শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাজনিত রোগবালাই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

বন্যায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা ও ত্রাণ সংকট থেকে শুরু করে সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সারাদেশে বন্যায় পানিবাহিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ জন। আর বন্যাজনিত কারণে মৃতু্য হয়েছে ১০২ জনের। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানা যায়।

এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, চলতি বছরের ১৭ মে থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ জন এবং ১০২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৪৮৬ জন এবং একজন মারা গেছেন। আরটিআই (চোখের) রোগে আক্রান্ত ৪৭৯ জন। বজ্রপাতের শিকার ১৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ১৪ জন এবং দুজনের মৃতু্য হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃতু্য হয়েছে ৭৫ জনের। এছাড়া চর্মরোগ, চোখের প্রদাহজনিত রোগসহ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।

প্রসঙ্গত, বলা দরকার, এর আগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছিল। বিশেষ করে জানা গিয়েছিল, পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ নানা কারণে বন্যাপীড়িত এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এটা এড়ানো যাবে না যে, বন্যার কারণে নানা দুর্ভোগে বিপর্যস্ত বানভাসিদের জীবন। এছাড়া মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও আছে। বন্যায় ডুবে গিয়েছিল ধানের গোলা, ফসলের ক্ষেত, ভেসে গিয়েছিল পুকুরের মাছ, গবাদি পশু। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে রোগব্যাধি বাড়বে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনাও। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা।

এটা এড়ানো যাবে না যে, চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করা না গেলে, দেশের বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলাতেই ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে এর আগে আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা বলতে চাই, যখন সারাদেশে বন্যায় পানিবাহিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ জন। আর বন্যাজনিত কারণে মৃতু্য হয়েছে ১০২ জনের। তখন বিষয়টিকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সব ধরনের তৎপরতা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধিতেও প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।

এর আগে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে রোগব্যাধি যেমন বাড়বে। তেমনি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সুযোগ না থাকায় বাড়তে পারে করোনাও। এছাড়া এ সময় মশাবাহিত রোগ- ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকার সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই- সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। দুধসহ অন্যান্য শিশুখাদ্যের সংকটে শিশুর মারাত্মক পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেবে। মায়ের অসুস্থতা, ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি এবং পুরুষহীন পরিবারের নারীদের ঘরবাড়ি পুনর্বাসনের ব্যস্ততায় শিশুর নিয়মিত পরিচর্যা ব্যাহত হবে। এতেও নবজাতকসহ নানা বয়েসি শিশুর স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক পরিস্থিতি মোকবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে, মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করতে হবে। চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে