাইতেছি! ভাবতেছি ঘটনা কি? কারণ, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে আমি অনেকদিন ধরেই আছি, কিন্তু কখনো সাদিক ভাইয়ের সাথে এমন চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতেতো দেখি নাই।

বললাম ভাই, আপনি সাদিক ভাইয়ের সাথে আবার কবে থেকে এই ভাষায় কথা বলা শুরু করলেন? বুঝলাম না। ফরহাদ ভাই মুচকি হাসি দিয়া বললো, ‘যতটুকু সম্ভব সতর্ক থাকা আরকি’ পরে বিষয়টা বুঝতে পাইরা আমি একা একা কিছুক্ষণ হাসলাম, ভাবলাম যে মোবাইল ট্রেকিংয়ের দায়িত্বরত ব্যক্তি শুধু চট্টগ্রামের লোক না হলেই হবে, ওর বাপেরও ক্ষমতা নাই খুঁজে বাইর করার যে সাদিক-ফরহাদ কি নিয়া আলাপ করছে!

এরপর থেকে যতদিন ইন্টারনেট ছিল না, ততদিন মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পলিসি নিয়া আলাপ করা দরকার হইলে তাঁরা চট্টগ্রামের ভাষা ব্যবহার করতো।

তাই ফরহাদ ভাইকে এই ভাষায় কথা বলতে দেখলেই কাছে গিয়ে বসে পড়তাম, ফোনের কথা শেষ করে যেন এগুলো আমাদেরকে আবার বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিতে পারে।

আমি বলতাম ভাই, এই সময়ে আপনারা সভাপতি-সেক্রেটারি দুজনেই চট্টগ্রামের হওয়া এটাও বোধহয় আল্লাহর একটা খাস রহমত!

চট্টগ্রামের ভাষাকে আপনারা ‘সিক্রেট কোডিং সিস্টেম’ বানায়া ফেলছেন। কি একটা অবস্থা!

উপরের আলাপ থেকে আমরা কইতে পারি যে জুলাই বিপ্লবের পলিসি মেকিংয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষারও একটা ভালো কন্ট্রিবিউশন ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে