সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনাবাদি জমি সঠিক উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

দেশের সব অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বরিশালের অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা এবং পার্বত্য জেলাগুলোতে কাজুবাদাম, কফি প্রভৃতি ফসল উৎপাদনে উদ্যোগ নিতেও সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। যন্ত্রনির্ভর আধুনিক ও বাণিজ্যিক কৃষির সম্প্রসারণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে।

এটা সত্য, যতই দিন যাচ্ছে দেশের কৃষিজমি কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে এখন কৃষিখানার সংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার, যাদের অধীনে আবাদি জমি রয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর। তবে ১১ বছরের ব্যবধানে দেশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর। অন্যদিকে, কৃষিখানার পরিচালনাধীন মোট জমি (আবাদি ও অনাবাদি) জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে জমির পরিমাণ কমেছে ৫ লাখ ৩০ হাজার একর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি-২০১৯ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর আগের কৃষি শুমারি হয়েছে ২০০৮ সালে। দেশের কৃষি পরিবারে পরিচালনাধীন মোট জমি বা কৃষি পরিবারগুলোর মালিকানায় যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ হলো ২ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার একর- যা ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫ হাজার একর। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কৃষি পরিবারগুলোর পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ কমে গেছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার একর। অন্যদিকে, নিট আবাদি জমির পরিমাণ ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর- যা ২০০৮ সালে ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার। ফলে ১১ বছরে কৃষিজমি কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। প্রতি বছরে আবাদি জমি কমেছে প্রায় ৩৭ হাজার ৮১৮ একর করে। দেশে কৃষিজমি আবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ট্রাক্টর, ৩ লাখ ৫৫ হাজার পাওয়ার টিলার ও ৯ লাখ ১৬ হাজার ফসল মাড়াই যন্ত্র।

বিশ্বব্যাপী খাদ্যোৎপাদন কমতির দিকে- এই বিষয়টি কতটা উদ্বেগজনক। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোয় খাদ্য ঘাটতি বড় সংকটের আকার নেবে। অন্যদিকে, 'মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশেরও নাম রয়েছে।' সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেমন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তেমনিভাবে কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতেও নিতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নও ঘটাতে হবে।

উদ্বিগ্ন এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এক সময়ে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজে জড়িত থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা কমে ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার পাশাপাশি কৃষি কাজে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে