এশিয়া কাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে সফলতম দল ভারত ও শ্রীলংকা। অন্যদিকে গেল পাঁচ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত সাফল্য পাবার পরও এশিয়া কাপের মঞ্চে এখনো তেমন সাফল্য নেই বাংলাদেশের। ২০১২ সালে প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। ছয় বছর পর আবারও ওয়ানডে ফরম্যাটের ফাইনালে ওঠে টিম টাইগার্স। দুবারই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হেরে আশাভঙ্গ হয়। ওয়ানডে বিশ্বকাপ দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তার আগে আরেকটি এশিয়া কাপ। ভালো করার লক্ষ্য অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব বলে গেছেন, ‘প্রথম যে বিষয়টা, আমাদের প্রথম দুটো ম্যাচ গুরুত্ব সহকারে খেলতে হবে। পরের রাউন্ডে কোয়ালিফাই হতে হবে। একটা একটা ম্যাচ করে এগোতে চাই। এমন না যে আমরা একবারেই কোথায় যাব, এমনটা চিন্তা করছি। প্রতিটা ম্যাচ ধরে চিন্তা করব এবং ওই ভাবেই প্রস্তুতিটা সেরে নেব। ওভাবেই ভালো ফল করার চেষ্টা করব। যদি সুযোগ থাকে সব ম্যাচেই জয়ের চেষ্টা করব।’
এ সময়ে ৪৯টি ম্যাচের মধ্যে ৩১টিতে জয় ও ১৬টিতে হেরে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। এছাড়া ১টি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়েছে টিম ইন্ডিয়ার।। ভারতের শতকরা জয়ের হার ৬৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
ওয়ানডে ফরম্যাটে ২০০০ এবং ২০১২ আসরে তৃতীয় সর্বোচ্চ দু’বার শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। ৪৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ২৬টি জয় ও ১৮টিতে হেরে যাওয়ায়, পাকিস্তানের শতকরা জয় ৫৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। তাদের ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
এই তালিকায় জয়ের দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশ। ৪৩টির মধ্যে মাত্র ৭টিতে জয় ও ৩৬টিতে হার রয়েছে টাইগারদের। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ হার বাংলাদেশেরই। তাদের শতকরা জয় ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দু’বার ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছে আফগানিস্তান। ৯ ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে জয়, ৫টিতে হার ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে আফগানদের। তাদের শতকরা জয় ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
২০০৪, ২০০৮ এবং ২০১৮ ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনবার এশিয়া কাপে খেলে ৬ ম্যাচের সবকটিতে হেরেছে হংকং।
ওয়ানডে ফরম্যাটে ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে দু’বার অংশ নিয়ে ৪ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হেরেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এবারের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো খেলবে নেপাল। ২০১৬ এবং ২০২২ সালে টি২০ ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে যথাক্রমে- ভারত এবং শ্রীলংকা।
এ ফরম্যাটে ১০টি ম্যাচ খেলে ৮টি জয়ে শতকরা ৮০ শতাংশ জয় আছে ভারতের। ১০টিতে খেলে ৬টিতে জিতে শতকরা ৬০ শতাংশ জয় আছে শ্রীলংকার। ১০ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতে জয়ে পাকিস্তানের জয়ের শতাংশ ৫০। বাংলাদেশ ৭টিতে অংশ নিয়ে ৩টিতে জয় ও ৪টিতে হেরেছে। ৫টি ম্যাচ খেলে দুটি জয় ও ৩টিতে হেরেছে আফগানিস্তান। সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪টি এবং হংকং ২টিতে খেলে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি।
তবে দলের বাজে পারফরমেন্সের মাঝেও এশিয়া কাপে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানের।
২০১২ আসরে ২৩৭ রান ও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ওই আসরের ফাইনালে উঠলেও পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হারে হৃদয় ভাঙ্গে বাংলাদেশের। ২০১৬ এশিয়া কাপে (টি২০ ফরম্যাটে) ১৭৬ রান করেছিলেন সাব্বির।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ভারতের কাছে ফাইনালে হারলেও ১১৭ বলে ১২১ রান করে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন লিটন দাস।
সবচেয়ে বেশি পাঁচবার এশিয়া কাপ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ৭ উইকেটে ৩৮৫ রান (ওয়ানডে ফরম্যাট)। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিল পাকিস্তান। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের সর্বনিম্ন ৮৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
২৫টি ওয়ানডেতে ১২২০ রান করে এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক শ্রীলংকার সনাথ জয়সুরিয়া। এশিয়া কাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডের মালিকও জয়সুরিয়া। ২০০৮ সালে ৩৭৮ রান করেছিলেন তিনি। সর্বাধিক ৬টি সেঞ্চুরিও করেছেন জয়সুরিয়া। বাংলাদেশি ব্যাটারের মধ্যে ১৩ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪০২ রান আছে সাকিবের।
২৪ ওয়ানডেতে ৩০ উইকেট নিয়ে এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ শিকারি শ্রীলংকার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন।
বাংলাদেশের পক্ষে ১৮ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার এবং বর্তমান নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক। ১৩ ওয়ানডেতে ১৯ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব।
এশিয়া কাপে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি শ্রীলংকার স্পিনার অজন্তা মেন্ডিজ। ২০০৮ আসরে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এশিয়া কাপে ইনিংস সেরা বোলার লংকার অজন্তা মেন্ডিজ। ২০০৮ আসরে ভারতের বিপক্ষে ১৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে এশিয়া কাপের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগারের নজির গড়েন অজন্তা।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে ১৯৯১ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ভারতের কপিল দেব এবং ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে পারভেজ মারুফ হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন।
এশিয়া কাপ ইতিহাসে রান তাড়ায় একমাত্র ব্যাটার হিসেবে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের বিরাট কোহলি। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৩ রান এবং ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩৬ রান করেছিলেন কোহলি।
২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোহলির ১৮৩ রান এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
যাযাদি/ এস