শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

মারিউপোলের দখল হারাল ইউক্রেন

দুই শতাধিক ইউক্রেনীয় সেনার আত্মসমর্পণ, তাদের নেওয়া হয়েছে রুশ বিদ্রোহীদের এলাকায়
ম যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২২, ০০:০০
আহত ইউক্রেনীয় সেনাদের অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে

বন্দর নগরী মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ আড়াই শতাধিক ইউক্রেনীয় সেনা অবশেষে আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিল ইউক্রেন। এটি পুরো যুদ্ধে ইউক্রেনের একটি উলেস্নখযোগ্য পরাজয়। মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে. গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ২৬৫ সেনা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করেছে, যাদের মধ্যে ৫১ জন গুরুতর আহত। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে 'আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী' আচরণ করার গ্যারান্টি দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি, আরটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার শহরটির আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় সেনা সদস্যদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় দেশটির সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড। সোমবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফের দপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'মারিউপোলের আজভস্তাল এলাকায় অবস্থান নেওয়া বেসামরিক লোকজনের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে মারিউপোল ইউনিটের সেনা সদস্যদের দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সেনা কমান্ড।' মারিউপোল ইউনিটের সেনা সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আজভস্তালের সেনা সদস্যরা সেই মিশন সম্পূর্ণ করেছে। সাধারণ জনগণকে রক্ষাকারী এসব সেনারা আমাদের জাতীয় বীর।' ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই রুশ বাহিনীর কাছে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল দেশটির উপকূলীয় শহর মারিউপোল। ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি সংঘাত হয়েছে, সেসবের মধ্যে আজভ সাগরের তীরবর্তী এই শহরটি ছিল অন্যতম। এপ্রিল মাসেই মারিউপোল শহরের অধিকাংশ এলাকা দখলে নিয়ে এসেছিল রুশ বাহিনী। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল শহরটির প্রান্তে অবস্থিত আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা। সাবেক সোভিয়েত আমলে প্রায় পাঁচ মাইল এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাটি ছিল ইউক্রেনীয় বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি। রাশিয়ার আক্রমণ ও অবরোধে মারিউপোল এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। এখানে প্রায় লাখো মানুষের মৃতু্য হয়েছে বলে ইউক্রেন জানিয়েছে। এদিকে, যুদ্ধের তীব্রতার কারণে শহরটির অনেক বেসামরিক মানুষ মারিউপোল ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরে যেতেও পারছিল না। তাদের একাংশও আশ্রয় নিয়েছিল সেই কারখানার ভূগর্ভস্থ ঘরগুলোতে। এপ্রিল থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইউক্রেনীয় বাহিনীর। এক পর্যায়ে গোটা কারখানা উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই যুদ্ধে রুশ বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার রমজান কাদিরভ। পরে পুতিনের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন তিনি। আজভস্তালে অবস্থান নেওয়া বেসামরিকদের এপ্রিলের শেষ থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, গত সপ্তাহে তা শেষও হয়েছে। এবার সেনা সদস্যদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। ইউক্রেনের চিফ অব স্টাফের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজভস্তালের ওই ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নিয়েছিলেন তিন শতাধিক সেনা। তাদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন ২৬৩ জন। জীবিত এই সেনা সদস্যদের মধ্যে ৫৩ জনকে আহত অবস্থায় মারিউপোলের পার্শ্ববর্তী শহর নোভোয়াজোভস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই শহরটি বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ২১১ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওলেনিভকা শহরে। এই শহরটি নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে রয়েছে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। এদিকে নিয়ন্ত্রণ হারালেও আজভস্তালের ইউক্রেনীয় সেনা সদস্যদের 'অভিনন্দন' জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'আমাদের বীরেরা অবশেষে ঘরে ফিরে আসছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, জাতিসংঘ, রেডক্রসসহ যাদের প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে, তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' রাশিয়া বলছে, আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় যেসব সশস্ত্র ব্যক্তি আটকা পড়েছিল তাদের বেশিরভাগই নব্য নাৎসিবাদী চেতনায় উজ্জীবিত আজভ রেজিমেন্টের সেনা। এসব ব্যক্তি নাজিবাদীদের প্রতীক সংবলিত পোশাক রয়েছে এবং তাদের গায়ে 'স্বস্তিকা' প্রতীকের ট্যাটু দেখা যায়। রাশিয়া ধারণা করছে, আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় প্রায় দুই ২০০ ব্যক্তি আটকা পড়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, আত্মসমর্পণ করা সেনাদের সঙ্গে রাশিয়ার আটক সেনাদের বিনিময় সম্পন্ন হবে। তবে রাশিয়া এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে