মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার প্রভাব

আর্থিক ও মানবিক সংকটের মুখে শ্রীলংকা

মহামারির শুরু থেকে পাঁচ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
লাইন দিয়ে দোকান থেকে খাদ্য কিনছে লংকানরা

করোনাভাইরাস মহামারিতে বড় ধরনের আর্থিক ও মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলংকা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২২ সালেই 'দেউলিয়া' হয়ে যেতে পারে দেশটি।

রেকর্ডমাত্রায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, দ্রব্যের আকাশ ছোঁয়া দাম এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হয়ে পড়ায় দেউলিয়া হওয়ার এমন আশঙ্কা দিন দিন প্রবল হচ্ছে। এই সংকটের জন্য করোনাভাইরাস মহামারি আংশিকভাবে দায়ী। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে থমকে আছে পর্যটন খাতও। যা বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে দেশটির অর্থনীতিতে।

সামগ্রিকভাবে উচ্চ ব্যয় ও করের ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব কমেছে। চীনের কাছে বড় ঋণ এবং কয়েক দশকের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। দেশি ঋণ ও বিদেশি বন্ডের টাকা শোধ করতে সরকার টাকা ছাপানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে হুহু করে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে এসেছে।

কলম্বোর গাড়িচালক অনুরুদ্ধ পারানাগামা পণ্যের অতিরিক্ত দাম ও গাড়ি কেনার ঋণ শোধ করতে আরেকটি কাজ শুরু করেছেন। এরপরও পোষাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'ঋণ পরিশোধ করা আমার জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদু্যৎ ও পানির বিল পরিশোধ, খাবার কেনার পর কোনো টাকাই আর হাতে থাকছে না।

তিনি আরও জানান, 'তার পরিবার এখন তিন বেলার বদলে দুই বেলা খাবার খায়। গ্রামের মুদির দোকানে এক কেজির প্যাকেট কেনার মতো সামর্থ্য নেই কারও। তাই ১০০ গ্রামের ছোট ছোট প্যাকেট করা হচ্ছে। সবাই এখন ১০০ গ্রাম মটরশুঁটি কিনছি। অথচ আগে আমরা সপ্তাহে এক কেজি কিনতাম।'

শ্রীলংকায় পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে যে, প্রতি চারজনের একজন পাসপোর্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই তরুণ ও শিক্ষিত। তারা দেশ ছাড়তে চান।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির জন্য সবচেয়ে বড় বোঝা হলো তাদের বিদেশি ঋণ। বিশেষ করে চীনের কাছে তাদের অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। ৫০০ কোটি ডলার দেনা রয়েছে চীনের কাছে। এসবের মাঝেই গত বছর বেইজিংয়ের কাছ থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে কলম্বো। আগামী ১২ মাসে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে দেশি ও বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে ৭৩০ কোটি ডলার। চলতি জানুয়ারিতেই আন্তর্জাতিক বন্ডের জন্য ৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। যদিও নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৬০ কোটি ডলার।

বিরোধীদলীয় এমপি ও অর্থনীতিবিদ হার্শা ডি সিলভা সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, জানুয়ারিতে শ্রীলংকার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে ঘাটতি থাকবে ৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফেব্রম্নয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সেই বিদেশি ঋণ দাঁড়াবে ৪৮০ কোটি ডলার। তিনি বলেন, পুরো দেশ একেবারে দেউলিয়া হয়ে যাবে। সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে