টেস্ট দলের যাঁরা টি-টোয়েন্টি দলে নেই, তারা আজ ধরবেন দেশে ফেরার ফ্লাইট। তবে সাকিব গতকালই ভারত ছেড়েছেন। দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। কোনো সিরিজ শেষ হওয়ার পর বেশির ভাগ সময় এটিই সাধারণত তাঁর রুটিন। কিন্তু এবারের যাওয়া অন্য রকম। কারণ এই যাওয়া এমন একটি প্রশ্নও রেখে গেছে যে, সাকিব কি একেবারেই গেলেন?
কানপুর টেস্ট শেষে দলের সঙ্গেই তিনি হোটেলে ফিরেছিলেন, তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বেরিয়ে যান সাকিব আল হাসান। গন্তব্য বিমানবন্দর। টেস্ট দলের যাঁরা টি-টোয়েন্টি দলে নেই, তাঁরা আজ ধরবেন দেশে ফেরার ফ্লাইট।
দলীয় একটি সূত্র যে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইলেন স্রেফ একটি শব্দেই, ‘ঝুলন্ত।’ অর্থাৎ নিজের চাওয়া অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারবেন কি না, এর মীমাংসা ঝুলেই আছে। এই ম্যাচ শুরুর আগের দিন বলে রেখেছিলেন যে দেশে এসে খেলার পর নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা না পেলে কানপুর টেস্টই হবে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। বিসিবির পর সরকারও যখন সেই নিশ্চয়তার ঝাণ্ডা তুলে ধরেনি, তখন নিরুপায় সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখা টানা হয়ে যাওয়ার কথা গতকাল।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পরের কিছু ছবি অন্তত সে রকমই বোঝায়। ঢাকা থেকে এই সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা মাঠেই তাঁকে বিদায়ি শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছেন। কিংবদন্তিকে শুভ কামনা জানিয়ে বানানো ক্রেস্টের পাশাপাশি ফুলও উপহার দিয়েছেন সংবাদকর্মীরা। তিনি এ রকম আয়োজনের অংশ নেওয়ায় মনে হতে পারে, কানপুরেই বুঝি লাল বলে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দেশের মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাকিব খেললেও অন্তত টেস্টে আর কখনো সাক্ষাৎ হচ্ছে না বিরাট কোহলির সঙ্গে।
কানপুর টেস্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাই বিদায়ি উপহার হিসেবে ভারতীয় মহাতারকা সাকিবকে নিজের একটি ব্যাট উপহার দিয়েছেন। প্রকাশ্যে এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর দলের অন্দরমহলেও বিদায়ের কোনো না কোনো আয়োজন থাকার কথা।
কিন্তু বিস্ময়টা লুকিয়ে এখানেই। কানপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে তো বটেই, হোটেলেও বিদায়ের টুকটাক আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত ছিল না। দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেয়ারওয়েলের কোনো আবহই দলের মধ্যে ছিল না। এটি নিয়ে একটি কথাও হয়নি। না হওয়ার কারণও জানিয়েছেন তিনি, ‘কারণ দলের সবাই আশা করছে যে সাকিব দেশে গিয়েও খেলবে।’ দলের এমন মনোভাব কিছুটা বুঝতে পারার কথা ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের বক্তব্য থেকেও। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সাকিবকে পাওয়া যাবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে শ্রীলঙ্কান কোচ বলছিলেন, ‘আমি তো এমন কিছুই শুনিনি, যেটার জন্য বলব যে ওকে আমরা শেষবারের মতো খেলতে দেখলাম।
আমি যত দূর জানি, সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজও খেলবে।’ পারিপার্শ্বিকতা যদিও বিপক্ষে। তবু দলের মধ্যে তাঁকে পরের সিরিজেও পাওয়ার আশা আছে। এই ভরসায় যে কোনো না কোনোভাবে ঠিক একটি পথ খুলে যাবে সাকিবের জন্য। সে রকম কিছু হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ও হাতে আছে বলে দাবি দলীয় একটি সূত্রের, ‘দল ঘোষণা হতে হতে আরো অন্তত ১৫ দিন। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ভালো কোনো বার্তা তো আসতেও পারে।’ এরই অপেক্ষায় বাইরে অনেক কিছু হলেও সাকিবকে নিয়ে দলের ভেতরে কোনো আয়োজন ছিল না।
যাযাদি/ এস