গাজা পুনর্গঠনের জন্য মিসরের প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছেন আরব নেতারা। আরব লীগ সম্মেলনে মঙ্গলবার গৃহীত ওই প্রস্তাবটি গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হল। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন, কায়রোতে আয়োজিত সম্মেলনে তাদের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এই প্রস্তাবে হামাস স্বাগত জানিয়েছে আর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনা করেছে। গত মাসে গাজা পুনর্গঠনে একটি প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা বানানোর প্রস্তাব দেন তিনি, যা ইসরাইল বাদে বিশ্বের সবার সমালোচনার শিকার হয়। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো, এর শাসনের দায়িত্ব কার কাঁধে বর্তাবে এবং গাজা পুনর্গঠনে কাড়ি কাড়ি টাকা কে দেবে। শাসনের বিষয়ে সিসি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাধীন ও পেশাদার
ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি পরিষদ গঠনের বিষয়ে তারা আলোচনা করছেন। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসানের পর তারা শাসনের দায়িত্ব নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই কমিটির দায়িত্ব হবে গাজার ত্রাণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা এবং প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটির (পিএ) হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া। গাজা বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের ভাগ্যে কী জুটবে। ২০০৭ সাল থেকে গাজা পরিচালনা করা গোষ্ঠীটি মিসরের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে। মিসরের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত এমন পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়া যেখানে লাখ লাখ মানুষকে উচ্ছেদের প্রয়োজন হয় না। এদিকে, মিসরের প্রস্তাবকে বাস্তবতা বিবর্জিত বলে সমালোচনা করেছে ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী পিএর ওপর অতিনির্ভরতা প্রকাশ পেয়েছে আর হামাসকে এখনও পুরোপুরি অকার্যকর করার কথা বলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আরব লীগের গৃহীত প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থন দেবেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, গাজা এখন বর্তমানে বাস অযোগ্য। ধ্বংসাবশেষ এবং অবিস্ফোরিত যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গাজার এই বাস্তবতা মিসরের প্রস্তাবনা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগের প্রস্তাবেই অনড় থাকবেন। তিনি হামাস মুক্ত একটি বাসযোগ্য গাজা দেখতে চান।
মিশরীর পরিকল্পনায় গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তুচু্যতি এড়ানো হয়েছে। আল আরাবিয়া নিউজ জানিয়েছে, গাজার পুনর্গঠনের অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য আরব নেতারা একটি ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপনেও সম্মত হয়েছেন। পুনর্নিমাণ প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক চাঁদার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি ভূখন্ডটিতে পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি চালিয়ে নিতে ট্রাস্ট ফান্ড 'সব দাতা দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া আর্থিক প্রতিশ্রুতি গ্রহণ' করবে। এতে আরব নেতারা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখন্ড থেকে বাস্তুচু্যত করার যে কোনো উদ্যোগের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ওই সব প্রচেষ্টাকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন তারা। সম্মেলনে নিজের বক্তৃতায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, রিয়াদ ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং ফিলিস্তিনি সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রীক সমাধানকে সমর্থন করে। তিনি আরও বলেছেন, গাজার পুনর্নিমাণকালে গাজাবাসীদের সেখানে রেখেই তা করতে হবে।