সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

একগুচ্ছ সুখস্মৃতির শিক্ষা সফর

মোহাম্মদ এনামুল হক
  ০৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
একগুচ্ছ সুখস্মৃতির শিক্ষা সফর
একগুচ্ছ সুখস্মৃতির শিক্ষা সফর

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেও কলেজে পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে গেল। তবে এ নিয়ে মন খারাপ করার সুযোগই ছিল না, কারণ ২০ ফেব্রম্নয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বার্ষিক শিক্ষা সফরের দিন! আমাদের জন্য এটি ছিল একেবারে শেষ সফর, তাই সবার মধ্যেই ছিল এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস। কলেজে পৌঁছানোর পরই চোখে পড়ল সবার প্রস্তুতি, মুখে একরাশ আনন্দের ঝলক। গন্তব্য কুমিলস্না, বাসের আসন নির্ধারণ করা হলো, আর আমরা সিনিয়র হওয়ায় সম্মানজনকভাবে সামনের দিকে বসার সুযোগ পেলাম।

সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে আমাদের রঙিন যাত্রা শুরু হয়। যথারীতি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুভ সূচনা করা হয়। এর পর পরই বাসে পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু সকালের নাস্তা, যেখানে ছিল মানসম্মত ডিম, কেক, স্যান্ডউইচ, পানি আর কিছু হালকা খাবার। এরপর শুরু হয় ধুমধাড়াক্কা আনন্দ! প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে কিছুটা লজ্জায় থাকলেও একটু পরেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। বাসভর্তি সবাই তখন গানের সুরে দুলছিল, কেউ কেউ নাচছিল, কেউ আবার মজার মজার কথা বলে সবাইকে হাসিয়ে দিচ্ছিল। কেউ ছবি তুলছিল, কেউ ভিডিও করছিল, মুহূর্তগুলো যেন ক্যামেরায় বন্দি হয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকছিল।

ঠিক ১২টার মধ্যে আমরা কুমিলস্নায় পৌঁছাই। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল কুমিলস্না বার্ড। নির্ধারিত টিশার্ট পরে আমরা বার্ডের ভেতরে প্রবেশ করি। চারদিকে সবুজের সমারোহ, পাখির ডাক, প্রশান্তিময় পরিবেশ সবকিছু যেন এক স্বপ্নময় জগতে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। সবাই যার যার মতো ছবি তুলছিল, কেউ কেউ ভিডিও করছিল, শিক্ষকদের সঙ্গেও আনন্দ ভাগাভাগি হচ্ছিল। রাশেদা বেগম ম্যাম হঠাৎ করে পাশে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের দেখে হাত নাড়লেন, শিশুরাও উচ্ছ্বাস ভরে হাত নাড়িয়ে সাড়া দিল। মুহূর্তটা যেন ভালোবাসার এক সেতুবন্ধ তৈরি করল।

বার্ড থেকে বেরিয়ে আমরা কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা দিই। সেখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শহিদ মিনারের পাশে বসে খাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আলপনা আঁকা হচ্ছিল, তাই আমরা একটু দূরে গিয়ে বসে ছোটখাটো এক চড়ুইভাতি জমিয়ে ফেলি। খাবারের মেনু ছিল সুস্বাদু কাচ্চি বিরিয়ানি, সঙ্গে মজো এবং পানি। সবাই খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত, আনন্দে মাতোয়ারা। খাওয়া শেষে আমরা পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে যত্নবান ছিলাম, যাতে কলেজের সুনাম অক্ষুন্ন থাকে। এক আপু এসে বললেন, 'আপনারা যদি এগুলো ফেলে দেন, আমি নিয়ে যেতে পারি।' আমরা আনন্দের সঙ্গেই অনুমতি দিলাম, কারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।

জোহরের নামাজ আদায় করে আমরা যাত্রা করি ময়নামতি শালবন বিহারের দিকে। শালবন বিহারের অপূর্ব সৌন্দর্য আমাদের মন ভরিয়ে দিল। কেউ ছবি তুলল, কেউ ভিডিও করল, কেউ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেল। আমাদের শিক্ষকরা এতটা আন্তরিক ছিলেন, যে তারা নিজেরাই আমাদের ডেকে নিয়ে ছবি তুলিয়ে দিলেন। মনে হলো, এ সফর শুধু শিক্ষামূলক নয়, হৃদয়ের গভীরে গেঁথে যাওয়ার মতো এক আবেগময় অভিজ্ঞতা। এরপর ময়নামতি জাদুঘরে পৌঁছে জানা গেল, ৫টার পর প্রবেশ নিষিদ্ধ! আমরা অনেক অনুরোধ করেও গেট খোলাতে পারলাম না। কর্তৃপক্ষ নিয়মের প্রতি কঠোর, তাই আমরা মন খারাপ না করে চলে গেলাম বৌদ্ধ বিহারে।

বৌদ্ধ বিহার ঘুরে সন্ধ্যায় আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হলাম। পথে মাগরিবের নামাজের জন্য বাস একবার থামানো হলো, সবাই নামাজ শেষে আবার বাসে উঠল। এরপর রাতের নাস্তা পরিবেশন করা হলো, যাতে ছিল কমলা, বড়ই, কেক, চকলেটসহ আরও কয়েকটি মুখরোচক খাবার। সবাই নাস্তা সেরে নিলাম, কিন্তু মজা তখনো শেষ হয়নি! বাসের ভেতরে গান-বাজনা চলতে লাগল, ফার্স্ট ইয়ারের শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে নাচতে শুরু করল, আর সবাই তাতে গলা মিলিয়ে গাইল। হাসি-আনন্দ, উলস্নাসে ভরা বাসের সেই মুহূর্তগুলো মনে হচ্ছিল, যেন কোনো উৎসব চলছে।

রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম কলেজে পৌঁছানোর পর শিক্ষকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে সবাই যার যার বাসার পথে রওনা দিলাম। তবে মনে হচ্ছিল, এই সফর যেন কখনোই শেষ না হয়। একগুচ্ছ সুখস্মৃতি নিয়ে আমরা ফিরে এলাম- যা আজীবন আমাদের মনে গেঁথে থাকবে, ঠিক যেন এক স্বপ্নের মতো।

এই অসাধারণ সফরটি সুন্দর ও সফল করতে যথেষ্ট কষ্ট করেছে বন্ধু নাঈম বিন ইদ্রিস। এ সফর সফল করতে যাদের ভূমিকা ছিল, তাদের প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। তারা কষ্ট না করলে এত সুন্দর কিছু হতো না। পুরো আয়োজনের তত্ত্বাবধানে ছিল নাঈম, তার প্রতি রইল আন্তরিক ভালোবাসা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে