সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬ ঘন্টার নাটকীয়তা

সমর্থকদের বাধায় প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না পুলিশ

আন্তর্জাাতিক ডেস্ক
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সমর্থকদের বাধায় প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না পুলিশ
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেও পারেনি দেশটির পুলিশ। ইউনের গ্রেপ্তারে বাধা দেয় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস)। পিএসএস এর আগেও ইউনের অফিস ও সরকারি বাসভবনে তলস্নাশি পরোয়ানা নিয়ে তদন্তকারীদের প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। এবারও তারা প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তারে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি, গ্রেপ্তারের খবর শুনে শুক্রবার বাসভবনের বাইরে প্রেসিডেন্টের শত শত সমর্থক বিক্ষোভ শুরু করে। এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এই অঞ্চলের অন্যতম প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ ডিসেম্বর সবাইকে হতবাক করে দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। এই সিদ্ধান্তের জন্য অভিশংসিত করে তাকে ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করে দেশটির এক আদালত।

ডববিসি বলছে, শুক্রবার ভোর থেকে সিউলে ইউনের বাসভবনের বাইরে রাস্তায় কয়েক ডজন পুলিশ ভ্যান সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা ও সিআইও সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। ২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে অভিযান শুরু হলেও দ্রম্নতই তা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়ায়। দলের প্রায় অর্ধেক সদস্য ভেতরে ঢুকতে পারলেও ইউনের নিরাপত্তা দল এবং সিউল শহর রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সামরিক ইউনিট তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। সিউলের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থাকে বলেন, এক পর্যায়ে নিরাপত্তা দলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সিআইওর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তদন্তকারীরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা থেকে সরে আসেন এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করেন। সিআইও বলেছেন, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে থাকা ইউনের সমর্থকরা ্তুআমরা জিতেছ্থি বলে স্স্নোগান দিতে থাকে।

টানা ৬ ঘণ্টার উত্তেজনাপূর্ণ নাটকীয়তা শেষে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডস ও সৈন্যদের বাধার মুখে অভিশংসিত এই প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান ব্যর্থ হয়।

রয়টার্স বলছে, উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দ্য করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর দ্য হাইর্-যাঙ্কিং অফিশিয়ালস (সিআইও) কর্মকর্তারা ইউনকে গ্রেপ্তারে তদন্তকারীদের একটি যৌথ দলের নেতৃত্ব দেন। এই দলের মধ্যে পুলিশ এবং প্রসিকিউটররাও ছিলেন।

সিআইও এক বিবৃতিতে বলেছে, "চলমান অচলাবস্থার কারণে অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।" মূলত এদিন ইউনকে গ্রেপ্তারে বাধা দেয় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী পিএসএস। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরে বাধা হয়ে দাঁড়ান। অন্যদিকে ইউনের গ্রেপ্তার ঠেকাতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেন তার শত শত সমর্থক। এমন অবস্থায় ইউনকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা ঘিরে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে এই অচলাবস্থা চলে। পরে তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসেন। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবন কমপেস্নক্স ত্যাগ করেন তারা। তদন্তকারীরা চলে গেলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেওয়া ইউনের সমর্থকদের উলস্নাস করতেও দেখা যায়। এর আগে দেশটির বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ সিআইওকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, বর্তমান এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এটি প্রয়োগ করা হলে ইউনকে সিউল ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি ও সংসদে ভোটাভুটির পর মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান আছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইউন অভিশংসিত হওয়ায় তার স্থানে এখন একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। অবশ্য সংসদে অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন ইউন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার। এছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সাংবিধানিক আদালত তার ভাগ্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে