মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও মাঙ্কিপক্স শনাক্তের আশঙ্কা

প্রয়োজনীয় সতর্কতা জরুরি
নতুনধারা
  ২৪ মে ২০২২, ০০:০০

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিশ্বকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই যখন জানা যাচ্ছে, এবার নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ- তখন তা কতটা উদ্বেগের বলাই বাহুল্য। জানা যাচ্ছে, ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্তত ১৪টি দেশের শতাধিক ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন এই রোগে।

তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে আরও মাঙ্কিপক্স শনাক্তের আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। এরই মধ্যে সংস্থাটি দেশে দেশে নজরদারি বাড়িয়েছে, বিশেষ করে যেখানে সাধারণত এ রোগটি পাওয়া যায় না। জানা গেছে, ১৪টি দেশে ৯২ জনের দেহে এরই মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া সন্দেহের পর্যায়ে রয়েছে ২৮ জন। জাতিসংঘের সংস্থাটি এ বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও সুপারিশ করবে, কীভাবে রোগটির ছড়িয়ে পড়া কমানো যায় সে ব্যাপারে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ডবিস্নউএইচওর নিদের্শনা এলে তা বাস্তবায়নে কঠোরভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

ডবিস্নউএইচও এমনটিও জানিয়েছে, মানুষ থেকে মানুষের দেহে সংক্রামক রোগটি ছড়াতে পারে। যাদের দেহে রোগটি আছে, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশলে এটি হয়। এ ছাড়া আইসোলেশন ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে সহজেই এর বিস্তার ঠেকানো সম্ভব এমনটিও আলোচনায় এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্সের এবারের প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক, কারণ যে এলাকায় সাধারণত এ রোগ হয়, তার বাইরে এবার সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সংস্থাটি বলেছে, নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে, যাতে আরও কেউ সংক্রমিত হলে তাদের শনাক্ত করা যায়। এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত, সে বিষয়ে সামনের দিনগুলোতে বিস্তারিত পরামর্শ ও নীতিমালা দেওয়া হবে বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন তা আমলে নেওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে যেন রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য দেশের সব বন্দরে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূূত্রে জানা গেছে- এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ সব বন্দর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায়। অতিদ্রম্নত যেন তাকে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এটাও সামনে এসেছে, মাঙ্কিপক্স নিয়ে বাংলাদেশের এত আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য উপাত্ত নিয়ে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি করা হবে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দেশের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।

এটাও আমলে নেওয়া দরকার, নতুন এলাকায় হঠাৎ করে এ রোগ কেন ছড়াতে শুরু করল, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো পাননি বিজ্ঞানীরা। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, ভাইরাসটির জিন কাঠামোতে হয়তো কোনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। তবে এটাকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) বলার মতো তথ্য প্রমাণও পাওয়া যায়নি। উলেস্নখ্য. ১৯৫৮ সালে প্রথমবার এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের হদিস মেলে। আফ্রিকার কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে প্রথমবারের জন্য মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত ও লিপিবদ্ধ করা হয়। যুক্তরাজ্যে ২০১৮ সালে প্রথমবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পান বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেবার এমন হারে ছড়ায়নি সংক্রমণ। জানা যায়, মাঙ্কিপক্স এমনিতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ভাইরাসজনিত এ রোগ সাধারণত মৃদু অসুস্থতার কারণ ঘটায় এবং অধিকাংশ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। সাধারণ ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই। যদিও গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে বলেও জানা যায়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনার সংক্রমণে সারা পৃথিবীতে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থনীতিসহ সব খাতেই ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে দেখা দিয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গেই করোনা মোকাবিলা করেছে। ফলে এখন যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের বিষয়টি আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে