সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ই-কমার্স সূচকে পিছিয়েছে দেশ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে

নতুনধারা
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে চলেছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না- শিক্ষা, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলো ই-কমার্স। বাংলাদেশেও ই-কমার্স বিস্তৃত হচ্ছে এবং এই খাত যে সম্ভাবনাময় তাও নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। সে ক্ষেত্রে যদি এই খাতের সূচকে দেশ পিছিয়ে পড়ে তবে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বৈশ্বিক ই-কমার্স সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও করোনাকালে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি করেছিল। ফলে যখন ই-কমার্চ সূচকে পেছানোর বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তখন তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য মতে, চারটি উপ-সূচকের ভিত্তিতে ই-কমার্চ সূচক প্রণয়ন করা হয়। যদিও এই সূচক প্রণয়নে একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক বছরের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। লক্ষণীয়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের বি-টু-সি (ক্রেতার কাছে সরাসরি বিক্রয়) ই-কমার্স সূচক ২০২০-এ ১২ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে যেখানে বাংলাদেশেরর্ যাংকিং ছিল ১০৩, সেখানে ২০২০-এর সূচকে অবস্থান ১১৫। এ সময়ে (২০১৯ সালের তুলনায়) সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৮ পয়েন্ট।

এ ছাড়া উলেস্নখ্য, মোট চারটি উপ-সূচকের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করেছে আঙ্কটাড। সেগুলো হলো- জনসংখ্যার কত অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ই-কমার্স সাইটে অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা, ইন্টারনেট সার্ভারের নির্ভরযোগ্যতা ও পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা। সব উপ-সূচক মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ৩৩ দশমিক ৩। এই সূচকের শীর্ষ দেশ সুইজারল্যান্ডের অর্জিত পয়েন্ট ৯৫ দশমিক ৯। আমলে নেওয়া দরকার, প্রতিবেদনে এটাও উঠে এসেছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের ১৫০ কোটি মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করত। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে অনলাইনে কেনাকাটা করা ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে ৭ শতাংশ। তবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতা কম। ২০১৯ সালে বিশ্বের ২৩ শতাংশ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন বলে ই-কমার্স সূচকে বলা হয়েছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে যেখানে অর্ধেক মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেন, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সেই সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে এই হার ৫ শতাংশ এবং উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে সেটা ১৬ শতাংশ। তবে প্রতি বছর অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কত শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করেন সেই তথ্যের ভিত্তি ২০১৭ সাল। দেখা যায়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করেন। এ সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র এক দশমিক ৩ শতাংশ।

আমরা বলতে চাই, ই-কমার্সে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে এটা নানা সময় আলোচনায় এসেছে, আর এখন যখন সূচকে পেছানোর বিষয়টি জানা গেল তখন তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া ই-কমার্সের নামে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে, যার মধ্য প্রতারণার বিষয়টি অন্যতম এটিও আমলে নেওয়া দরকার। জনসংখ্যার কত অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ই-কমার্স সাইটে অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা, ইন্টারনেট সার্ভারের নির্ভরযোগ্যতা ও পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা- এই দিকগুলোকে সামনে রেখে গ্রহণযোগ্য উদ্যোগও নিশ্চিত করা জরুরি।

আমরা বলতে চাই, যখন সারা পৃথিবী ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছে এবং বাংলাদেশেও ই-কমার্সের সম্ভাবনা প্রবল, তখন সূচকে পেছানোর বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া ই-কমার্সের নামে প্রতারণার ঘটনা ঘটলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা এই খাতের উন্নয়নের প্রশ্নে প্রতিবন্ধক। মানুষকে ঠকিয়ে যারা প্রতারণা করে তাদের ক্ষেত্রে অনুকম্পা প্রদর্শন নয় বরং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশে ই-কমার্স বিস্তৃত হচ্ছে এবং এর সম্ভাবনাও আছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই খাতকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে নেওয়া। প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ই-কমার্সের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে