সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জনসহ নিহত ৭০

আন্তজাতিক ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জনসহ নিহত ৭০

ফিলিস্তিনের গাজায় শনিবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ৩০টি পৃথক হামলায় এক পরিবারের ১১ জনসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও দমকল বাহিনী জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-গৌল পরিবারের বাড়িতে চালানো হামলায় একই পরিবারের অন্তত ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে সাতজনই শিশু। এ হামলায় আল-গৌল পরিবারের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। আহমেদ আয়ান নামের এক প্রতিবেশী বলেন, 'রাত প্রায় ২টার দিকে প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। ওই বাড়িতে ১৪ থেকে ১৫ জন লোক ছিল। তাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। "তারা সবাই বেসামরিক। সেখানে এমন কেউ নেই যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে।' বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া কেউ বেঁচে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ফিলিস্তনিরা সেখানে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরও বাড়িটির পুড়ে যাওয়া ফার্নিচারগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছিল। এ ঘটনার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি বলে আরব নিউজ জানিয়েছে। পরে গাজা সিটির আরেকটি বাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এ হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়। ফিলিস্তিনি দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১০ জন আটকা পড়ে আছেন।

গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আরেকটি হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হন। এর পাশাপাশি ছিটমহলটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে একটি গাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। নিহত রক্ষীরা মানবিক ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণে নিরাপত্তা দিতে কর্মরত ছিলেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবারের পর থেকে শুরু হওয়া দিনভর হামলায় শনিবার মৃতের সংখ্যা ৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী চলতি সপ্তাহেও গাজার উত্তর প্রান্তের শহর বেইত হানুনে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সেখানে তারা হামাসের ব্যবহার করা একটি সামরিক কমপেস্নক্স ধ্বংস করেছে। ইসরাইলি বাহিনী এই বেইত হানুন শহরে টানা তিন মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে।

\হএদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি দ্রম্নত বাস্তবায়ন দেখতে আগ্রহী ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। শুক্রবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের সঙ্গে পরোক্ষ বৈঠকের নতুন দফায় এই মন্তব্য করেছে জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা বাসেম নাইম। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই (এমইই) এ খবর জানিয়েছে। নাইমকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করাকে মূল বিবেচনায় রেখে নতুন দফার আলোচনা চলছে। গত এক বছর ধরে দোহায় চলমান আলোচনায় কোনও কার্যকর সমঝোতা না হওয়ায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এখনও অধরা রয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পুনরায় প্রেরণের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির সম্ভাবনাকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করে যাচ্ছেন তিনি।

হামাস ও ইসরাইল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমঝোতার চেষ্টা করছিল। তবে তখনও হামাস অভিযোগ করেছিল যে, ইসরা্‌ইলি আলোচকরা নতুন শর্ত চাপি সমঝোতার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

ইসরাইল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির পথে আসল বাধা তৈরি করছে হামাস। যুদ্ধবিরতির পথে হামাসকে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দোষারোপ করে আসলেও বিশ্লেষকদের দাবি, চুক্তিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহুর দিক থেকেও তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

পুরো ২০২৪ সাল জুড়ে হামাসের প্রয়াত প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ারকে যুদ্ধবিরতির প্রধান বাঁধা বলে অভিযুক্ত করে এসেছিল ওয়াশিংটন ও তেল আবিব। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে সিনাওয়ার নিহত হওয়ার প্রায় দুমাস হতে চললেও যুদ্ধবিরতির কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না।

২০ জানুয়ারি অভিষেকের আগেই একগাদা হুমকি ধামকি দিয়ে পুরো বিশ্বকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওভাল অফিসে বসার আগে বাকি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হলে হামাসকে তার ্তুচরম মূল্য দিতে হবে। অপর দিকে গাজার উত্তরাঞ্চলের হাসপাতালে অভিযান চালানোর পক্ষে সাফাই গেয়েছে ইসরাইল। দেশটির এসব কর্মকান্ডে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের সমালোচনা ও হাসপাতালের পরিচালককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) আহবানের পর শুক্রবার এক চিঠিতে এই দাবি করেছে ইসরাইল। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুক্রবার প্রেরিত একটি চিঠির ছবি প্রকাশ করেছেন জেনেভায় জাতিসংঘের ইসরাইলি প্রতিনিধি ড্যানিয়েল মেরন। ডবিস্নউএইচও এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তা ভলকার টুর্কের কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। চিঠিতে দাবি করা হয়, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর সদস্যদের আনাগোনা রয়েছে- এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই তারা অভিযান চালিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বেসামরিক জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি সতর্কতা বজায় রেখে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ করেছে সেনাবাহিনী।

\হনিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলি অভিযানের সমালোচনা করে টুর্ক বলেছেন, দাবির স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করেনি ইসরাইল। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো অস্পষ্ট ও জনসাধারণের কাছে বিদ্যমান তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। হাসপাতাল, চিকিৎসা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলা বন্ধ করে এসব স্থাপনার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগের স্বতন্ত্র, বিস্তারিত ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্‌বান জানান তিনি।

এদিকে, জাতিসংঘে ইসরাইলে উপ-প্রতিনিধি জোনাথন মিলার দাবি করেছেন, অভিযানের সময় ২৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে ১৫ জন ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। হাসপাতালের পরিচালক হুসসাম আবু সাফিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ইসরাইলর বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায়। এরমধ্যে ওই বছরের নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক জিম্মি মুক্তি পান। এরপর আর কোনো চুক্তি না করে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা চালিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা। কিন্তু তারা বেশিরভাগ জিম্মিকেই মৃত হিসেবে উদ্ধার করেছে।

\হক্যাপশন

\হগজায় ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত এশটি স্থাপনা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে