শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

দক্ষিণ গাজায় চলছে তুমুল লড়াই

হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ারের বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে ইসরাইলি সেনারা : নেতানিয়াহু গাজায় আল-জাজিরার সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। ইসরাইলি বিমান হামলায় বহু সাধারণ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ ঘিরে আছেন স্বজনরা। ছবিটি বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকা থেকে তোলা -আল-জাজিরা

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় মূল শহর খান ইউনিসে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। ইসরাইলি সেনারা গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে যুদ্ধ ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষেপ করছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই মাস পর চলমান ভয়াবহ সংঘাত সম্পর্কে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে ইসরাইলি সেনারা বুলডোজার ও ট্যাংক নিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিরা সেখান থেকে নতুন করে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গাজার হাজার হাজার বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি মিসরের সীমান্তের কাছে এবং ভূখন্ডটির একটি জনশূন্য সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে ইসরাইলি বাহিনী লিফলেট ছেড়ে ও মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের খান ইউনিস ছেড়ে রাফায় চলে যেতে বলে। আর সেখানে তারা নিরাপদ থাকবে বলে আশ্বাস দেয়। তাড়া খাওয়া ফিলিস্তিনিরা মিসরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে গিয়ে জড়ো হয়। কিন্তু বুধবার শহরটির এক বাড়িতে ইসরাইলের বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার পর তারা আতঙ্কিত হয়ে আছে বলে রাফার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ ও হামাস সূত্রে বলা হয়েছে, শহরের ভেতরে ইসরাইলি সেনাকে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা প্রতিরক্ষা লাইন ভেঙে শহরের কেন্দ্রস্থলে অভিযান চালিয়েছে। তারা ৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংসের দাবি করেছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের সেনারা হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ারের বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে। নেতানিয়াহু বলেন, তার বাড়ি তার দুর্গ নাও হতে পারে, আর তিনি পালিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু তাকে ধরতে আর বেশি সময় লাগবে না। নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্র বলেন, তার বাড়িটি খান ইউনিস এলাকার ভূগর্ভে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলের ট্যাংকগুলো সিনওয়ারের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। কিন্তু তিনি সেখানে আছেন কিনা তা জানা যায়নি। ইসরাইল বলছে, তাদের বিশ্বাস হামাসের বহু নেতা ও যোদ্ধা ভূগর্ভস্থ টানেলগুলোতে আত্মগোপন করে আছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার যুদ্ধের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এখন যুদ্ধ এর তীব্রতম একটি পর্বে প্রবেশ করেছে। ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো ঘনবসতিপূর্ণ গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যে অনবরত বোমা হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা 'ডাবিস্নউএএফএ' জানিয়েছে, বুধবার রাতে গাজার মধ্যাঞ্চলীয় মাগাজির একটি বাড়িতে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার উত্তরাংশের লাখ লাখ বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ইসরাইল গাজার দক্ষিণাংশকে 'নিরাপদ' ঘোষণা করে তাদের সেখানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা গাজার ভূখন্ডের দক্ষিণাংশে সরে যাওয়ার পর এখন সেখানেও ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।

জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খান ইউনিস থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে রাফায় অধিকাংশ গৃহহীন মানুষ তাঁবুর অভাবে খোলা জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর থেকে রাফা ক্রসিং দিয়ে অল্প কিছু ত্রাণ প্রবেশ করতে পারলেও তীব্র যুদ্ধের কারণে সেগুলো বিতরণ করা যাচ্ছে না।

এদিকে, গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে, রক্তক্ষরণে রোগীদের মৃতু্য হচ্ছে। সেখানকার অবস্থা অমানবিক বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডা. আশরাফ আল-কুদরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' এক পোস্টে জানান, 'রোগীদের রক্তক্ষরণে মৃতু্য হচ্ছে। আমরা যতটা সম্ভব আহতদের নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।' তিনি বলেন, চিকিৎসা কর্মীরা উলেস্নখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তার পাশাপাশি সুরক্ষা প্রয়োজন।

গাজায় আল-জাজিরার সাংবাদিকের

পরিবারের ২২ সদস্য নিহত

এদিকে, গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি হামলায় সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম মোয়ামেন আল-শরাফি। তিনি আল-জাজিরা আরবি বিভাগের সংবাদদাতা। মূলত গাজা উপত্যকার যে বাড়িতে শরাফির পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, বুধবার সেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালালে তারা প্রাণ হারান। হামলার সময় একটি বিস্ফোরক ব্যারেল বাড়িটিতে আঘাত করে এবং এর ফলে মাটিতে গভীর গর্ত তৈরি হয়।

আল-জাজিরা নেটওয়ার্ক বলছে, 'আল-জাজিরা অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং শহীদদের পরিবার ও নিরাপরাধ হতাহতদের দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের দ্রম্নত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে