সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সিরিয়ায় সব শ্রেণির অংশগ্রহণে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সিরিয়ায় সব শ্রেণির অংশগ্রহণে নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা
রিয়াদে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি ও সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের মধ্যকার বৈঠক

সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব দেশে সব শ্রেণির জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি। গত মাসে বাশার আল-আসাদের পতনের পর সৌদি আরব সফরে গিয়ে শুক্রবার তিনি এ তথ্য জানান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। সিরিয়ার নতুন সরকারের পক্ষ থেকে এটিই প্রথম বিদেশ সফর। এ সময় সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও আল-শিবানি রিয়াদে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে আল-শিবানি বলেন, আমাদের এই সফরের মাধ্যমে আমরা এমন একটি সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছি যা অংশীদারিত্ব ও দক্ষতার ভিত্তিতে গঠিত হবে। এতে সিরিয়ার সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। একই সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে, যা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে, কৌশলগত অংশীদারত্ব স্থাপন করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সেবা ব্যবস্থার উন্নতি করবে। গত ৮ ডিসেম্বর আসাদের পতনের পর ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) আরব দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে তারা সব সিরিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং ইসলামি বিপস্নবের পথে হাঁটবে না।

উলেস্নখ্য, এইচটিএস একসময় আল-কায়েদার সিরীয় শাখা ছিল, তবে ২০১৬ সালে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুতে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল সৌদি আরব। পরবর্তীতে রিয়াদ আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটে। ২০২৩ সালে সিরিয়ার আরব লীগে ফেরার বিষয়টি সেই প্রচেষ্টার অংশ, যার লক্ষ্য ছিল দেশটিতে ইরানের প্রভাব কমানো এবং মেথামফেটামিন ক্যাপটাগনসহ মাদক প্রবাহ রোধ করা। সৌদি সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সিরিয়ায় শান্তি রক্ষা করা সৌদি আরবের অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম। সূত্রটি আরও জানায়, এই সংকটময় সময়ে আমরা সিরিয়ার জনগণের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে মনোনিবেশ করেছি। আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সহায়তা বাড়ানোর সুযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিরিয়ার নতুন নেতার সঙ্গে ফরাসি ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

সিরিয়ার নতুন ডি ফ্যাক্টো শাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর শুক্রবার রাজধানী দামেস্কে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আসাদের পতনের এটিই সিরিয়ায় ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রথম সফর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

জার্মানির আনালেনা বেয়ারবক এবং ফ্রান্সের জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারোত দামেস্কে সিরিয়ার শাসক আহমেদ আল-শারার সঙ্গে আলোচনা করেন। আল-শারার নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সংগঠন বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়। পশ্চিমা সরকারগুলো এখন এইচটিএস-এর সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা সরানোর বিষয়ে বিতর্ক করছে। ব্যারোত শুক্রবার সকালে দামেস্কে পৌঁছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ সিরিয়ার জনগণের প্রতি ফ্রান্স ও জার্মানির সংহতির বার্তা দেন। তিনি লিখেছিলেন, সিরিয়ার জনগণের সেবায় একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রয়োজন, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।

দামেস্কে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্যারোত বলেন, কুর্দিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে হবে, যা আজ শুরু হওয়া এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বেয়ারবক বলেন, ইউরোপ সিরিয়াকে সমর্থন করবে, তবে ইসলামপন্থি কাঠামোর জন্য অর্থায়ন করবে না। তিনি আরও বলেন, জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি নারীদেরও সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার সেডনায়া কারাগার পরিদর্শন করেন। এখানে আসাদের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে। বেয়ারবক বলেন, আসাদ শাসনের অর্থ কী ছিল তা আমরা সেডনায়ায় দেখেছি। এটি শুধু সেই অমানবিক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের একটি ক্ষুদ্র ধারণা দেয়। তিনি আরও বলেন, একটি জবাবদিহি কাঠামো সিরিয়ার জনগণকে ধীরে ধীরে তাদের গভীর ক্ষত থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

সিরিয়া সফরের আগে বেয়ারবক নতুন সরকারের প্রতি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ পরিহারের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি নির্বাচন দেরি না করার এবং বিচার ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় উপাদান অন্তর্ভুক্তি বন্ধের অনুরোধ করেন। নতুন সিরীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের প্রেম ও ভালোবাসা সম্পর্কিত কবিতা এবং প্রাচীন ইতিহাসের দেবতা সম্পর্কিত রচনা বাদ দেওয়া। শাসন ব্যবস্থার বিষয়ে আল-শারা জানান, একটি নতুন খসড়া সংবিধান উপস্থাপন করতে তিন বছর সময় লাগতে পারে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আরও এক বছর লাগবে। বেয়ারবক বলেন, এইচটিএস সম্পর্কে যে সন্দেহ রয়েছে তা দূর করতে এবং সিরিয়াকে একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পুরো ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করতে চায় জার্মানি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে