প্রথমবারের মতো টেস্টের নেতৃত্ব পেয়ে দারুণ এক রেকর্ড গড়েন শান্ত। প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার সংগ্রহ ১৪২ রান। টাইগাররা ম্যাচটি জিতেছে ১৫০ রানের ব্যবধানে। এক টেস্ট জিতেই নির্ভার থাকতে চায় না বাংলাদেশ। শান্ত জানালেন, এখনো অনেক দূর যাওয়ার বাকি।
সিলেটের ভুলগুলো এখানেই মুছে ফেলে ঢাকায় নতুন উদ্যমে মাঠে নামার প্রত্যয় শান্তর। ম্যাচ জয়ের পর সিরিজ জয়ে চোখ তার। কাজটা করতে পারলে নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অবিস্মরণীয় অর্জন হবে বাংলাদেশের।
সিলেট টেস্টের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো জয় ছিল না। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন দাসদের মতো খেলোয়াড়দের ছাড়াই জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনী। টাইগারদের লক্ষ্য ঢাকা টেস্টেও জয় তুলে নেওয়া। এর আগে কাজ শেষ হচ্ছে না বলেই জানালেন অধিনায়ক শান্ত।
কিউইদের বিপক্ষে জয়ের পর ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে শান্ত বলেন, ‘আমি এখন পরের টেস্টের কথা চিন্তা করছি। আমার জন্য, অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। আরও অনেক দূর যাওয়া বাকি।’
সিলেট টেস্টের জয়ে প্রত্যেককে ক্রেডিট দিয়েছেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক প্লেয়ারের অবদান রয়েছে। তাইজুল, মিরাজ, শরিফুল, নাঈম; খুব ভালো বল করেছে। আমরা সবাই ম্যাচটা উপভোগ করেছি। ফল নিয়ে চিন্তা করছি না। কেবল প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছি।’
প্রথম ইনিংসে ৩১০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩১৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করে ১৮১ রান। এতে দেড়শ রানের জয় পায় টাইগার বাহিনী। যদিও শান্ত মনে করছেন, প্রথম ইনিংসে রান কম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মনে হয় প্রথম ইনিংসে আমরা আরও ৫০-৮০ রান করতে পারতাম।’
বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানেই হয়েছে তাদের সমালোচনা। তাই বিশ্বকাপের পর প্রথম ম্যাচে দর্শকখরা ছিল চরমে। টেস্ট নিয়ে এমনিতেই দর্শকদের আগ্রহ কম থাকে। কিন্তু সিলেটে খেলা হলে সচরাচর দর্শক দেখা যায়। এবার তাও নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পরও সিলেট স্টেডিয়ামে নেই দেড়শ দর্শক। চিরচেনা সেই চিৎকারও নেই। দর্শক নেই, এতে কিছুটা মন খারাপ হলেও বাস্তবতা তুলে ধরলেন শান্ত।
টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘এমনিতেই সাধারণত আমার কাছে মনে হয়, টেস্ট ম্যাচ খুব একটা আমাদের দেশের মানুষ দেখতেও আসেন না। এটা খুবই হতাশাজনক। কিন্তু আসলে অনুপ্রেরণা চাইলে বিভিন্ন জায়গা থেকে খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এগুলো আসলে আমার মনে হয় না, কোনো খেলোয়াড়ই চিন্তা করেছেস। সবাই চিন্তা করেছে কীভাবে আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। আশপাশে কে আছে, কী হচ্ছে না হচ্ছে, এটা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, সবাই সবার কাজটা নিয়ে চিন্তিত ছিল।’
বিশ্বকাপের পর এমন পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই আবার দর্শকদের প্রশংসা কুড়াবেন শান্তরা। এটাও যে বাস্তবতা, সেটাও মনে রাখছেন শান্ত। জীবনবৃত্তের মতো এখানেও যে সাফল্যের পর ব্যর্থতা আবার ব্যর্থতার পর সাফল্য আসবে তা ভালো করেই জানেন তিনি। এ জন্য নিজেদের স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া মানার কথা বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শান্ত বলেন, ‘কিছুই বদলায়নি (ড্রেসিংরুমের আবহ)। বাইরে কথা হতেই থাকবে। এখন অনেক ভালো কথা হবে। আবার একটা ম্যাচ খারাপ করলে অনেক সমালোচনা হবে। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ওটা নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না। আমরা প্রতি ম্যাচে কীভাবে পরিকল্পনা করে আসতে পারি, আমাদের পরিকল্পনাটা কী, আমাদের প্রক্রিয়াটা কী। যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটা নিয়মিত করার চেষ্টা করি। ম্যাচটা জিততে পেরেছি, ম্যাচে এমন না যে, সবকিছু ঠিক ছিল। এই ম্যাচে কী ভুল ছিল, এগুলো নিয়ে কীভাবে পরের ম্যাচে প্ল্যান করে আগাতে পারি, সেটাই আমাদের প্ল্যান থাকে।’
মাঠে ব্যাট-বলের লড়াইয়ের পাশাপাশি শান্ত প্রতিপক্ষের রণকৌশলের সঙ্গেও খেলেছেন তা বোঝা গেল তার কথায়। কিউইরা যখন তাকে চেপে ধরার চেষ্টায় ছিল তখন পাল্টা আক্রমণ করেছে। যখন আবার কিউইরা তাকে রান করার সুযোগ দিয়েছে তখন নিজেকে স্থির রেখে এগিয়ে গেছেন। সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে প্রথম ৪০ রান করেছিলেন ৪৮ বলে। যেখানে ছিল ৫টি চার। অথচ পরের ৬৫ রান করতে শান্ত খেলেন ১৫০ বল। চার মেরেছেন ৫টি।
অধিনায়কের দাবি, পরিস্থিতি বুঝে নিজের ব্যাটিংয়ের ধরন পরিবর্তন করেছিলেন তিনি, ‘প্রথমত খেলাটা তো আমার একার না, পুরো দলের। দলের জন্য আমি কতটুকু ব্যাটিং করেছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে কিন্তু ওরা একটু অ্যাটাকিং ফিল্ড সেট আপ করছিল, স্বাভাবিকভাবে আমার কাছে অপশন ছিল; বাউন্ডারি অপশনগুলো আমি পাচ্ছিলাম। কারণ, এই উইকেটে অনেক লম্বা সময় ডিফেন্স করা সহজ ছিল না।’
‘যেহেতু সামনে অনেকগুলো ফিল্ডার ছিল। যখন ওরা একটু ইন আউট ফিল্ড সেট আপ করেছে, তখন আমার কাছে ডিফেন্সিভ শট খেলতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। তখন আমি আমার স্বাভাবিক গেম প্ল্যানে গেছি। ওরকম রিস্কি শটে যাইনি। ওরা আবার যখন অ্যাটাক করেছে, তখন আমি আবার রানের জন্য গেছি। প্ল্যানটা এ রকম ছিল। একেক সময় একেক রকম পরিকল্পনা হয়। তো ওভাবে আমি এগিয়েছি। প্রথম ইনিংসে যদি বলি, আমাকে অনেক অ্যাটাক করেছে। সবগুলো ফিল্ডার উপরে রেখেছে। আমি ওই পরিকল্পনা অনুযায়ীই ব্যাট করেছি।’ যোগ করেন শান্ত।
যাযাদি/ এস